Homeসাহিত্যকবিতা কখনো বিস্ফোরণ, কখনো নির্মাণ : মিন্টু হক

কবিতা কখনো বিস্ফোরণ, কখনো নির্মাণ : মিন্টু হক


সাহিত্য বিভাগের নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি ও সম্পাদক মিন্টু হক। তার কবিতার বই ‘কবি হতে আসিনি’। সম্পাদনা করেন ‘কাশবন’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা।

বাংলা ট্রিবিউন: ‘কবি হতে আসিনি’ প্রকাশের পর দীর্ঘ বিরতি কেন? লেখা থেকে কি বিচ্যুতি ঘটেছে?

মিন্টু হক: কবিতা আমার কাছে অধ্যবসায়ের এক নীরব প্রক্রিয়া, যেখানে সময় নিজেই তার ফসল তুলে আনে। শব্দেরও শ্বাস-প্রশ্বাস আছে, তাদের বেড়ে ওঠার জায়গা দিতে হয়। তাড়াহুড়ো করে বই প্রকাশ করলে হয়ত সংখ্যা বাড়ে, কিন্তু কবিতার গভীরতা কি সব ক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়? এর পেছনে যে চিন্তা ও উপলব্ধি থাকে, তা কি পাঠকের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়? বইয়ের সংখ্যা আমার কাছে মুখ্য নয়, শব্দের স্থায়িত্বই আসল। আমি লিখি নিজেকে বা সমাজের ভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশের জন্য, যা সময়ের সাথে সাথে মানুষের মনে স্থান পাবে। তাই এই দীর্ঘ সময়ের বিরতি কোনো বিচ্ছেদ নয়, বরং অপেক্ষা—একটি পূর্ণতার জন্য। আর পত্রপত্রিকায় তো নিয়মিত লিখছি, শব্দের প্রবাহ কখনো থেমে থাকেনি।

বাংলা ট্রিবিউন: ‘কাশবন’ পত্রিকা রফিক আজাদ ও নির্মলেন্দু গুণ সংখ্যার পর আর কিছু কি প্রকাশ করেছে?

মিন্টু হক: নির্মলেন্দু গুণ ও রফিক আজাদ সংখ্যার পর ‘কাশবন’ পূর্ণাঙ্গ কোনো সংখ্যা প্রকাশ না করলেও স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকদের লেখা নিয়ে কিছু ভাঁজপত্র প্রকাশ করেছে। তবে কাশবনের নিয়মিত সংখ্যা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: ‘কাশবন’ কী কী কাজ করছে বিস্তারিত জানতে চাই।

মিন্টু হক: ‘কাশবন’ শুধু একটি সাহিত্য পত্রিকাই নয়, এটি এখন শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার বিস্তৃত প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। আমরা কেবল প্রকাশনাতেই সীমাবদ্ধ নই, বরং সাহিত্য-সংস্কৃতির বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ‘কাশবন’ প্রকাশের পাশাপাশি ‘কাশবন সাহিত্য আড্ডা’, ‘কাশবন পুরস্কার ও সম্মাননা’ প্রদান এবং বই প্রকাশ ও মোড়ক উন্মোচনের মতো কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে, মফস্বলের উদীয়মান লেখকদের জন্য ‘কাশবন’ একটি সহায়ক ভূমিকা রাখছে—তাদের বই ৫০% খরচে প্রকাশ করা, প্রচারণা চালানো, এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা আমাদের কার্যক্রমের অংশ। আমরা বিভিন্ন উপজেলায় ‘কাশবন সাহিত্য আড্ডা’ পরিচালনা করছি, যেখানে সাহিত্য ও শিল্প-সংস্কৃতির বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিশেষভাবে, কাশিয়ানী উপজেলায় ‘কাশবন’ সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে। প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার, কবি ও সাংবাদিক শহীদুল আলম মুন্না ও কবি সুলতানুল আলম খানের তত্ত্বাবধানে এখানে ‘কাশবন সাহিত্য আড্ডা’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ‘কাশবন সাহিত্য পুরস্কার’ সংস্কৃতি জগতে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষত, ২০২৩ সালের পুরস্কার [যা ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে] একটি স্মরণীয় আয়োজন ছিল। এতে দেশবিদেশের ২১ জন গুণী ব্যক্তিকে ৭টি ক্যাটাগরিতে সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি আসাদ মান্নান। আমাদের আড্ডায় কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের পাশাপাশি একশ থেকে পাঁচশো দর্শকের সমাগম হয়। আমরা সরাসরি শ্রোতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করি।

আমরা শিশুদের জন্য একটি নতুন উদ্যোগ নিয়ে এসেছি, ‘শিশু বিকাশ ও ক্ষণিকের আড্ডা’ নামে, যা কোমলমতি শিশুদের সৃজনশীল দক্ষতা বিকাশের সুযোগ প্রদান করে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি ঢাকা ছেড়ে গোপালগঞ্জে বসবাস করছেন, সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে প্রান্ত ও কেন্দ্রের সংকট কী চোখে পড়ছে?

