Homeরাজনীতিশিবিরকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ছাত্রদলের

শিবিরকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ছাত্রদলের


সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছাত্রশিবিরের মাসিক ম্যাগাজিন ছাত্র সংবাদে প্রকাশিত প্রবন্ধের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনটি এ ঘটনার জন্য শিবিরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়।

ছাত্রদলের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামী ছাত্রশিবিরের দলীয় প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’ নামক মাসিক পত্রিকার মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত আহমেদ আফঘানি রচিত ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ নামক প্রবন্ধে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করুন।’

ছাত্রদল মনে করে, স্বাধীনতার দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পরে এসেও নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করা এবং ‘পাপকাজ মনে করে’ ক্ষমা প্রার্থনা করা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
 
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনও ধর্মযুদ্ধ ছিল না উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটি ছিল অত্যাচারী, জালিম, দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যার বিরুদ্ধে মজলুম বাংলাদেশিদের প্রতিরোধ যুদ্ধ। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণের কারণে মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সত্যিকারের জনযুদ্ধ। দীর্ঘ চব্বিশ বছরের সীমাহীন অত্যাচার, অবিচার আর অপশাসনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পাকিস্তানি প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী অত্যন্ত নির্মমভাবে রাতের আঁধারে এদেশের ঘুমন্ত নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নিরস্ত্র জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এভাবেই শুরু হয়েছে আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রাম, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ।

‌‌‘কেউ ভুল করে কিংবা না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে— এই বক্তব্য একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের ধৃষ্টতা ও নিজেদের পরাজয়ের গ্লানি চাপা দেওয়ার অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।’
 
ছাত্রদল মনে করে, ছাত্রশিবিরের কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রচারণার কারণে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক পুনর্বাসনের প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। 

উল্লেখ্য, ছাত্র সংবাদ পত্রিকাটি ছাত্রশিবির প্রকাশিত ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সম্পাদিত একটি প্রকাশনা।
 
বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের এমন কাজকে দ্বিচারিতা বলেও উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ছাত্রশিবির একদিকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ‘স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো’ স্লোগান দিয়ে র‍্যালি করে, আবার অন্যদিকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়াকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করবে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, এটি সুস্পষ্ট দ্বিচারিতা। এই দ্বিচারিতার ফলে প্রমাণিত হয় প্রকাশ্যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার কৌশল নিলেও ভেতরে ভেতরে ছাত্রশিবিরের আগের ছাত্রসংঘের মতো মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের মনোভাবই ধারণ করে।
 
‘লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত বলে ছাত্রশিবির তাদের দলীয় প্রকাশনার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী ন্যারেটিভ প্রচারের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনার এডিটরিয়াল পলিসি স্বাধীনতাবিরোধী ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে। আমরা ছাত্রশিবিরকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে। একইসঙ্গে ছাত্রশিবিরকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বয়ান প্রচার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার দায়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
 
বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আপত্তিকর বক্তব্য প্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নেতারা অবিলম্বে ছাত্রশিবিরকে এই ঘটনায় নিজেদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন।
 
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা আরও বলেন, ছাত্রশিবির যদি এই ন্যক্কারজনক মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বয়ানকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনা থেকে প্রত্যাহারপূর্বক জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে— তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি ছাত্রশিবিরের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত