ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ৫ ফেব্রুয়ারি ছিল এই গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাসপূর্তির দিন। এদিন রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করা হবে, এমন ঘোষণার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর ফ্যাসিবাদ নির্মূলের ডাক দেন। এরপর ফেসবুকে শিক্ষার্থী ও দেশের জনগণ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ এবং ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক আওয়ামী লীগের অফিস ও নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জানুয়ারি গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালানোর সময় স্থানীয়দের মারধরে অন্তত ১৫ জন আহত হন। এসব ঘটনায় দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গাজীপুরসহ সারা দেশে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এরই মধ্যে পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে সম্প্রতি আগুন দিচ্ছে, এই দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ ও পেজ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওতে একদল পুলিশকে একটি গ্রামীণ রাস্তার পাশে একটি কুঁড়েঘরে আগুন লাগাতে দেখা যাচ্ছে।
রাজু আহমেদ (Raju Ahmed) নামের ফেসবুক পেজ থেকে আজ রোববার বেলা পৌনে ১টার দিকে প্রকাশিত পোস্টটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘ইউনুস সরকারের পুলিশ কীভাবে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে আগুন দিচ্ছে দেখুন।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজকে রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত ওই ভিডিও ১ লাখ ৩০ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে সাড়ে ৩ হাজার রিঅ্যাকশন পড়েছে। পোস্টটিতে ১৭১টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১ হাজার ৭০০।
‘গাজীপুর জেলা যুবলীগ শাখা’, ‘দিন মোহাম্মদ’ (Din Mohammad) ও ‘জয় বাংলা’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং ‘হুসাইন’ (Hossain) নামক পেজ থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
এসব পোস্টে অনেকে এই ভিডিও পুরোনো বলে কমেন্টে উল্লেখ করেছেন। আবার সাম্প্রতিক মনে করেও অনেকে কমেন্ট করেছে। ‘মোহাম্মদ রুহুল আমিন’ (Muhammad Ruhul Amin) নামে অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘সহযোগিতায় এবং প্রত্যক্ষ আগুন লাগানোর কাজে নিয়োজিত আমাদের টেক্সের টাকায় বেতন পাওয়া জাতীয় পুলিশ।’ ‘শফিকুল ইসলাম অভি’ (Shofiqul Islam Ovi) লিখেছে, ‘ধিক্কার জানাই।’
ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি ২০১৭ সালের ১১ আগস্টে প্রচার করা হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রংপুরের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে বসতি গড়ে তোলা সাঁওতালদের সঙ্গে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে উচ্ছেদের নামে সাঁওতাল এবং ভূমিহীন বাঙালিদের অস্থায়ী বসতিতে আগুন দিয়ে ঝুপড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে তিনজন সাঁওতাল নিহত হয়।
আল জাজিরার ইউটিউব চ্যানেলেও ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একই তথ্যে ভিডিওটি পাওয়া যায়।
এ ছাড়া ঢাকা ট্রিবিউন, ডেইলি স্টার, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে একই তথ্যে দৃশ্যটি পাওয়া যায়।
সুতরাং, পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে সম্প্রতি আগুন দেওয়ার দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের। প্রকৃতপক্ষে সে সময় রংপুরের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতাল এবং ভূমিহীন বাঙালিদের অস্থায়ী বসতিতে পুলিশের আগুন দেওয়ার দৃশ্য সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে।