Homeসাহিত্যআমার লেখার ভাষা স্বতঃস্ফূর্ত : এমরান হাসান

আমার লেখার ভাষা স্বতঃস্ফূর্ত : এমরান হাসান


সাহিত্য বিভাগের আয়োজনে নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি এমরান হাসান। জন্ম ১৩ নভেম্বর, যশোর। বেড়ে ওঠা টাঙ্গাইলে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত গ্রন্থ: হাওয়াঘরের মৃত্যুমুদ্রা (২০২১), মোহনীয় মৃত্তিকাগণ (২০২৪), লালনপর্ব (২০২৫)।

বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?

এমরান হাসান: ব্যক্তিজীবনের অন্তর্নিহিত বোধ, নিঃসঙ্গ পরিস্থিতির অনুধ্যান আমাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে। আমার চারপাশের সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে কবিতা লেখা শুরু করতে চাইলেও, বাস্তবিক অর্থে, ব্যক্তি মনস্তাত্ত্বিকতার গভীরে লুকায়িত যে শূন্যতা, সেটি আমাকে কবিতা লিখতে গভীরভাবে তাড়িত করে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

এমরান হাসান: সুনির্দিষ্ট থিম নিয়েই আজ-অব্দি কবিতা লিখতে বসেছি কিনা, সেটি ভেবে দেখার নিখুঁত চেষ্টা কখনো করেছি বলে পড়ছে না। তবে আমার চারপাশের মানুষ, তাদের যাপিত জীবনের নানামুখী মনস্তাত্ত্বিক নিপীড়ন, ব্যক্তিক ও সামষ্টিক শূন্যতা আমাকে তীব্রভাবে ভাবিত করে, তার সাথে যুক্ত হয়—বাঙালি মরমিবাদের বিমূর্ত ঘরানা। বোধকরি এইসব ভাবনার গভীর উপস্থাপনই আমার কবিতা।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?

এমরান হাসান: আমি বিশ্বাস করি কবিতা কখনোই ধীরে ধীরে সাজানো অর্থাৎ বানিয়ে তোলার বা নির্মাণ করার বিষয় নয়। বরং সর্বপ্রথমেই, কবিতা হঠাৎ করেই ভেসে ওঠে কবির বোধ এবং মগজে যেনো অকস্মাৎ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, এবং এই স্ফুলিঙ্গের  খুব অল্পই কবি কাগজ-কলমে তুলে আনতে সক্ষম হন। এই বিষয়টি আমার মধ্যেও ঘটে, যেকারণে আমি কখনোই ধীরে ধীরে কবিতা নির্মাণ করি না, এবং এভাবে কবিতা হয়ে ওঠে—এরকম চিন্তায় বিশ্বাস করি না।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?

এমরান হাসান: এই বিষয়টি বেশ মজার। কেননা, আমি কখনোই পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে লিখতে শুরু করি না, হয়তো কোনো কবিই করেন না। অন্তত কবিতা যে এভাবে লেখা শুরু করা যায়, তা আমার জানা নেই। আমার লেখার ভাষা স্বতঃস্ফূর্ত। আমি কখনোই ভাষাকে ব্যাকরণিক ফ্রেমে আবদ্ধ রাখিনি। কবিতার ভাষা তো মগজে নির্মাণ হয় সর্বপ্রথম, এখন সেই নির্মিত ভাষায় আমি কখনোই হস্তক্ষেপ করি না।

বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?

এমরান হাসান: বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতের আদিমাতা চর্যাগীতি বা চর্যাপদ এর কবিগণ যারা রয়েছেন, তাদের চিন্তার গভীরতা আমাকে প্রভাবিত করে সাংঘাতিকভাবে। এর বাইরে বাউল সাধকদের গীতভাবনার প্রভাব তো রয়েছেই এবং তারও সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিমূর্তবাদী চিন্তার।

বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?

এমরান হাসান: না। সিরিয়াসলি কথাসাহিত্যের চর্চা একেবারেই করি না, যেকারণে কোনো কথাসাহিত্যের প্রভাব আমার কবিতায় নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?

এমরান হাসান: আমার প্রথম কবিতার বই ‘হাওয়াঘরের মৃত্যুমুদ্রা’ প্রকাশ হয়েছিল ২০২১ সালে, জলধি থেকে, জলধির অর্থায়নে। যদিও সে সময় আমার লেখালেখির জার্নি ২০ বছর অতিক্রম করেছে। এই বইটির পাণ্ডুলিপি তৈরির সময় এতটাই বেশি পরিমাণে ঘোরের ভেতর ছিলাম, যে মনস্তাত্ত্বিক এবং ব্যক্তিগত বিষণ্নতা থেকে একেবারেই বের হতে পারিনি, তার স্পষ্ট ছাপ রয়েছে এই বইয়ে। আসলে আমি আমার যাপিত জীবনের বেশ কিছু অনুভূতি, আত্মগ্লানির বোধগুলোই চিন্তার ফ্রেম হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে এই বইতে। অস্বীকার করতে দ্বিধা নেই লেখালেখি শুরুর ২০ বছর পরে প্রথম বই অবশ্যই একটি ইতিবাচক অনুভূতির জন্ম দিয়েছিল এবং এক ধরনের স্বপ্নময়তাও কাজ করেছে সে সময়। মনে হয়েছিল কিছু কথা লিখবার আছে আরো, কিছু না বলা বিষয় বলে যাওয়া প্রয়োজন মানুষের জন্য।

বাংলা ট্রিবিউন: সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা কি আপনার কবিতায় প্রভাব ফেলে? যদি ফেলে, তবে কীভাবে তা প্রকাশিত হয়?

এমরান হাসান: সমকালীন সামাজিক সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ধরনের ঘটনা কবিতাকে প্রভাবিত করে। ইদানীং একটু বেশিই করছে। এই ভাবনার প্রকাশ একটু সাবলীলভাবে করতে চেষ্টা করছি, অর্থাৎ সাবলীলভাবে মগজে নিতে চেষ্টা করছি। কেননা, লেখক হিসেবে এই ধরনের লেখাগুলো লিখে রাখার একটা দায়িত্ব নিজের মধ্যে কাজ করেই সবসময়। সত্যিকার অর্থে ইদানীং সামাজিক রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনা প্রভাবিত করছে আমাকে এবং সেই সাথে আমার লেখাকে তো বটেই। আর, তার প্রকাশ যথারীতি আমার কবিতার ভাষার মতোই। এসব নিয়েই লিখে যাচ্ছি চুপচাপ ইদানীং। হয়তো আগামীর কোনো বইয়ে এই লেখাগুলো পেয়ে যাবেন।

বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?

এমরান হাসান: একজন কবি আসলে নিজের জন্যই প্রথমে লিখেন, আমিও এই পরিকাঠামোর বাইরে নই। ঐ লেখা প্রকাশ হলে পাঠকের মন্তব্য খুব বেশিই প্রভাবিত করে আমাকে। এজন্যই  নিজের কবিতা-চিন্তাকে আরো বেশি সময়, সমাজ এবং মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি, যেন কবিতায় উল্লিখিত বোধের সাথে পাঠকের এক ধরনের দৃঢ় যোগাযোগ তৈরি হয়ে ওঠে।

বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যতে কী ধরনের কবিতা লিখতে চান? নতুন কোনো ধারা বা শৈলীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?

এমরান হাসান: ভবিষ্যতের ভাবনা বাঙালি মরমিবাদ নিয়ে কিছু কাজ করার। আমাদের শেকড় খুঁজলে যে-সব লুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যের বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে সেগুলো নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে বিশেষ কিছু বলার নেই।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত