একটি মাফলারের দাম দেড় লাখ টাকার ওপর! চোখ কপালে তোলার কোনো কারণ নেই। ঘটনা সত্য।পোশাক নিয়ে আলোচনার কমতি নেই যুগে যুগে। সেই কতকাল আগে শেখ সাদি তাঁর পোশাক নিয়ে বিড়ম্বনা ও সমাদর—দুই অভিজ্ঞতারই মুখোমুখি হয়েছিলেন। এখনো যে সে রকম ঘটনা ঘটে না, তা কিন্তু বলা যাবে না। তবে এখন ব্র্যান্ডের পোশাকের যুগ। আলোচনাটা তাই সেভাবেই হয়। ব্র্যান্ডের নাম যদি হয় বারবেরি, তাহলে একখানা মাফলার তথা স্কার্ফের দাম দেড় লাখ হলেও আপত্তি করার কারণ দেখবে না অনেকে।
১৯২০ সালের দিকে বারবেরি একটি চেক উদ্ভাবন করেছিল। এর গড়ন ছিল আজকের গ্রামীণ চেকের মতো। কিন্তু সেই চেক জনপ্রিয় হতে সময় নেয় ৪০ বছরের বেশি সময়। ১৯৬৭ সালের দিকে খাকি রঙের পটভূমিতে কালো, সাদা আর লাল রঙের সেই চেক, চেক নকশার দুনিয়াকে পাগল করে দেয়। পরে তাদের সেই চেক নকশা এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে ব্র্যান্ডটি তাদের বিভিন্ন লাইফস্টাইল পণ্য তৈরি করেছিল সেই নকশায়। সেই পণ্যগুলোও হয়ে উঠেছে বিলাসী পণ্যের প্রতীক। তবে সেই ডিজাইনে প্রথম তৈরি হয়েছিল কোট।
ডিজাইনটি দ্রুত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করে। ফলে সেই চেক প্যাটার্নযুক্ত পোশাকগুলোর চাহিদা হয়ে ওঠে আকাশচুম্বী। এই সাফল্য দেখে বারবেরি পোশাকের সঙ্গে একই নকশায় বানিয়ে ফেলে শত শত ছাতা। সেগুলো একসঙ্গে বিক্রিও হয়ে যায়। পরে বিভিন্ন রঙে এই নকশার অনেক সংস্করণ তৈরি করা হয়। এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ফ্যাশন হাউসটি তাদের বিখ্যাত কাশ্মীরি স্কার্ফ তথা কাশ্মীরি মাফলারের সূচনা করেছিল। সেটিও প্রায় ছয় দশক ধরে ধ্রুপদি বিলাসী আইটেম হিসেবে রয়ে গেছে। এই কাশ্মীরি স্কার্ফগুলো স্কটল্যান্ডের একটি মিল থেকে ঐতিহ্যবাহী তাঁতযন্ত্রে বোনা হয়। সেই মিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৭৯৭ সালে।
প্রায় ১৭০ বছর ধরে বারবেরি সফলভাবে নিজেদের প্রভাব ধরে রেখেছে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন দুনিয়ায়। এর প্রতিষ্ঠাতা থমাস বারবেরি। তিনি স্থানীয় কারিগরদের সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়তে আগ্রহী ছিলেন। ১৯০০ সালে তিনি জনস্টোনস অব এলগিনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। এই মিলই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৭৯৭ সালে স্কটল্যান্ডের এলগিনে। এর পর থেকে ব্র্যান্ডটি জনস্টোনসের সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে উৎপাদন করছে আইকনিক মাফলার। জনস্টোনস অব এলগিন স্কটল্যান্ডের একমাত্র মিল, যেখানে কাঁচামাল থেকে শুরু করে পণ্য তৈরি হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হয়।
মোট ৩০ ধাপের সূক্ষ্ম প্রক্রিয়া পার হয়ে তৈরি হওয়া এই স্কার্ফ বা মাফলারগুলোর দাম যে আকাশছোঁয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বারবেরির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে দেখা যায়, সেই চেক নকশার মাফলারগুলোর দাম ৬৬ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা! আগেই বলেছি, এই মাফলার তৈরি হয় ৩০টি ধাপে। তৈরির পর সেগুলোকে এলগিনের স্থানীয় ঝরনার পানিতে ধোয়া হয়। তারপর নরম ফিনিশিংয়ের জন্য টিজেল নামক একধরনের শুকনো ফুল দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে ব্রাশ করা হয়। বারবেরি কাশ্মীরের পরিচিত টেক্সচার এবং প্রাকৃতিক আভা পেতে মাফলারগুলো ব্রাশ ও স্টিম করা হয়।
বারবেরি তার আইকনিক স্কার্ফ বা মাফলারকে এই সময়ের মানুষের কাছে পৌঁছাতে ‘র্যাপড ইন বারবেরি’ নামের একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তাদের পণ্যগুলোকে বিভিন্নভাবে গ্রাহকদের সামনে তুলে ধরে। ঐতিহ্য ও প্রযুক্তিকে একত্র করে বারবেরি প্রমাণ করেছে, ঐতিহ্য শুধু অতীতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য তা সমান্তরালভাবে বহমান।
সূত্র: বারবেরি, ভি ম্যাগাজিন