মিন্টু হক: গোপালগঞ্জ আসার পর প্রান্ত ও কেন্দ্রের মধ্যে বৈষম্য লক্ষ্য করেছি, যা আমার কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য এই ব্যবধান যত সম্ভব কমানো। ‘কাশবন সাহিত্য আড্ডা’য় দেশের খ্যাতিসম্পন্ন কবি ও সাহিত্যিকদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংযোগ স্থাপন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তারা নিয়মিত এসে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন, যা নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?

মিন্টু হক: আমাকে অনুপ্রাণিত করে সময়—যা এক মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকে না, তবু প্রতিটি ক্ষণে অমরত্বের আকাঙ্ক্ষায় জড়িয়ে থাকে। প্রবাহিত নদীর মতো সময় বয়ে যায়, তার প্রতিটি ঢেউয়ে আমি কবিতার ইঙ্গিত খুঁজি। আমাকে অনুপ্রাণিত করে প্রকৃতি—বাতাসের শিস, নদীর কলতান, বৃষ্টির একটানা ঝরঝর শব্দ, যা শব্দের আগুন জ্বেলে দেয় আমার মনের গহীনে। ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, প্রতীক্ষা, বিদ্রোহ—মানুষের এসব অনুভূতির প্রতিটি রঙই কবিতায় ধরা পড়ে।

আমার কবিতা কখনো ইতিহাসের ছায়ায় দাঁড়িয়ে বর্তমানকে দেখে, কখনো ভবিষ্যতের দরজায় কড়া নাড়ে। কখনো তা ঝড়ের মতো তীব্র, কখনো নিঃশ্বাসের মতো নরম। সময়, প্রকৃতি, অনুভূতি আর শূন্যতার এই চক্রেই কবিতার জন্ম—যেখানে শব্দেরা আসে একেবারে নিজের মতো করে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

মিন্টু হক: আমি সাধারণত সমাজ, সময়, মানবিক অনুভূতি, প্রকৃতি, প্রেম-বিরহ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্বের প্রশ্ন নিয়ে লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। বিশেষভাবে, আত্মজিজ্ঞাসা, সম্পর্কের জটিলতা, আর সময়ের অবিচল প্রবাহ আমার লেখার মূল কেন্দ্র। আমি চেষ্টা করি, যেখানে মানুষের ভাবনা, অনুভূতি আর পৃথিবী এক হয়ে গড়ে ওঠে—সেই জায়গাটিতে আমার কবিতা পৌঁছাক।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?

মিন্টু হক: যখন কোনো কিছু গভীরভাবে আঘাত করে, তখন কবিতা নিজে থেকেই বেরিয়ে আসে—যেন তাৎক্ষণিক একটি স্রোত। আবার কখনো চিন্তা ও শব্দগুলোকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হয়, যেন তারা এক নতুন রূপ নেয়। কবিতা আমার কাছে প্রকাশের চেয়ে কিছুটা বেশি—এটা কখনো বিস্ফোরণ, কখনো নির্মাণ।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?

মিন্টু হক: আমার কবিতার ভাষা ও শৈলী গভীর অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল। লিখতে বসলে আমি খুব বেশি পরিকল্পনা করি না, ভাষা ও ভাবনা নিজের মতো গড়ে ওঠে। কবিতা আমার কাছে এক ধরনের সংলাপ, এক চুপিচুপি কথোপকথন, যেখানে অনুভূতি, প্রকৃতি, আর অন্তরের গভীরতা ধরা পড়ে।

শব্দ বাছাই করি এমনভাবে, যেন সেগুলো পাঠককে তার নিজস্ব পৃথিবীতে টেনে নেয়, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। কখনো সরল, কখনো একটু জটিল, কিন্তু কখনোই দুর্বোধ্য নয়। যেমন, “চাঁদের আলাপন” কবিতায় চাঁদ, বাতাস, আর প্রেমের অনুভূতিকে একসঙ্গে মিলিয়ে এমন এক আবহ গড়েছি, যেখানে পাঠক শুধু পড়ে না, বরং সেটার ভেতর পরিভ্রমণ করে।

আমি চাই আমার কবিতা নিঃশব্দ কথায়, বা একটুখানি অপ্রকাশিত ভাবনায়, পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নিক।

বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?

মিন্টু হক: ছোটবেলায় আমার কবিতায় কাজী নজরুল ইসলামের প্রভাব ছিল অত্যন্ত দৃঢ়—তার ছন্দ, শক্তি এবং বিদ্রোহী সুর আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। পরে জীবনানন্দ দাশের নিসর্গ, নিঃসঙ্গতা ও বিমূর্ততার গভীরতা আমাকে আকৃষ্ট করেছে। বিনয় মজুমদারের কবিতায় গাণিতিক শৃঙ্খলা ও অন্তর্গত আবেগের সংমিশ্রণ, সেটিও আমার ভাবনাকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে এসব প্রভাব বোঝার পর থেকে আমি সবসময় নিজের স্বকীয়তার জন্য লড়াই করেছি, এবং নিজের ভাষা, প্রকাশভঙ্গি ও ভাবনার গভীরতা খুঁজে পাওয়ার এই প্রচেষ্টা আজও অব্যাহত।

বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?

মিন্টু হক: আমি কথাসাহিত্যের চর্চা সেভাবে করি না, তবে কথাসাহিত্যের প্রতি আমার দৃষ্টি আছে। গল্পের বুনন, চরিত্রায়ণ ও আখ্যানের গতি-প্রকৃতি আমাকে আকর্ষণ করে। কথাসাহিত্যের কাঠামো, সংলাপ, বর্ণনার সূক্ষ্মতা—এসব আমার কবিতার ভাষা ও ভাবনায় ছায়া ফেলে। আমার কবিতায় কখনো কখনো আখ্যানধর্মী প্রবাহ আসে, কখনো আবার চরিত্রের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়, যা কথাসাহিত্যের প্রতি আমার সচেতন দৃষ্টিরই প্রতিফলন।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?

মিন্টু হক: প্রথম কবিতার বই প্রকাশের অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম ছিল। মনে হয়েছিল, যেন নিজের ভেতরের এক নিঃশব্দ বিস্ফোরণ ঘটেছে—গভীরে কোথাও ঢেউ তুলেছে এক অদ্ভুত আলোড়ন। যখন বইটা হাতে পেলাম, মনে হলো, আমি নিজেকেই ধরে রেখেছি শব্দের বাঁধনে, মলাটের ভেতর। কৈশোরের সেই মুহূর্ত মনে পড়ে গেল, যখন প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল পত্রিকার পাতায়। তখনকার উচ্ছ্বাস ছিল নবজন্মের মতো! কিন্তু বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা আরও গভীর, আরও ব্যক্তিগত—সময়ের বুকের ওপর নিজের অস্তিত্বের একটা চিহ্ন এঁকে দেওয়ার মতো।

বাংলা ট্রিবিউন: সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা কি আপনার কবিতায় প্রভাব ফেলে? যদি ফেলে, তবে কীভাবে তা প্রকাশিত হয়?

মিন্টু হক: সমকালীনতা আমার কবিতায় একপ্রকার ছায়ার মতো কাজ করে—সরাসরি নয়, বরং রূপকের ভেতর, অনুভূতির স্তরে, নৈঃশব্দ্যের গভীরে। সময়ের প্রবাহ, সমাজের টানাপড়েন—এসব আমি লেন্সের মতো ধারণ করি, কিন্তু তা প্রকাশিত হয় বিমূর্ত চিত্রকল্পে, প্রতীকের ভাষায়, শব্দের সংগঠনে। আমার কবিতায় প্রতিবাদ নয়, প্রতিধ্বনি; স্লোগান নয়, সংকেত—এভাবেই বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়। এটি কখনো এক অভিমানী নীরবতা, কখনো সময়ের ক্লান্ত স্রোত, যা সরাসরি উচ্চারণে নয়, বরং পাঠকের চিন্তায় নতুন প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে।

বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?

মিন্টু হক: পাঠকের প্রতিক্রিয়া আমি মনোযোগ দিয়ে শুনি, তবে আমার লেখার নিজস্ব প্রবাহ আছে। মন্তব্য কখনও কখনও ভাবনার নতুন জানালা খুলে দেয়, কিন্তু তা লেখার মূল সুর বদলে দেয় না। কবিতা আমার কাছে একান্ত অভ্যন্তরীণ অভিব্যক্তি, যেখানে পরিবর্তন আসে সময়ের সঙ্গে, অভিজ্ঞতার গভীরতা থেকে—মন্তব্যের প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়ায় নয়।

বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যতে কী ধরনের কবিতা লিখতে চান? নতুন কোনো ধারা বা শৈলীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?

মিন্টু হক: ভবিষ্যতে আমি আরও গভীরতা ও বিশ্লেষণের দিকে এগিয়ে যেতে চাই, যেখানে কবিতা মানবের মনস্তত্ত্ব, সমাজের অন্দর ও তার রহস্যময় দিকগুলোকে আরও স্পষ্টভাবে আলোকিত করবে। নতুন শৈলী নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে—যে শৈলী একদিকে হবে শুদ্ধতা আর অন্যদিকে আধুনিকতার সংমিশ্রণ, যেখানে ভাবনার সূক্ষ্মতা এবং ভাষার তীক্ষ্ণতা মিলেমিশে এক নতুন অভ্যর্থনা সৃষ্টি করবে। হয়ত ভবিষ্যতের কবিতায় আমি আরও বিমূর্ত চিত্রকল্প, অন্ধকার পরিবেশ এবং সমকালীন সংকটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি নতুন ধারা প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে বাস্তবতা ও কল্পনা এক হয়ে যাবে, যেন পাঠক এক সীমানাহীন অভিজ্ঞতায় ডুব দিতে পারে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত