ঘড়ি কেবল সময় দেখার যন্ত্র নয়, বহু আগেই ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ঘড়ির ভিন্ন রূপে ফিরে আসা নিয়ে ‘ওয়াচেস অ্যান্ড ওয়ান্ডার্স’ নামের বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে জেনেভায়। যেখানে নামীদামি সব ব্র্যান্ড নিজেদের ঘড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছে।
ঘড়ি এখন শুধু হাতের কবজিতে পরার জন্য নয়, নেকলেস, ব্রুচ এমনকি কোমরের বিছা হিসেবেও পরা হচ্ছে ঘড়ি!

ওয়াচেস অ্যান্ড ওয়ান্ডার্সে দেখা মিলবে তেমনই সব অলংকার। বিশেষ এই আয়োজনে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে ফরাসি লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ড শ্যানেলের ‘মি’ সিরিজ। এই সিরিজে কিস মি, প্রটেক্ট মি ও গিভ মি লাক নামের তিনটি ভিন্ন ডিজাইনের ঘড়ি উন্মোচন করেছে তারা। যেগুলো প্রথমে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে এগুলো ঘড়ি। কিস মি নামের ঘড়িটি প্রথম দেখায় মনে হবে—এটি নেকলেস, লকেটে লিপস্টিক। কিন্তু লিপস্টিকের মতো দেখতে অংশে চাপ দিলেই বেরিয়ে আসে ঘড়ির ডায়াল। একইভাবে প্রটেক্ট মি ডিজাইনের ঘড়িগুলো প্রথম দেখায় মনে হতে পারে সুরক্ষা তাবিজ। আর গিভ মি লাক ঘড়িটি বাইজান্টাইন মোটিফে তৈরি।

শ্যানেলের পাশাপাশি ভ্যান ক্লিফ অ্যান্ড আরপেলস, ক্যাখতি (Cartier), পিয়াজেই, ডিওরের মতো ব্র্যান্ডগুলোও এনেছে ব্রুচ, পেন্ডেন্ট ও চোকার। ভ্যান ক্লিফ অ্যান্ড আরপেলস তাদের ৯০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিজেদের আইকনিক কাডেনাস ঘড়ির হীরাখচিত একটি সংস্করণ এনেছে। ঘড়িটি তালা–চাবির আদলে তৈরি। প্রথম দেখায় ব্রেসলেট মনে হলেও একটু ভালো করে তাকালে নজরে পড়বে ঘড়ির ডায়াল।

ক্যাখতি প্রদর্শন করেছে ‘পানতেয়াখ’ ঘড়ি। যেখানে ব্র্যান্ডটির প্রতীকে লাফিয়ে ওঠা প্যানথারের আদল ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ঘড়ির ডায়ালের ওপর লাফিয়ে পড়ছে প্যানথারটি। এটি মূলত একটি কাফ–অলংকার, যা হালকা বাঁকালে বেরিয়ে আসে একটি ঘড়ির ডায়াল। পুরুষদের জন্য এনেছে কাঁটা বা সাধারণ ডায়াল ছাড়া ব্যতিক্রমী একটি ঘড়ি। যার নাম রাখা হয়েছে তঙ্ক আ গুশে (Tank à Guichets)। ঘড়িটিতে রয়েছে ছোট দুটি জানালার মতো অংশ। জানালায় ডিজিটাল ঘড়ির মতো সময় প্রদর্শন করা হয়।
ফ্যাশন সচেতনদের মধ্যে ব্যতিক্রমীধর্মী এসব ঘড়ির চাহিদা এখন তুঙ্গে। টেলর সুইফট, রিয়ান্নার মতো জনপ্রিয় সব তারকাও মঞ্চ কিংবা লাল গালিচার সাজে ভিন্নতা আনতে বেছে নিচ্ছেন ব্যতিক্রম এসব ঘড়ি। সম্প্রতি ব্রিটিশ মালিকানাধীন অন্যতম বড় নিলামঘর সোথবি আয়োজিত ‘এরিয়া ৫১’ নিলামে ব্যতিক্রমী ডিজাইনের এই জোয়ারেরই প্রমাণ মেলে। ওই নিলামে ঘড়ি বিক্রি হয়েছে কমপক্ষে ৫১টি, দাম উঠেছিল ১৬ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত।
সোথবির ঘড়ি বিভাগের সেলস ডিরেক্টর বলেন, ঘড়ির বাজারে এখন নতুন হাওয়া বইছে। এখন ঘড়ির মূল ক্রেতা আসলে নারী ও জেন–জি। তাঁরা সাধারণ ঘড়ি চান না। তাঁরা চান স্বকীয়তা ও বহুমাত্রিকতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন ধারার ঘড়ি পরার ধারণাকেই নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। ঘড়ি এখন কেবল সময় দেখার যন্ত্র নয়, বরং পরিধানযোগ্য শিল্পকর্ম—যা একই সঙ্গে অলংকার ও স্বাতন্ত্র্যের প্রতীক।