Homeদেশের গণমাধ্যমেপেঁপে চাষে বাজিমাত, এক বছরে ২০ লাখ টাকা লাভ

পেঁপে চাষে বাজিমাত, এক বছরে ২০ লাখ টাকা লাভ


পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে গেছে বরিশালের বাবুগঞ্জের বায়লাখালী গ্রামের আবু বকর সিদ্দিক সুমনের। গত পাঁচ বছরে কাঁচা-পাকা মিলিয়ে ৪০ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন। গত দুই বছর ধরে বিক্রি করছেন পেঁপে গাছের চারাও। তাকে দেখে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছেন এই অঞ্চলের চাষিরা। এখন চারা নিতে রীতিমতো তার কাছে সিরিয়াল দিতে হয় চাষিদের।

আবু বকর সিদ্দিক সুমনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁপের বীজ সংগ্রহ করেন ভারত থেকে। এক কেজি বীজের দাম পড়ে চার লাখ ৮০ হাজার টাকা। একেকটি গাছে সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় মণ পর্যন্ত পেঁপে হয়। একেকটির ওজন সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি। বেশিরভাগের ওজন দুই-তিন কেজির মধ্যে। সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৭ টাকা কেজি দরে পেঁপে বিক্রি করছেন। এই চাষ তাকে এনে দিয়েছে একাধিক সম্মাননা।

সুমন বলেন, পেঁপে চাষে সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে ২০২৩ সালে। ওই বছর শুধু লাভই হয়েছে ২০ লাখ টাকা। কাঁচা-পাকা পেঁপে বিক্রি করে এই আয় হয়েছে। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চারা বিক্রি। বিভাগের ছয় জেলা ও বিভিন্ন স্থান এমনকি ফেসবুকেও অর্ডার আসছে প্রতিদিন। ফলে সিরিয়াল মেনে চারা বিক্রি করতে হয়। তিন-চারটি চারা একত্রিত করে একটি পলিথিনে দেওয়া হয়। প্রতিটির দাম নেওয়া হয় ৪০ টাকা।’

চারা বেশি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘রোপণের পর দুই-একটি চারা মারা গেলেও একটি যাতে অন্তত বেঁচে থাকে। কোনোভাবেই যাতে ক্রেতারা অসন্তুষ্ট কিংবা হতাশ না হয়, সেজন্য এই প্রক্রিয়ায় চারা বিক্রি করি। আবার যাদের চারা দিতে না পারি তাদের বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করি। তবে এর সংখ্যা খুব কম। সবাই চান চারা। এ কারণে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।’

এক বছরে আট লাখ চারা বিক্রি

গত বছর আট লাখ চারা বিক্রি করেছি, সেখান থেকে তিন লাখের মতো লাভ এসেছে জানিয়ে এই কৃষি উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘২০২২ সালে খরচ বাদ দিয়ে কাঁচা-পাকা পেঁপে বেচে ১৫ লাখ টাকা আয় হয়।’ 

উৎপাদনের ক্ষেত্রে মাটি এবং গাছ বড় হওয়ার পর তার যত্নের দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হয় জানিয়ে সুমন আরও বলেন, ‘আমার বাগান এক একর জমিতে। চার শ্রমিকের সঙ্গে দিনরাত পরিশ্রম করে ফসল ঘরে তুলছি।’

পেঁপে বাগানের সঙ্গে একই জায়গায় মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, বরবটি এবং লাউ চাষ করেছেন এই চাষি। এতেও সফলতা এসেছে। বাগানের পাশেই মাছের ঘেরের চারদিকে পেঁপে বাগান। পুকুরের পাড়ে বারোমাস রোপণ করেন অন্য সব ফসল। এজন্য ঘেরের ওপর মাচা দেওয়া। তা থেকেও বছরে কয়েক লাখ আয় হয়।

ধুন্দল চাষেও সফল

গত পাঁচ মাসে অন্তত ২৫০ মণ ধু‍ন্দল বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে এক হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন ১৫০ মণ, এক হাজার ৬০০ টাকা দরে ৫০ মণ এবং বর্তমানে এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। চলতি মাসে ৫০ মনের বেশি বিক্রি করেছেন। এখনও গাছে আছে ফলন। পাশাপাশি সাড়ে তিন লাখ টাকার কুমড়া বিক্রি করেছেন। লাউ বিক্রি করেছেন আড়াই লাখ টাকার। লাউয়ের ডগা বিক্রি করেছেন লাখ টাকার।

এই চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁপে বিক্রি করে সবচেয়ে কম লাভ হয়েছে, যে বছর চাষাবাদ শুরু করেছেন। বছরটা ছিল ২০২০ সাল। তখন ভারত থেকে বীজ এনে এক একর জমিতে চাষাবাদ করেন। ওই বছর খরচ বাদ দিয়ে ছয় লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। এতে মনোবল বেড়ে যায়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আবাদ বাড়িয়ে দেন। এর পরের বছর থেকে বাড়তে থাকে লাভ। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

গত দুই বছর ধরে বিক্রি করছেন পেঁপে গাছের চারা

এখন প্রতি বছর ১৫ লাখের মতো আয় হয় জানিয়ে সুমন আরও বলেন, ‘পাশাপাশি অন্য চাষিদের চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করছি। আমার বাগান দেখে বিভিন্ন স্থান থেকে চারার জন্য ছুটে আসছেন পেশাদার ও তরুণ চাষিরা।’

সুমন বলেন, ‘এ পর্যন্ত কৃষিতে দেশ-বিদেশ থেকে তিনটি পুরস্কার পেয়েছি। এর মধ্যে অল্প জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন করায় নেপাল থেকে আমাকে সম্মাননা দেওয়া হয়। একই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও পুরস্কার দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও পুরস্কার পেয়েছি। আগামী ৪ নভেম্বর ভারত থেকে আমাকে মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ।’ 

কৃষি প্রশিক্ষণে পাঠশালা

বেকারদের জন্য কৃষি প্রশিক্ষণের পাঠশালা খুলেছেন সুমন। নাম দেওয়া হয়েছে সুমনের পাঠশালা। সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবন শেষ করা বেকার যুবক, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষক থেকে কৃষিশিক্ষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

গত পাঁচ মাসে অন্তত ২৫০ মণ ধু‍ন্দল বিক্রি করেছেন

যা বলছে কৃষি বিভাগ

বরিশাল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মুরাদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাবুগঞ্জের সুমন শুধু বরিশাল বিভাগে নয়, সারা দেশে পেঁপে চাষের মডেল হয়ে উঠেছেন। তাকে যেকোনও বিষয়ে কৃষি অফিস সহযোগিতা করছে। সেইসঙ্গে যেসব কৃষক পেঁপে চাষে আগ্রহী তাদের সুমনের পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলা হয়। পেঁপে ছাড়াও একই জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষে সফল সুমন।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত