Homeদেশের গণমাধ্যমেযশোরে ১৪ বাড়িতে হামলা-লুটপাট, জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে ১৪ বাড়িতে হামলা-লুটপাট, জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা


যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া মধ্যপাড়ায় দরিদ্র ১৪টি পরিবারের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গত রবিবার সকালে দেশি অস্ত্রশস্ত্রসহ দুই ঘণ্টা ধরে এ হামলা চালানো হয়।

এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী। ওই এলাকার খবির খাঁ, জাহিদ আলী, রমজান আলী, সাদ্দাম হোসেন, জুবায়ের হোসেন ও আসলামের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে মামলার আসামি করা হয়। মামলার আসামিরা জামায়াতের নেতাকর্মী বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

হামলার খবর পেয়ে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চালছে বলে জানায় পুলিশ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ৬০-৭০ জন নেতাকর্মী একযোগে হামলা চালিয়ে তাদের বাস্তুচ্যুত করেছেন। এমনকি ফের হামলার হুমকি দিচ্ছেন তারা। তবে জামায়াত নেতারা, এ ঘটনায় তাদের নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানান তারা।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদরের রূপদিয়া মধ্যপাড়ার ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করেছেন বাস্তুহীন ১৪টি পরিবার। জমির মূল মালিক সাঈদ বক্স তাদের আশ্রয় দেন। তার মৃত্যুর পর জামায়াত কর্মী খবির খাঁ ও তার অনুসারীরা জমিটি নিজেদের দাবি করে দখল নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। মামলা করেও তারা ব্যর্থ হয়। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে জমি দখল নিতে হুমকি দিতে শুরু করেন তারা। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল সকালে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ৬০-৭০ জনের একটি সশস্ত্র দল হামলা চালিয়ে ১৪টি বাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় বাড়িতে থাকা নারী-পুরুষকে মারধর করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, তাদের বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি সব লুট করে নিয়ে গেছেন হামলাকারীরা। খবর পেয়ে পুলিশ এলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যে কারণে ফের হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাদের।

ঘটনার রাতেই ভুক্তভোগী ইজিবাইকচালক মিলন হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। হামলাকারীরা বেশিরভাগই স্থানীয় জামায়াতের নেতাকর্মী ও সমর্থক বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। 

ক্ষতিগ্রস্ত সুফিয়া বেগম জানান, রূপদিয়া মধ্যপাড়ায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা ১৪টি পরিবার বসবাস করে আসছেন। জমিটি দখলে নিতে জামায়াতের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। তাদের বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছেন তারা। খবর পেয়ে পুলিশ এলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। 

ক্ষতিগ্রস্ত মিলন হোসেন জানান, রূপদিয়ার জামায়াত নেতা খবির খাঁ, কর্মী জাহিদ আলী, রমজান আলী, সাদ্দাম হোসেন, জুবায়ের হোসেন, আসলামসহ অজ্ঞাত ৪০-৫০ জন এ হামলায় জড়িত। হামলাকারীরা বেশিরভাগ স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও সমর্থক।

মিলন হোসেন বলেন, ‘হামলা ও ভাঙচুরে এক লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার স্ত্রী সালমা খাতুনের ঘর থেকে ৭০ হাজার টাকার স্বর্ণের দুল নিয়ে যায় হামলাকারীরা। রাজিয়ার ঘর থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের গয়না, ইসমাইলের ঘর থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা, প্রিয়ার ঘর থেকে স্বর্ণের এক জোড়া কানের দুল, আনসারের ঘর থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা, মিলনের ঘর থেকে ৪০ হাজার টাকা লুট করা হয়েছে। এ ছাড়া সিদ্দিকের বাড়ির আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ ভাঙচুর করে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি এবং নগদ ৩৫ হাজার টাকা লুট করে হামলাকারীরা। হামলাকারীদের মারধরে আনসার, সুফিয়া, রাজিয়া, জানু, পারভীন ও সালমা বেগম আহত হন।’ 

ভুক্তভোগী সালমা খাতুন বলেন, হামলাকারীদের লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন নারী আহত হন। ঘরে থাকা ফ্রিজ, টিভি ভাঙচুর করা হয়। কয়েক লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায় তারা।

শরিফুল ইসলাম নামের অপর ভুক্তভোগী বলেন, ‘হামলাকারীদের এলোপাতাড়ি মারপিটে আমরা অনেকে আহত হয়েছি।’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচিত স্থানীয় খবির খাঁ ও তার লোকজন এখনও তাদেরকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলছেন। না হলে বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন। যেকোনো সময় হামলার শিকার হতে পারেন বলে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

তবে ঘটনার পর থেকে প্রধান অভিযুক্ত খবির খাঁ, জাহিদ আলী, রমজান আলী, সাদ্দাম হোসেনসহ অন্যরা পলাতক থাকায় এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হামলার খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিএনপির খুলনা‌ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘এখানে নারকীয় তাণ্ডব চালানো হয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, জামাতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা এই কাজ করেছেন। আমরা মনে করি, কোনও রাজনৈতিক দল এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। জামায়াতে ইসলামী দুর্বৃত্তদের কোনও প্রকার আশ্রয় দেবে না বলে বিশ্বাস করি।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছি। আগামীতে আইনি সহায়তাসহ বাড়িঘর পুনরায় নির্মাণেও সহযোগিতা করা হবে ‘

ঘটনাস্থল‌ পরিদর্শন‌ করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল। তবে হামলায় নিজ দলের নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা বরাবরই ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকেছি। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, হামলাকারীরা জামায়াতের কর্মী-সমর্থক। আমরা বিশ্বাস করি, জামায়াতের কোনও নেতাকর্মী এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে না। ফলে যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি আমরা। পাশাপাশি আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের আজ আর্থিকভাবে সহায়তা করেছি। আগামীতে তাদের পাশে থাকবো।’

এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘হামলার পরে আমরাও কয়েকবার ঘটনাস্থলে গিয়েছি। মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তবে আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত