Homeদেশের গণমাধ্যমেমানসিক নির্যাতনে ‘অবসর’, ফের ক্লাসে ফেরার আকুতি ঢাবি শিক্ষকের

মানসিক নির্যাতনে ‘অবসর’, ফের ক্লাসে ফেরার আকুতি ঢাবি শিক্ষকের


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একের পর এক মানসিক নির্যাতন ও হেনস্তার শিকার হন ড. আবু মূসা আরিফ বিল্লাহ। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর পদোন্নতির ফাইল আটকে রেখে তাকে অ্যাকাডেমিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় বলে অভিযোগ। এছাড়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির প্রতিবাদ করে উল্টো শিকার হতে হয় ষড়যন্ত্রমূলক হয়রানির। পরে স্বাভাবিক জীবনযাপন হুমকির সম্মুখীন হওয়ায় স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

অবিচার, মানসিক নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু মূসা আরিফ বিল্লাহ। সর্বশেষ তিনি জচ্ছু নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়, চীনে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে শিক্ষকতা করেন। তবে স্বৈরাচার সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ায় ফের তিনি আবারও ক্লাস রুমে ফিরতে চান। তিনি পড়াতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এরমধ্যে তিনি চাকরিতে পুনর্বহালের বিষয়ে বিবেচনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নিকট আবেদনও করেছেন।

সম্প্রতি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঢাবিতে শিক্ষক হিসেবে ফেরার ও ন্যায়বিচার চেয়ে আবেগঘন বার্তা দেন এই শিক্ষক।

এতে তিনি লিখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার আদি কর্মস্থল। কিন্তু বর্বর আওয়ামী জাহেলিয়াতের সেবাদাসদের একের পর এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে, বিশেষ করে ২৭ বছরের তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়, কিংস কলেজ, ক্যামব্রিজ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং এফসিও ও সোয়াস এ শিক্ষকতা ও গবেষণা অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও ২৭ বছরে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী দোসর তাঁবেদার ভিসিরা আমাকে প্রফেসর হতে দেয়নি। অথচ আমার বেশ কয়েকজন ছাত্র এই তাঁবেদার ভিসিদের নির্লজ্জ দলীয়করণের কারণে ৮ থেকে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে এবং এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি নিয়ে প্রফেসর হয়েছে!

তিনি আরও লিখেন, বিভাগে বিভিন্ন অনিয়ম বিশেষ করে চৌর্যবৃত্তি বিষয়ে আমার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ একদেশদর্শী ভিসিদের দফতরে গত প্রায় ৭/৮ বছর ধরে পড়ে আছে। এই সব বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ তো করা হয়ইনি বরং উল্টো আমার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে, এমন কি আমার চরিত্র হরণ করে আমাকেই চাকুরিচ্যুত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। তখন অবাক হয়ে ভাবতাম : প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে আজকে দুষ্টের লালন ও শিষ্টের দমন চলছে! এই দুর্বিষহ অবস্থার শিকার হয়ে আমি হাঁপিয়ে উঠি এমন কি আমার জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়ি।‌

নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে ড. আরিফ বিল্লাহ লিখেন, আমার পিএইচডি ডিগ্রি চলাকালীন সময়ে ব্রিটেনের নামকরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এমন কি ‘কিংস কলেজ লন্ডন’ এ আমার পেনশন স্কীম পর্যন্ত চালু হয়েছিল। দেশের প্রতি ভালোবাসা বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর কথা চিন্তা করে আমার ছেলে মেয়েদের আপত্তি সত্ত্বেও ঐ পেনশন স্কীম ভেঙে বাংলাদেশে আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসেছিলাম। যাহোক, শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত আকস্মিকভাবে মাত্র ১০ মিনিটের চিন্তায় এই জঘন্য নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার নিমিত্তে বিশেষ করে মান সম্মান রক্ষার কথা চিন্তা করে ১০ বছর চাকুরির বয়সসীমা থাকা সত্ত্বেও অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য হই।

ন্যায়বিচার চেয়ে তিনি লিখেন, আমি চীন দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কার্যরত ছিলাম এবং গত ডিসেম্বর মাসে জেনেছিলাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন বৈষম্য বিরোধী একটি কমিটি গঠন করেছেন। এবং আমি যথারীতি দেশে ফিরে মাননীয় উপাচার্য বরাবর আবেদন করি। বর্তমানে এসব আবেদন পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জেনেছি। আশা করি আমি ন্যায়বিচার পাবো।

আবেদনের বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক আরিফ বলেন, আমি উপাচার্যকে আবেদন দিয়েছি। আমার ওপর করা নির্যাতনের কথাগুলো বলেছি। তিনি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আশা করি আমি আবারও ক্লাসে ফিরতে পারব। শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য আমি মুখিয়ে আছি।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, আমরা আবেদনটি পেয়েছি। যারা নির্যাতন-অবিচারের শিকার হয়েছে তাদের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এর জন্য আমরা একটা কমিটি করে দিয়েছি। আশা করি দ্রুত একটা সমাধান হবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত