চতুর্থত, স্বৈরাচারী সরকার আমাদের জিজ্ঞাসা না করে আমাদের নামে যেসব বিদেশি চুক্তি করে গেছে, এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্বার্থে নয়। এগুলো অন্য কোনো দেশ আর আওয়ামী লীগের স্বার্থে ছিল। অন্তত আমরা তা–ই ধারণা করে থাকি। না হলে প্রকাশ করা হয়নি কেন আর জনগণের সম্মতি চাওয়া হয়নি? এই চুক্তিগুলো পুরোপুরি প্রকাশ করা উচিত এবং প্রয়োজন হলে সংশোধন বা বাতিল করা উচিত।
আমার মনে হয়, এ চারটি কাজ যদি অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারে বা এমনভাবে শুরু করতে পারে, যা পরবর্তী সরকারের পক্ষে অবহেলা করা সম্ভব নয়, তাহলে আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভিত স্থাপন করতে পারব। সরকার এসব কটি কাজের গুরুত্ব স্বীকার করেছে, কিন্তু কাজগুলো আরও জোরেশোরে করতে হবে এবং বিভিন্ন টাস্কফোর্সকে নির্বাহী দায়িত্ব দিতে হবে। তারপর আরও অনেক সংস্কারের কাজ থাকবে, কিন্তু আগে এগুলো না করতে পারলে অলিগার্করা ও তাদের গোপন রাজনৈতিক সমর্থকেরা আমাদের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বিষাক্ত প্রভাব বিস্তার করতে থাকবে। নতুন উদ্যোক্তা, নতুন সেক্টর, সত্যিকারের উন্নয়ন—কিছুই সম্ভব হবে না।
যদি এই প্রাথমিক সংস্কারের কাজগুলো সম্পন্ন করা যায়, তারপর আরও গভীরে যেতে হবে। বাংলাদেশে কোনো সেক্টরই সঠিকভাবে কাজ করছে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাজার প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন—কোনোটাই ঠিকভাবে হচ্ছে না। কিন্তু এমন কোনো সমস্যা নেই, খোলামেলা আলাপ–আলোচনা ও পরীক্ষামূলক প্রস্তাবের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যার কোনো না কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না। এভাবেই অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত করা সম্ভব। কিন্তু এই খোলামেলা আলোচনা, প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি ও অর্থনীতি—কোনোটাই সম্ভব হবে না, যদি অতীতের অবৈধ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার ধারক ও বাহকেরা তাদের লুট করা সম্পদ ধরে রাখতে পারে, আর আমরা ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও সরকারের বাজেট–ঘাটতির রক্তক্ষরণ ঠেকাতে না পারি।
আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, কিন্তু চৌরাস্তায় আমাদের প্রথম পদক্ষেপগুলো ঠিক পথের দিকে হতে হবে।
* মুশতাক খান: সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতির অধ্যাপক