যুবলীগ নেতাকে গুলি চালানোর সময় এক নারী এসে সন্ত্রাসীদের তাড়া করেছেন—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে আলাদা ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।
ভিডিওতে রাস্তার পাশে একটি পাকা বাড়ির মূল ফটকের সামনের ইট বিছানো রাস্তায় একজন যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রাস্তার ওপর পাশে দাঁড়ানো দুটি মোটরসাইকেলে চারজন আরোহী। হঠাৎ মোটরসাইকেল থেকে দুজন নেমে দাঁড়িয়ে থাকা যুবককে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। যুবকটি দ্রুত ফটক দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলে হামলাকারীরা গুলি করতে করতে ফটক পর্যন্ত এগিয়ে যায়। এমন সময় এক নারীকে লাঠি হাতে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। তিনি হামলাকরীদের উদ্দেশে লাঠি উঁচিয়ে এগিয়ে যান। হামলাকারীদের একজন তাঁর দিকেও পিস্তল তাক করে। কিছুক্ষণ পরই তারা মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এসব পোস্টের একটির ক্যাপশনে লেখা, ‘যুবলীগের এক কর্মীকে সমন্বয়ক নামের সন্ত্রা*সীরা পি*স্তল দিয়ে গু*লি চালালে এক সাহসী নারী তাদের লাঠি দিয়ে ধাওয়া করে। স্যালুট সময়ের সাহসী বোন আমার গোপালগঞ্জের রক্ত বলে কথা গোপালগঞ্জ জেলার একজন নারী ১০ জন পুরুষদের সমান শক্তি। ২৪ সালের বন্য রাজাকারের বিরুদ্ধে হউক প্রতিবাদ নারী পুরুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে ইনশাআল্লাহ।’ (বানান অপরিবর্তিত)
‘বাংলা দেশ’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাত ১০টা ৩৩ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘স্যালুট বোন সময়ের সাহসী নারী।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টা পর্যন্ত ভিডিওটি ৩ লাখ ৯৭ হাজার বার দেখা হয়েছে, ৪৭টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১ হাজার ৯০০। তবে পোস্টটির রিঅ্যাকশন হাইড করা। পোস্টে কেউ কেউ এই ভিডিওটি অন্য দেশের উল্লেখ করে কমেন্ট করেছেন। আবার অনেকে বাংলাদেশের ঘটনা মনে করেও মন্তব্য করেছেন।
MD Hasem Ali নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘এই নারীরকে জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া উচিৎ। ধন্যবাদ।’ (বানান অপরিবর্তিত)
Md Faruk লিখেছে, ‘হাইরে দেশ।’ (বানান অপরিবর্তিত)
Md Nirob Howladar, Babu Khan নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ও Md Mahim নামে অ্যাকাউন্ট থেকে Supporters of Bangladesh Awami League গ্রুপে ভিন্ন ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতের বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ইটিভি ভারতের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত। এর সঙ্গে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর রাস্তা, ভবন, মোটরসাইকেলে থাকা ব্যক্তি, লাঠি হাতে নারী, তাঁদের পোশাকের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বরে ভারতের হারিয়ানা রাজ্যের ভিওয়ানি শহরের ডাবুর কলোনির ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ। সেদিন হরিকিষাণ নামে এক ব্যক্তি তাঁর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন লোক আসে। এর মধ্যে দুজন মোটরসাইকেল থেকে নেমে হরিকিষাণের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। এরপর হঠাৎ তারা হরিকিষাণকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। তখন হরিকিষাণ পালাতে চেষ্টা করেন। তবে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তখন হঠাৎ করেই ঝাড়ু (লম্বা লাঠিযুক্ত) হাতে এক নারী এসে সশস্ত্র বন্দুকধারীদের প্রতিহত করে। এই ঘটনায় জড়িত একজনের নাম রবি বক্সার।
ভারতীয় বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম এবিপি লাইভের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভিডিওর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের মিল রয়েছে।
সুতরাং, যুবলীগ নেতাকে গুলি এবং একজন নারীর দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করার দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি বাংলাদেশের ঘটনা নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি ভারতের হারিয়ানা রাজ্যে ২০২৩ সালের নভেম্বরে সংঘটিত একটি ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ। এই ঘটনা নিয়ে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।