মা নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির গানে মডেল হলেন মেয়ে মার্জিয়া বুশরা রোদেলা। রোদেলা নিজেও গানের চর্চা করেন; পাশাপাশি নাচে তালিম নিয়েছেন। আগ্রহ আছে অভিনয় এবং মডেলিংয়েও। সেই আগ্রহ থেকে প্রথমবারের মতো মডেল হলেন রোদেলা, আর সেটা মা ন্যান্সির গানে। ইব্রাহিম মাহাদির পরিচালনায় ন্যান্সির গাওয়া ‘তোমারই আছি’ গানের ভিডিওতে দেখা যাবে রোদেলাকে।
ন্যান্সি জানান, মিউজিক ভিডিওর পরিকল্পনা এসেছে রোদেলা ও ইব্রাহিম মাহাদির কাছ থেকে। তাঁদের উদ্যোগেই ভিডিওটি তৈরি হয়েছে।
ন্যান্সি বলেন, ‘গানটি তৈরি করার পর সবার মনে হচ্ছিল, একটি ভিডিও হলে ভালো লাগবে। যদিও ভিডিও দিয়ে গান হিট করানোয় বিশ্বাসী নই আমি। তারকা শিল্পীদের নিয়ে ভালো মানের একটি ভিডিও তৈরি করাও বেশ ব্যয়বহুল। এমন পরিস্থিতিতে আমার আম্মাজান (রোদেলা) ও মাহাদি গানটির ভিডিও করার উদ্যোগ নিল। তারা আমাকে পরিকল্পনা জানাল। আমার পছন্দও হলো। তৈরি হলো ভিডিওটি। ঝকঝকে একটি ভিডিও আসছে। নতুন হিসেবে দুজন মানুষ নিজেদের জায়গা থেকে চেষ্টা করেছে একটি ভালো ভিডিও বানানোর। আমি মাঝে মাঝে ভিডিওটা একা একাই দেখছি। আমার কণ্ঠের গান আর স্ক্রিনে আমার মেয়ে। সে এক দারুণ অনুভূতি। বলে বোঝানো যাবে না।’
গুঞ্জন রহমানের লেখা তোমারই আছি গানের কম্পোজিশন, মিক্স ও মাস্টারিং করেছেন হৃদয় খান। চলতি মাসে ন্যান্সির ইউটিউব চ্যানেল থেকে গানটি প্রকাশ পাবে। দীর্ঘদিন পর আবার নিজের ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে সরব হওয়া প্রসঙ্গে ন্যান্সি বলেন, ‘একটা গান তৈরি করতে যে অর্থ ব্যয় হয়, সেই অর্থ ব্যয় করার মতো ধনী আমি নই। আমরা যারা শুধুই সংগীতশিল্পী, তাদের একটা মাইনাস পয়েন্ট আছে। গানের কথা, সুর, সংগীতায়োজন, মাস্টারিং—সব অ্যারেঞ্জমেন্ট এখন নিজেদের করতে হয়। দিনশেষে খরচের অঙ্কটা বিশাল হয়ে যায়। এ ছাড়া আগে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে আমাকে। ফরমায়েশি কাজে যতটুকু গাইতে পেরেছি, ততটুকু করেই নিশ্বাস নিয়েছি। এখন আবার কাজে নিয়মিত হয়েছি। তাই মনে হলো, এখন নিজের জন্য বিনিয়োগ করে কিছু গান করা যায়।’
গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল রোদেলার কণ্ঠে ‘রাজকুমার’ শিরোনামের গান। প্রকাশের পর প্রশংসিত হয়েছে তাঁর গায়কি। ফেসবুক লাইভে রোদেলার গাওয়া রাজকুমার গানটি গেয়ে শুনিয়েছেন ন্যান্সি। সম্প্রতি একটি শোতে রাজকুমার গাওয়ার অনুরোধ পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন গায়িকা। ন্যান্সি বলেন, ‘১ ফেব্রুয়ারি একটা স্কুলের বার্ষিক বনভোজন ছিল। সেখানে আমি গাইছিলাম। মাঝে মাঝে বিভিন্ন গানের অনুরোধ জানিয়ে চিরকুট আসছিল। একটা চিরকুটে লেখা ছিল, রাজকুমার শুনতে চাই। চিরকুটটা পড়ে চোখে জল এসে গেল। এরপর চার লাইন গেয়ে শোনালাম। এসব অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে সাধারণত কেউ থাকে না। ভবিষ্যতে রাখার চেষ্টা করব, অন্তত এই বিশেষ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করার জন্য।’
অনেকে বলেন, রোদেলার গায়কি অনেকটাই তার মায়ের মতো। বিষয়টি নজর এড়ায়নি ন্যান্সির। তবে মা হিসেবে ন্যান্সির চাওয়া, কারও মতো নয়, রোদেলা হয়ে উঠুক নিজের মতো। তিনি বলেন, ‘রোদেলা আমার সন্তান, তাই জেনেটিক্যালি কিছু তো চলেই আসে। তবে আমি চাই, সে তার নিজস্বতা নিয়ে বেড়ে উঠুক। আমরা দুই প্রজন্মের মানুষ। ওর গানের টেস্ট ও আমার গানের টেস্ট আলাদা। দুজনের গানের ধরনও আলাদা। ছোটবেলায় মা-বাবারা না বুঝেই অনেক চাপ দেন। যেমন আমার আম্মা চাইত, তাদের সন্তান বড় হয়ে সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা হবে। কেউ কারও মতো হয় না। যেটা হয় সেটা হলো কপি। কপি কোনো দিন টেকে না। রোদেলা ওর মায়ের জন্য সহজে পরিচিতি পেয়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি আর দশটা বাচ্চার চেয়ে ওর প্রেশারটাও কিন্তু বেশি। ন্যান্সি-কন্যা হওয়ার কারণে ওর চাপটা আরও বেশি। ও যা-ই করে, সেটা নিয়েই আলোচনা হয়, সমালোচনাও হয়। এসব নিয়ে অনেক সময় আমার মন খারাপ হয়, ওকেও সমস্যায় পড়তে হয়। তাই আমি চাই, রোদেলা নিজের পরিচয়ে বেড়ে উঠুক।’