Homeসাহিত্যফ্যাক্টচেক /ঝাল খাবার খেলে পাকস্থলীতে আলসার হয়! চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

ফ্যাক্টচেক /ঝাল খাবার খেলে পাকস্থলীতে আলসার হয়! চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে


ঝাল খাবার খেলে পাকস্থলীতে আলসার হয়— এমন ধারণা বহুদিন ধরে লোকমুখে প্রচার হয়ে আসছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? এই বিষয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে তা জানার চেষ্টা করেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

এ বিষয়ে সার্চ করে ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরির হেলথ কেয়ারের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এতে গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজি বিভাগের চিকিৎসক ম্যাথিউ ব্যাকটোল্ডের একটি মন্তব্য পাওয়া। তিনি বলেন, আলসারের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী হচ্ছে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (এইচ. পাইলোরি) নামে পরিচিত একটি ব্যাকটেরিয়া এবং ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ (এনএসএআইডি)।

হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি বিভিন্ন কারণে ছড়াতে পারে। এগুলোর মধ্যে আছে— দূষিত খাবার ও পানি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এটি পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আস্তরণে বৃদ্ধি পেয়ে আলসার বা ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধের মধ্যে অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন এবং ন্যাপ্রোক্সেন জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ পাকস্থলীর আস্তরণে জ্বালা বা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ঝাল খাবার মানুষের পাকস্থলীতে আলসারের সৃষ্টি করে— এর কোনো প্রমাণ নেই। যদি ঝাল খাবার কারও জন্য অস্বস্তিকর হয় তাহলে তিনি খাদ্যতালিকা থেকে ঝাল খাবার কমিয়ে দিতে পারেন।

ম্যাথিউ ব্যাকটোল্ড আরও জানান, মরিচে ক্যাপসাইসিন নামে একটি উপাদান থাকার কারণে মানুষের ঝাল অনুভূত হয়। ক্যাপসাইসিন অনেকক্ষত্রে পেটের জন্য ভালো কাজও করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক মেডিকেল সেন্টারের ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঝাল খাবার খাওয়ায় আলসার সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। ঝাল বা মশলাদার খাবার আলসার সৃষ্টি করে না। প্রকৃতপক্ষে ঝাল হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বন্ধ করে আলসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যদি কারও আলসার হয়ে থাকে, তাহলে ঝাল খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ ঝাল আলসারের কারণ না হলেও আগের আলসারের অবনতি ঘটাতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ইউএস লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে একটি গবেষণা নিবন্ধ পাওয়া যায়। সেটি থেকে জানা যায়, পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক আলসারের প্রধান কারণ হচ্ছে— হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (এইচ. পাইলোরি) জীবাণুর সংক্রমণ। তাছাড়া, পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণ, গ্যাস্ট্রিক মিউকোসাল রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া, নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ (এনএসএআইডি) সেবন, ইথানল, ধূমপান, মানসিক চাপসহ নানান বিষয়কে আলসারের জন্য দায়ী করা হয়। আবার অনেক সাধারণ মানুষ মনে করেন যে ঝাল তথা মরিচ খাওয়ার কারণে আলসার হয়।

তবে, সাম্প্রতিক সময়ের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মরিচে থাকা ‘ক্যাপসাইসিন’ নামের উপাদান পাকস্থলীতে আলসার সৃষ্টি করে না বরং একটি পাকস্থলীর জন্য উপকারী। ক্যাপসাইসিন অ্যাসিড নিঃসরণকে না বাড়িয়ে উলটো বাধা দেয়। এটি ক্ষার, শ্লেষ্মা নিঃসরণ এবং বিশেষ করে গ্যাস্ট্রিক মিউকোসাল রক্তপ্রবাহকে বাড়িয়ে দিয়ে আলসার প্রতিরোধ এবং নিরাময়ে সহায়তা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওগডেন ক্লিনিক নামক স্বাস্থ্যসেবার ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ঝাল কিংবা চর্বিযুক্ত কোনো খাবারই পেটের আলসারের কারণ হতে পারে এমন কোনও প্রমাণ নেই।

সুতরাং, ঝাল খাবার খেলে পাকস্থলীতে আলসার হয়— এ দাবির পক্ষে চিকিৎসাবিজ্ঞানে কোনো প্রমাণ নেই। আলসারের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী হচ্ছে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া এবং ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ। তাই ঝাল খাবার খেলে পাকস্থলীতে আলসার হওয়ার ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত