Homeসাহিত্যচর্বি মানেই অস্বাস্থ্যকর? চিকিৎসা বিজ্ঞান কী বলে

চর্বি মানেই অস্বাস্থ্যকর? চিকিৎসা বিজ্ঞান কী বলে


ফ্যাট বা চর্বি মানেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এমন কথা অনেকেই বিশ্বাস করেন। কিন্তু বিষয়টি সত্যিই কি তাই? সব ধরনের ফ্যাট বা চর্বি খাওয়াই খারাপ—এই দাবির সত্যতা কতটুকু? চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

এই বিষয়ে সার্চ করলে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ফ্যাট বা চর্বি যুক্ত খাদ্যতালিকা স্বাস্থ্যকর নয়, দীর্ঘদিন যাবত এমনটাই বলা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একাধিক গবেষণায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট (সম্পৃক্ত চর্বি) ও হৃদ্‌রোগের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা শুধু হৃদ্‌রোগের কারণ নয়, বরং প্রতি গ্রাম চর্বিতে আমিষ ও শর্করা জাতীয় খাবারের তুলনায় বেশি ক্যালরি থাকে এবং এটি মানুষের ওজন বৃদ্ধিতে বেশি ভূমিকা রাখে—এমনটা ধারণা করেছিলেন।

সে সময়ে অনেকেই এমনটা মনে করে চর্বি খাওয়া বাদ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ শুরু করেন। যার ফলস্বরূপ ওজন কমার পরিবর্তে আরও বেড়ে যায়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ আরও জানায়, সব চর্বি খারাপ এই তথ্যটি ভুল। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সব চর্বি একরকম না। মাংস ও দুগ্ধজাত খাবার থেকে পাওয়া সম্পৃক্ত চর্বির কারণে ধমনী বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু উদ্ভিদ এবং স্বাস্থ্যকর তেল থেকে পাওয়া মনো–আনস্যাচুরেটেড এবং পলি–আনস্যাচুরেটেড চর্বি শরীরের কোলোস্টেরল ব্যবস্থা আরও ভালো করে এবং স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। রক্তে শর্করার মাত্রা কেমন হবে সে বিষয়ে চর্বির সরাসরি প্রভাব খুব কম। চর্বি মানুষের শরীরে শক্তির জোগানের অন্যতম বড় উৎস। পাশাপাশি চর্বি কিছু ভিটামিন এবং পুষ্টি শোষণ করতে সাহায্য করে।

তবে ট্রান্স ফ্যাট মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে খারাপ চর্বি। অসম্পৃক্ত চর্বির সঙ্গে হাইড্রোজেন যুক্ত করে বাণিজ্যিকভাবে এই চর্বি তৈরি করা হয়। মূলত চর্বি জমাট বাঁধাতে এবং বেশিদিন সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এটি করা হয়। ট্রান্স ফ্যাট ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। এটি প্রদাহ বাড়ায় এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়বসাইট হেলথলাইনের তথ্যমতে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এসব চর্বি মাখন, মার্জারিন (ডালডা জাতীয়), শর্টেনিং (জমানো চর্বি) এবং গরু বা শূকরের মাংসে পাওয়া যায়। ট্রান্স ফ্যাট পরিহার করা উচিত এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট খুব কম খাওয়া উচিত।

ভালো চর্বিযুক্ত খাবারের বিষয়ে প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হচ্ছে মানবদেহের জন্য ভালো চর্বি। এই ধরনের চর্বি বিভিন্ন খাবার ও তেলে থাকে। মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও উদ্ভিজ্জ তেল যেমন: অলিভ অয়েল ও চিনাবাদামের তেল, বাদামের মাখন (পিনাট বাটার) এবং অ্যাভোকাডো।

অপরদিকে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের প্রাথমিক উৎস হচ্ছে বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ খাবার। এটিতে ওমেগা–৩ নামক ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

ওমেগা–৩ যে শুধু করোনারি ধমনী রোগের ঝুঁকি কমায় তা নয়, এটি রক্তচাপের মাত্রা ও হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। স্যামন, হেরিং, সার্ডিন, ট্রাউট, আখরোট, ফ্লাক্সসিড (তিসি বীজ), চিয়া সিড এবং ক্যানোলা তেলে ওমেগা–৩ পাওয়া যায়।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিসেবার ওয়েবসাইটে চর্বির বিষয়ে বলা হয়েছে, খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত চর্বি থাকলে বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, শরীরের কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে পারে, যা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিবর্তে আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করা ভালো। বেশিরভাগ আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা অসম্পৃক্ত চর্বি উদ্ভিদ এবং মাছের তেলে পাওয়া যায়। অসম্পৃক্ত চর্বি মনো আনস্যাচুরেটেড বা পলি আনস্যাচুরেটেড হতে পারে।

মনো আনস্যাচুরেটেড ও পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের বিষয়ে ওয়েবসাইটটিতে নানা তথ্য পাওয়া যায়। মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট মানুষের রক্তে খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রার সামঞ্জস্য রেখে হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে। অলিভ ওয়েল, রেপসিড ওয়েল (রাই সরিষার তেল), অ্যাভোকাডো, চিনাবাদামে মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়। অপরদিকে, কিপার, হেরিং, ট্রাউট, সারডিন, স্যামন ও ম্যাকেরেল মাছে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়।

সুতরাং, ফ্যাট বা চর্বি খাওয়া খারাপ, এমন ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। চর্বি মানুষের শরীরে শক্তি জোগায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্যমতে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে মনো আনস্যাচুরেটেড বা পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট খুব উপকারী এবং এগুলো মানুষের রক্তে খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রেখে হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত