সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে নেতা-কর্মীরা পুলিশকে ধাওয়া দেন—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছড়ানো হয়েছে।
ভিডিওতে একটি খালের পাশে খোলা মাঠে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বিপুলসংখ্যক মানুষের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় লোকজন পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দেয়। ভয়েস ওভারে একজনকে বলতে শোনা যায়, পুলিশের অভিযান… পুলিশের ওপর আক্রমণ চলছে।
‘মুক্তির ডাক ৭১’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে প্রকাশিত পোস্টটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। অন্যায় ভাবে কোন আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে এভাবেই রুখে দাঁড়াতে হবে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ভিডিওটি ২৮ হাজারবার দেখা হয়েছে এবং রিঅ্যাকশন পড়েছে ১ হাজার ২০০। পোস্টে ১২১টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ২৯৯। এসব কমেন্টে ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার বলে কেউ কেউ কমেন্ট করেছেন। আবার অনেকে সত্য লিখেও কমেন্ট করেছেন। Billal Ahmed লিখেছে, ‘এভাবেই সবাই প্রতিবাদ গড়ে তুলুন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’ (বানান অপরিবর্তিত) MAMUNUR RASHID লিখেছে, ‘সব জায়গায় এভাবেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’ (বানান অপরিবর্তিত)
‘Tanvir Ahamed’, ‘বঙ্গবন্ধুর সৈনিক’ ও ‘Arif Hossain’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে Md. Atikur Rahman নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি গতকাল শুক্রবার পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘দিরাই–শাল্লার সত্তুয়া জলমহালে। দ্বিতীয় দফায় চলছে মাছ লু’ট উৎসব। বাধা দিতে গিয়ে আহত পুলিশ, অসহায় প্রশাসন!’ (বানান অপরিবর্তিত)
এসব তথ্যসূত্র গুগলে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে দৈনিক ইত্তেফাকে গতকাল শুক্রবার (৭ মার্চ) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের ছবির সঙ্গে সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশকে পাল্টা ধাওয়া দেওয়া হয়েছে দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শুক্রবার সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার সতোয়া জলমহালে আশপাশের কয়েক গ্রামের হাজারো জনতা মাছ শিকার করতে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের বাধা দিতে গেলে জনতা তাদের ধাওয়া দেয়।
যমুনা টিভি, ঢাকা ট্রিবিউন ও রাইজিং বিডিতে শুক্রবার (৭ মার্চ) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে একই তথ্য পাওয়া যায়।
বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় কোনো আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মী ছিলেন না। এগুলো অপপ্রচার।
সুতরাং, সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে নেতা–কর্মীদের ধাওয়া খেয়েছেন পুলিশ সদস্যরা—এই দাবি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার সতোয়া জলমহালে স্থানীয়রা মানুষ মাছ ধরতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় লোকজন পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি সেই ঘটনার।