নেপালের পোখরা শহরের এক মনোরম খেলার মাঠে ৬০ জনের মতো তরুণ একটি নিয়মিত অনুশীলনে লিপ্ত। এটি মূলত গুর্খা সেনা নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রস্তুতির অংশ। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বা সিঙ্গাপুর পুলিশের বাহিনীতে তাদের প্রবেশের সুযোগ করে দেবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
১৯ বছর বয়সী শিশির ভট্টারি নেপালের একটি মধ্যাঞ্চলীয় শহর থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, শৈশব থেকেই আমি যেকোনও সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছি। এই স্বপ্নের অনুপ্রেরণা আমার মায়ের কাছ থেকে এসেছে।
শিশির আরও জানান, তার প্রথম লক্ষ্য ছিল ভারতের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া। আমাদের পূর্বপুরুষরা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। আমি সেই ঐতিহ্য বজায় রাখতে চেয়েছিলাম।
তবে ২০২২ সালে ভারতের নতুন নিয়োগ নীতির কারণে নেপাল সরকার গোর্খা নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে, যা শিশিরের মতো অনেক তরুণের স্বপ্নে ছেদ ঘটায়।
বিশ্বের অন্যতম সাহসী যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত গোর্খা সেনারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে বিভিন্ন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর নেপাল, যুক্তরাজ্য ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে গোর্খাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ অব্যাহত ছিল।
তবে, ২০২২ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘অগ্নিপথ’ নামের নতুন নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করেন। এই ব্যবস্থায় সাড়ে ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের চার বছরের জন্য সামরিক সেবায় নিয়োগ দেওয়া হয়। চার বছর শেষে শুধু ২৫ শতাংশ সদস্য স্থায়ী সেবার জন্য বাছাই হন এবং বাকি সদস্যরা কোনও পেনশন ছাড়াই বাহিনী ছাড়তে বাধ্য হন।
নেপাল সরকার দাবি করেছে, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী এই পরিবর্তনের জন্য তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি। ফলে, তারা গোর্খা নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে।
সাবেক গোর্খা সেনা ও প্রশিক্ষক কৃষ্ণ বাহাদুর জানান, অগ্নিপথ পরিকল্পনা তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগকে সীমিত করেছে।
নেপালের তরুণদের অনেকেই দেশের বাহিনীতে যোগ দিতে চান। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে বিদেশি বাহিনীতে যোগ দেওয়া তাদের কাছে বেশি আকর্ষণীয়। সিঙ্গাপুর পুলিশের প্রাথমিক মাসিক বেতন যেখানে ৩ হাজার ডলার, সেখানে নেপালের সেনাবাহিনীর মাসিক বেতন মাত্র ২৭ -৩০ হাজার নেপালি রুপি (১৯৯-২২১ ডলার)।
যারা ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বা সিঙ্গাপুর পুলিশে সুযোগ পান না, তারা ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প যেমন রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছেন।
এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ১৫ হাজার নেপালি রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন এবং অন্তত ৪০ জন ইতোমধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টাচার্যের সরকার সেনাবাহিনীতে মাওবাদী যোদ্ধাদের সংহত করলেও দেশটির অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ অমীমাংসিত রয়ে গেছে। গোর্খা সেনাদের পুনরায় ভারতীয় বাহিনীতে যোগদানের সুযোগ নেপাল ও ভারতের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার ওপর নির্ভর করছে।