Homeদেশের গণমাধ্যমেমাগুরার শিশুটি নিয়ে সবশেষ যা জানা যাচ্ছে

মাগুরার শিশুটি নিয়ে সবশেষ যা জানা যাচ্ছে


মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে ‘সংকটাপন্ন’ অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়েছে। শনিবার (০৮ মার্চ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে তাকে সেখানে নেওয়া হয়।

বুধবার (০৫) ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর শনিবার চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই ঘটনায় শিশুটির দুলাভাই ও দুলাভাইয়ের বাবাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধর্ষণের শিকার শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

চিকিৎসাধীন শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভালো নয় জানিয়ে শনিবার ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বাচ্চাটার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। গতকাল রাত থেকে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। ধর্ষণের পাশাপাশি তার গলা চেপে ধরা হয়েছিল। আমরা দেখেছি তার গলায় একটা দাগ আছে। গলা চেপে ধরার কারণে তার শ্বাসকষ্ট হয়েছে। এ কারণে তার সমস্যাগুলো আরও বেশি হচ্ছে। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে শিশুটির চিকিৎসায় শনিবারই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।

ঢাকা মেডিকেলের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান এবং শিশুটির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য মো. ছামিদুর রহমান বলেন, স্ট্যাগুলেশন মানে গলা টিপে ধরার কারণে তাকে আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে। গলা টিপে ধরার কারণেই তার সমস্যা বেশি হচ্ছে। সার্জিক্যাল সাইট অতটা খারাপ না। তার পেরিনিয়াম (যৌনাঙ্গের একটা অংশ) অত খারাপ না।

চারজনের বিরুদ্ধে মামলা : শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনার তিন দিন পর চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম বলেন, শনিবার শিশুটির মা বাদী হয়ে সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন। মামলার শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৫০), সজীব শেখের ভাই রাতুল শেখ (২০) এবং তাদের মা জাবেদা বেগমকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে। চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, চার মাস আগে মাগুরা পৌর এলাকার এক ছেলের সঙ্গে শিশুটির বড় বোনের বিয়ে হয়। ওই বাড়িতে বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুর থাকতেন। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তার শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত ১ মার্চ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় আট বছরের শিশুটি।

এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। কিন্তু বড় বোন মনে করে, শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বলছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (বোনের স্বামী) দরজা খুলে দিলে তার বাবা (শ্বশুর) তার মুখ চেপে ধরে তার কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।

এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তার মাকে মোবাইলে বিষয়টি জানাতে গেলে তার স্বামী ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে মারধর করে। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেয় এবং তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখে। সকালে এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাশুর দরজা খুলে দেন। তখন শিশুটির মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে, চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। পরে বাদী হাসপাতালে যান।

মেয়েটির বড় বোন সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার ২০ দিন আগে সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। তিনি ঘরে আলো জ্বালিয়ে টয়লেটে যান। সেখান থেকে ফিরে দেখেন ঘরে আলো বন্ধ। এ সময় হঠাৎ একজন পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। উচ্চতা ও অন্য বিষয় দেখে তিনি ধারণা করেন, জড়িয়ে ধরা ব্যক্তিটি তার শ্বশুর হিটু শেখ। বিষয়টি স্বামী সজিবকে জানালেও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি। পরে তিনি বাবার বাড়ি চলে যান। আর স্বামীর বাড়ি ফিরতে চাচ্ছিলেন না। বাবা-মা বুঝিয়ে ছোট বোনকে সঙ্গে করে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

জেলা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, এরই মধ্যে মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার সকালে ঢাকায় পাঠানো হয়।

চার নারী উপদেষ্টাকে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান : নারী নিপীড়ন বন্ধে ‘কিছু’ করার না থাকলে চার নারী উপদেষ্টাকে ক্ষমতা ছেড়ে সড়কে নামার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক নারী সমাবেশে সংগঠনটির সভাপতি সীমা দত্ত চার নারী উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে নারীদের জন্য কাজ করতে চান, আর আপনারা যদি ক্ষমতায় বসে কিছু করতে না পারেন, তাহলে রাস্তায় নেমে আসুন। আপনারা ক্ষমতা ছাড়ুন, আপনারা বলুন যে, আপনারা ব্যর্থ। তাহলে আমরা অন্তত বলতে পারব, প্রচলিত ব্যবস্থায় আপনারা সফল হতে পারেননি।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সমালোচনা করে সীমা দত্ত বলেন, ‘ক্ষমতায় বসে কী করছেন? আমরা প্রতিদিন তামাশা দেখি। আন্দোলনের সময় বিগত সরকারের মন্ত্রীরা যেমন ৩২টি দাঁত দেখিয়ে মানুষের ওপর সব দায় চাপাত, এ সরকারও তাই করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ দাবি জানাচ্ছি। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারের কাছে বিগত সময়ে চেয়ে আসা খুন-ধর্ষণের বিচার পাওয়া যাবে, সে প্রত্যাশা ছিল আমাদের। কিন্তু সেসব মামলা নিষ্পত্তি করা দূরে থাক, বরং প্রতিদিন নানাভাবে নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগের দোসররা নাকি এসব করছে। যদি তাই হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করছে? আমরা সরকারের কাছে এর জবাব চাই।’

এদিকে, শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মাগুরার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মিছিল করে ধর্ষণকারীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ও জেলা মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাশ্বতী শীল বলেন, শিশুটি যেন সব ধরনের আইনগত সহায়তা পান তার জন্য জেলা প্রশাসন কাজ করছে।

পাশে থাকার আশ্বাস তারেক রহমানের : ধর্ষণের শিকার শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার শিশুটির মায়ের সঙ্গে ফোনালাপে এ কথা জানান তিনি।

ফোনালাপের শুরুতে তারেক রহমান শিশুটির শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়ে বলেন, মাগুরায় বিএনপির যত নেতাকর্মী আছেন, তারা সবাই শিশুটির পাশে থাকবেন।

ন্যায়বিচার পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করব। শিশুটির সঙ্গে যারা অন্যায় করেছে তারা যেন আইন অনুযায়ী শাস্তি পায়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘শিশুটির চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন আমরা চেষ্টা করব, আমাদের দলের অবস্থান থেকে।’ এসময় শিশুটির মা তার মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন তারেক রহমানের কাছে।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দোষীর শাস্তি দাবি উপদেষ্টা ফরিদার : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মাগুরার শিশু ধর্ষণের ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। হিটু আটক হয়েছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যারা নারীর দোষ দেখে এই শিশুর ধর্ষণের ঘটনায় তাদের ব্যাখ্যা কী?’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত