বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের টাঙ্গাইল জেলার সদস্য দুই ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে— এই দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছবিটি ছড়ানো হয়েছে। ছবিতে দুই যুবককে মাটিতে শুয়ে থাকা অবস্থায় দেখা যায়। একজন সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা, আরেকজন সবুজ টি-শার্ট এবং নেভি ব্লু জিন্স প্যান্ট পরা।
‘Dainik HinduBarta ¤ দৈনিক হিন্দুবার্তা’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৪১ মিনিটে প্রকাশিত পোস্টটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, ‘Big_Breaking বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট এর সদস্য টাঙ্গাইল জেলার এই দুই ভাই তাদের মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর করার প্রতিবাদে মানব বন্ধন করায় এই দুই ভাইকে বিএনপি জামাত শিবিরের লোকজনরা রাতে বাসা থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় তাদের পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ বিএনপি জামাত শিবিরের লোকজনদের বিরুদ্ধে মামলা নিবে না বলে ওদেরকে পাঠিয়ে দেয় তার ২ দিন পর জেলা পরিষদের পাশে বিলে এই দুই জনের লাশ পাওয়া যায়।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ওই পোস্টে ৪২৯টি রিঅ্যাকশন পড়েছে এবং ২৮টি কমেন্ট পড়েছে। এটি শেয়ার হয়েছে ১৭১ বার। অনেকেই ক্যাপশনে থাকা তথ্যটি সত্য মনে করে পোস্টে কমেন্ট করেছেন। বিপ্লব বকশী (Biplab Bakshi) নামের অ্যাকাউন্ট লিখেছে, ‘টাংগাইল জেলা খুব দ্রুত সহিঞ্চু হয়ে উঠছে।’ রাজ কুমার (Raj Kumar) লিখেছে, (দেশ রসাতলে গেছে, যেখানে সাধারন মানুষের নিরাপত্তা নাই।)
Abdul Malik, Sojibul Islam Sojib, Nath Sumon এবং মুজিব সেনা নামে অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ছবিটি ছড়িয়েছে।
ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে কুমিল্লার স্থানীয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যম কুমিল্লা নিউজের ফেসবুক পেজে ছবিটি পাওয়া যায়। এই পোস্টটি ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। ছড়িয়ে পড়া ছবির সঙ্গে এই ছবির ব্যক্তিদের পোশাক, খড়ের ওপরে তাঁদের অবস্থানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তবে তাঁদের মুখমণ্ডল ঝাপসা ছিল।
ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, ‘কুমিল্লার দেবিদ্বারের জাফারগঞ্জ এলাকায় একটি বিলের মধ্যে অজ্ঞাত ২টি যুবকের মর’দেহ পড়ে রয়েছে।’
এসব তথ্যসূত্রে গুগলে সার্চ করলে, কুমিল্লার আলো নামের একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে ছবিটি পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ছবির মুখমণ্ডলের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেই সময় কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় বিল থেকে মনিরুল ইসলাম ও মোহন মিয়া মিয়া নামের দুইজন যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
একই সার্চে আজকের পত্রিকায় ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর সকালে দেবীদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকার একটি শুকনো বিল থেকে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁরা দুজন হলেন— একই উপজেলার জাফরগঞ্জ গ্রামের মৃত দুলু মিয়ার ছেলে মনির হোসেন (২৫) ও খাগড়াছড়ির রামঘর উপজেলার সুখাকেন্দ্রায় গ্রামের রুহুল আমিন মিয়ার ছেলে মোহন মিয়া (৩৫)। তাঁরা দুজনই ইন্টারনেটের লাইন সংযোগ, বিল উত্তোলন ও মেরামতের কাজ করতেন। তবে কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে, এটা হত্যাকাণ্ড কি না সে বিষয়গুলো জানতে আরো তদন্ত দরকার বলে পুলিশ জানায়।
একই বিষয়ে প্রথম আলো, ইত্তেফাক ও সমকালেও সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে এসব প্রতিবেদনের কোথাও এই দুইজনের মৃত্যুতে অভিযুক্ত হিসেবে বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর কারও নাম পাওয়া যায়নি।
এসব প্রতিবেদনে মৃত ওই দুই ব্যক্তির যে নাম লেখা হয়েছে, তাতে তাঁরা মুসলিম বলে ধারণা করা যায়।
টাঙ্গাইলে এমন কোনো ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে কিনা তা জানতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে আজকের পত্রিকার টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত ইমরানের সঙ্গে কথা হয়। ছড়িয়ে পড়া দাবিটির বিষয়ে তিনি বলেন, এমন কোনো ঘটনা টাঙ্গাইলে ঘটেনি।
সুতরাং, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের টাঙ্গাইল জেলার সদস্য ও দুই ভাইয়ের লাশ উদ্ধারের তথ্যটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বরে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকার একটি শুকনো বিল থেকে মনির হোসেন ও মোহন মিয়া নামে দুইজন মুসলিম যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনার ছবি টাঙ্গাইলে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের দুই সদস্য ও ভাইয়ের লাশ উদ্ধারের দাবিতে ছড়ানো হয়েছে।