রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটর পদে দলের লোকজনকে নিয়োগ না দেওয়ায় এবার বিএমডিএর গোদাগাড়ী কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ব্যানারে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোন-১-এর কার্যালয় ঘেরাও করা হয়। আগের দিন বুধবার (১ জানুয়ারি) তানোর উপজেলা কার্যালয় ঘেরাও করেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে তানোর কার্যালয়ে তালাও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী গিয়ে চাবি নিয়ে কার্যালয়ের তালা খুলে দেয়। বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ী কার্যালয়ে তালা দেওয়া না হলেও আগামী রবিবারের পর বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীতে ৪৫০ ও তানোরে ৫৩৬টি গভীর নলকূপ আছে। সম্প্রতি এসব গভীর নলকূপের আগের অপারেটরদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এরপর নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। শুধু মৌখিক পরীক্ষার পরই অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। সদর দফতরের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ করা হয় বিএমডিএর সদর দফতর থেকে। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন দুই উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিএমডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দীনের ভাই ড. মো. আসাদ উজ জামান। তার আরেক ভাই প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। কয়েক মেয়াদে ছিলেন বিএনপির এমপি ও মন্ত্রী ছিলেন। এবার আসাদ উজ জামানের নিজ উপজেলা গোদাগাড়ীতেই নেতাকর্মীরা বিএমডিএ কার্যালয় ঘেরাও করলেন।
নেতাকর্মীরা দুপুরে উপজেলা সদর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোন-১-এর কার্যালয়ে যান। তারা সেখানে সমাবেশ করেন। উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুল মালেক সমাবেশ পরিচালনা করেন। সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়, আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়োগ পেয়েছেন।
সমাবেশে গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, শেখ হাসিনার দুঃশাসন আমরা সহ্য করেছি। এখন আমরা আল্লাহর রহমতে সুদিন পেয়েছি। তারপরও শেখ হাসিনার দোসররা আনাচে-কানাচে বসে আছে। শেখ হাসিনার পতনের পরও আমাদের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আগামী রবিবারের মধ্যে যদি বিএমডিএ এই নিয়োগ স্থগিত না করে, তাহলে আমরা বৃহৎ কর্মসূচি দেবো।
গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওসমান গনি বলেন, ‘এই লতিফ (বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোন-১ এর সহকারী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ) বলেছিল বিএনপির পক্ষ থেকে লিস্ট দেন। ৯টা ইউনিয়ন থেকে ৯টা লিস্ট জমা দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেকটা লিস্ট থেকে মাত্র ২-৩ জন করে নিয়েছেন। অন্যদের নিয়োগ হয়নি। তার গোদাগাড়ীতে থাকার কোনও অধিকার নেই। তাকে গোদাগাড়ী থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’
তবে বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা না নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোন-১-এর সহকারী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনও লিস্ট নিইনি। তারা তাদের নেতাদের কাছে লিস্ট দিতে পারেন। আমরা লিস্ট নেবো কেন? উচ্চপর্যায়ের একটা কমিটি ভাইভা গ্রহণ করেছে। তারা যোগ্যদের নির্বাচিত করেছেন। এখন যে ঝামেলা হচ্ছে সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি আমরা।’
আরও পড়ুন: সুপারিশকৃতদের নিয়োগ না দেওয়ায় কার্যালয় ভাঙচুর করে তালা দিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা