Homeদেশের গণমাধ্যমে‘শীতে শরীরটা কাঁপছে, তবু পেটের দায়ে ঘর থেকে বাইর হইছি’

‘শীতে শরীরটা কাঁপছে, তবু পেটের দায়ে ঘর থেকে বাইর হইছি’


বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) দুপুর ১টা। আকাশে মেঘ আর ঘন কুয়াশা। দেখা নেই সূর্যের। উত্তরের হিমেল বাতাসে অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। ঠিক সেই সময় ভ্যান চালাচ্ছিলেন হিলির মধ্য বাসুদেবপুর এলাকার খালেদ হোসেন (৫৫)। গায়ে শীতের পোশাক ও মাথায় মাফলার পেঁচানো থাকলেও কুয়াশামাখা দুপুরে জবুথবু অবস্থা তার। 

শীতে কষ্টের কথা জানিয়ে খালেদ বলেন, ‘এত শীতে ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়। তবু পেটের দায়ে ঘর থেকে বাইর হইছি। দিনে-রাতে সমানতালে শীত পড়ছে। রাতে ঘুমাতেও কষ্ট হয়। আমরার কষ্ট বেশি। ভ্যান চালাইলে গায়ে বাতাস লাগে। গত চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীত পড়ছে। কোনও উপায় নেই।’

হিলিতে টানা চার দিন ধরে দেখা নেই সূর্যের। উত্তরের হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী। তবে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষরা। রিকশা-ভ্যানের চালকদের আয় কমে গেছে। শীতের মধ্যে কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে দিনমজুরদের। কুয়াশার কারণে দূরপাল্লার বাস চালাতে চালকদের বেগ পেতে হচ্ছে। পথেঘাটে যাত্রীও কমে গেছে।

দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর ও হিলিতে গত ১০-১২ দিন ধরে তীব্র শীত পড়ছে। দিনের কিছু সময়ে কুয়াশার মাত্রা কিছুটা কম থাকলেও রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকে চারদিক। এর মধ্যে গত চার দিন ধরে দিনের বেলাতেও কুয়াশা থাকছে। তবে দিনে কিছুটা কম থাকলেও রাত থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ঝরছে। সেইসঙ্গে হিমেল বাতাস শীতের মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে। খেটে-খাওয়া মানুষজন পেটের তাগিদে ঘরের বাইরে গেলেও কাজ না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন। আবার আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত নানা রোগে। সড়কে মানুষের চলাচল কমায় আয় কমে বিপাকে পড়েছেন ভ্যান ও রিকশাচালকরা। কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। দূরপাল্লার বাস যাতায়াতে সমস্যা বেশি হচ্ছে। লোকজন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

তীব্র শীত পড়ছে, গত কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না জানিয়ে হিলির নৈশপ্রহরী ইয়াসির আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কষ্টের শেষ নেই। অনেক শীত। গত চার দিন সূর্য না উঠায় এর মাত্রাটা বেড়ে গেছে। রাতে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। সেইসঙ্গে বাতাস বইছে। এজন্য ডিউটি করতে খুব সমস্যা হচ্ছে আমাদের। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশি লেগেই আছে আমার।’

শীতে আমাদের কষ্ট বেশি জানিয়ে হিলি শহরের ইজিবাইকচালক মোক্তার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত চার দিন ধরে যেমন কুয়াশা পড়ছে, তেমনি শীতের তীব্রতা বেড়েছে। হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি চালানোর সময়ে বাতাসে শরীরটা কাঁপছে। কুয়াশার কারণে পথ দেখা যাচ্ছে না। গরম কাপড়েও শীত মানছে না। পেটের তাগিদে গাড়ি চালাচ্ছি। কিন্তু সড়কে মানুষজন নেই। আয়-রোজগার কমে গেছে।’

হিলি স্থলবন্দর

হিলির শ্রমজীবী নারী নাজমা বেগম বলেন, ‘গত চার দিন ধরে বেশি শীত পড়ছে। সূর্যের দেখা মিলছে না। সারাদিন কুয়াশা ঝরছে। চলাফেরা করতে সমস্যা হচ্ছে। গা-হাত বরফ হয়ে আসছে। আমরা গরিব মানুষ। অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাই। যত কষ্টই হোক বাড়ি থেকে বের হতে হয়। এ ছাড়া কোনও উপায় নেই।’

দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে তাপমাত্রা কমেছে। সূর্যের দেখা মিলছে না। এজন্য শীতের মাত্রা বেড়ে গেছে। দিনে-রাতে সমান তালে অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। আবার হিমেল বাতাসেও শীত বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দিনাজপুর জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ, বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার। আগামী কয়েকদিন এ অবস্থা বিরাজ করবে। এরপর শীত কমতে পারে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত