আজকে রোববার (২২ ফেব্রুয়ারি) একজন তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে— এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওটিতে জঙ্গলের মধ্যে একটি গাছের সঙ্গে বাঁধা এক তরুণীকে দেখা যাচ্ছে। গাছের সঙ্গে কাপড় দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া বলে মনে হচ্ছে। ভিডিওটিতে রুহুল আমিন নামে একজন ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, তরুণীটি তাঁর মেয়ে। নাম রেখা বেগম।
‘মুক্তির ডাক ৭১’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে আজ রোববার সকাল ১১টা ৪২ মিনিটে প্রকাশিত পোস্টটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘গতকাল ১৮ জন ধর্ষণের শিকার হয়ছে, আজ মাত্র শুরু ধর্ষন আর খুনের মহা উৎসব চলছে বাংলাদেশে। আজহারি সাহেব ওয়াজের ময়দানে বলে দেশে শান্তি আর শান্তি এই হলো শান্তির নমুনা।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ভিডিওটি ১৯ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে ৭৬৩টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। পোস্টটিতে ৬০টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ২৫৬। কমেন্টে একজন এটি পুরোনো ভিডিও বলে উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে এটি সাম্প্রতিক সময়ের উল্লেখ করেও কমেন্ট করেছেন। ‘মুসলিমা নাজনীন’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘এটাই ইউনূস সরকারের আমল। সারা দেশে এইসব চলছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)। ‘Ashik Nur’ লিখেছে, ‘লাল স্বাধিনতার স্বাদ।’ (বানান অপরিবর্তিত)
‘Md Juyel’, ‘Mohammed Sorif Hossain’ এবং ‘SB Sumon ’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওটির একপর্যায়ে ‘The Somoy’ নামে একটি লোগো ও টেক্সট দেখা যায়। ফেসবুকে ‘The Somoy’ লিখে সার্চ করলে একটি পেজ পাওয়া যায়। পেজের ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি ২০২৪ সালের ৩০ মার্চে প্রকাশিত।
‘The Somoy’ পেজে প্রকাশিত ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, ‘প্রথমে নিখোঁজ, দুই দিন পর গভীর জঙ্গলে পাওয়া গেল যুবতীর এমন নিথর দেহ…ঘটনা: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে।’
এসব তথ্যসূত্রে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড সার্চ করলে সমকালের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ সিলেটের মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের নওয়াবাগান এলাকার একটি টিলার জঙ্গল থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় রেখা বেগম নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তরুণীর বাবার নাম রুহুল আমিন।
প্রতিবেদন থেকেও আরও জানা যায়, একই ইউনিয়নের রিয়াজ মিয়ার সঙ্গে রেখা বেগমের বিয়ে হয়েছিল। পরে পারিবারিক কলহের কারণে তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তবে ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ রেহা বেগমের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাকে নিয়ে যায় রিয়াজ মিয়া। এরপর থেকে রেখা নিখোঁজ ছিল। পরে ২৯ মার্চ সেই টিলার জঙ্গলে রেখার লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়।
দৈনিক সিলেটের সময়ে ২০২৪ সালের ২৯ মার্চে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়। এ ছাড়া মানবজমিন, এনটিভি ইউরপসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমেও সে সময় এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে কোথাও রেখা বেগমকে হত্যার আগে ধর্ষণের কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।
একই বিষয়ে পাতাকুঁড়ি দেশ নামে সিলেটের একটি সাপ্তাহিত পত্রিকায় ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রেখা বেগমকে হত্যার অভিযোগে তাঁর সাবেক স্বামী রিয়াজ উদ্দিনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে কুলাউড়া থানা পুলিশ। এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, মনমালিন্যের জের ধরে রিয়াজ তাঁর সাবেক স্ত্রী রেখাকে হত্যা করেছেন। এ বিষয়ে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে তরুণীকে ১৮ জন মিলে ধর্ষণ ও হত্যার কোনো খবর দেশের কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।
সুতরাং, আজকে রোববার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে— দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ সিলেটের মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের নওয়াবাগান এলাকার একটি টিলার জঙ্গল থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় রেখা বেগম নামে এক নারীর লাশ উদ্ধারের ভিডিও সাম্প্রতিক দাবিতে ছড়ানো হয়েছে।