Homeদেশের গণমাধ্যমেতিন বছরেও নির্মাণ হয়নি নৌ ফায়ার স্টেশন

তিন বছরেও নির্মাণ হয়নি নৌ ফায়ার স্টেশন


দেশের নৌ-দুর্ঘটনার অন্যতম কালো অধ্যায় হয়ে আছে ঝালকাঠির সুগন্ধায় লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ট্র্যাজেডি। ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোরে লঞ্চ দুর্ঘটনায় আগুন লেগে ৪৭ জন যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছিল। এছাড়াও ২০২২ ও ২০২৩ সালে সুগন্ধা নদীতে তৈলবাহী জাহাজ ওটি মৃদুলা ও এমভি সাগর নন্দিনীতে অগ্নিকাণ্ডে ১১ জনের প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেসময় যদি জেলায় একটি নৌ ফায়ার স্টেশন থাকতো, তাহলে এত মানুষের প্রাণহানি ঘটতো না। ঘটনার পর সেখানে একটি নৌ পুলিশ ও নৌ ফায়ার স্টেশনের দাবি উঠেছিল, কিন্তু ঘটনার তিন বছর পরও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর ঘটনায় মাঝনদীতে দাউ দাউ করে জ্বলে লঞ্চটি। কোথাও ভেড়ানোও যায়নি। লঞ্চটিতে অগ্নি প্রতিরোধের ব্যবস্থা ছিল না, নির্বাপণেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। স্থানীয় অনেক মানুষ এগিয়ে গেলেও লঞ্চ পর্যন্ত যেতে পারছিলেন না। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে অনেক যাত্রীকে উদ্ধারও করেছিলেন।

সুগন্ধা নদীর ঘটনায় লঞ্চের আগুন নেভাতে ও উদ্ধারকাজের জন্য বরিশালের নৌ ফায়ার স্টেশন ইউনিট ও ডুবুরি দল আসে। ট্রলারযোগে যেতে তাদের অনেক সময় পেরিয়ে যায়। সেসময় ঝালকাঠিতে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন থাকলে দ্রুত পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যেত।

সুগন্ধা, বিষখালী, বাসন্ডা ও গাবখান চার নদীর মোহনায় উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির অবস্থান। দক্ষিণাঞ্চলে নৌ যোগাযোগে এ জেলার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। নৌপথটিতে বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী অসংখ্য জাহাজ চলাচল করে। এখানকার গাবখান চ্যানেল দিয়ে খুলনা, মোংলা, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কলকাতায় চলাচল করে অনেক নৌযান। এছাড়া বরগুনা, পাথরঘাটা, বরিশাল ও ঢাকার নৌযান চলাচল করে। ফলে সেখানে জেলাটিতে নৌ পুলিশ ও নৌ ফায়ার স্টেশনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নৌ ফায়ার স্টেশন থাকলে সেদিন ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি আরও কম হতো বলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে। এরপরও কেন সেখানে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন হবে না, সেটাই এলাকাবাসীর প্রশ্ন।

প্রায় ৬০ বছর আগে ঝালকাঠিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশন। সেটিকে ছয় বছর আগে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে সেদিনের দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ রয়েছেন।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৭ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। জেলায় নৌপথের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নৌ ফায়ার স্টেশন না থাকায় সেদিন লঞ্চের আগুন নেভাতে ও উদ্ধারকাজে বরিশাল থেকে যোগ দিয়েছিল নৌ ফায়ার স্টেশন ইউনিট ও ডুবুরি দল। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ট্রলারযোগে। এতে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। চার নদীর মোহনাবেষ্টিত গুরুত্বপূর্ণ এ জেলায় নৌপথের দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি প্রতিরোধে নৌ পুলিশ ও নৌ ফায়ার স্টেশন না থাকায় সেদিনের লঞ্চের আগুন নেভাতে ও উদ্ধারকাজে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

নৌ পুলিশ এবং নৌ ফায়ার স্টেশন থাকলে সেদিন ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি আরও কম হতো বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। এত বিপুলসংখ্যক প্রাণহানির পর তিন বছরেও জেলায় নৌ পুলিশ ও নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন হয়নি। এছাড়া ১৯৬৩ সালে ঝালকাঠিতে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশনটিকে আট বছর আগে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রস্তাব পাঠানো হলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সেদিনের দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন।

অভিযান-১০ লঞ্চে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযানের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, এত বড় একটি নৌ দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযানের প্রথম দিকে কর্তৃপক্ষের আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। পরে তাদের সেই আগ্রহে ভাটা পড়ে। কারণ, ভেসে ওঠা মরদেহ এলাকাবাসী উদ্ধার করে তাদের খবর দিয়েছিলেন।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, অভিযান-১০ লঞ্চটিতে অগ্নি প্রতিরোধের ব্যবস্থাতো ছিলই না, নির্বাপণেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।

ঝালকাঠি ফায়ার স্টেশনের সাব অফিসার সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনার বিষয়টি বিবেচনা করে ভবিষ্যতে প্রতিটি নৌযানে দুজন করে ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের সময় লঞ্চের কর্মী ও যাত্রীরা ভড়কে যান। তাই ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা থাকলে তাদের প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

সুগন্ধা, বিষখালী, বাসন্ডা ও গাবখান এই চার নদীর মোহনায় উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি অবস্থিত হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এ নৌপথে বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী অসংখ্য জাহাজ চলাচল করে। এখানে গাবখান চ্যানেল রয়েছে। এই চ্যানেল দিয়ে খুলনা, মোংলা, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কলকাতায় চলাচল করে অনেক নৌযান। এছাড়া বরগুনা, পাথরঘাটা, বরিশাল ও ঢাকার নৌযান চলাচল করে।

তিন বছরেও নির্মাণ হয়নি নৌ ফায়ার স্টেশন

ঝালকাঠি-ঢাকা রুটে চলাচল করা ফারহান-৭ লঞ্চের মাস্টার (চালক) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা জরুরি।

সুগন্ধা নদীর তীরবর্তী দিয়াকুল গ্রামের বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, ‘সেদিন লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের পর আমি শিশু-বয়স্কসহ কয়েকজনকে নদী থেকে উদ্ধার করি। এখানে যদি নৌ ফায়ার স্টেশন থাকতো তাহলে এই পরিমাণ ক্ষতি হতো না। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা না হয়, তাহলে পরবর্তী সময়েও এ রকম বিপদ হতে পারে।’

ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুগন্ধা নদীতীরের বাসিন্দা ঝালকাঠি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হুমায়ূন কবির সাগর বলেন, ‘আগুন দেখেই দ্রুততম সময়ে উদ্ধারকাজে যোগ দিই সেদিন। অগ্নিদগ্ধ মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। ওই রকম কোনো পরিস্থিতি যেন আর তৈরি না হয়, তাই জরুরি ভিত্তিতে নৌ ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা দরকার।’

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নৌ ফায়ার স্টেশনের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু তিন বছর পার হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। নৌ ফায়ার স্টেশন হলে এতে ডুবুরি দলও থাকবে। অগ্নিকাণ্ড হলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো যাবে।’

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঝালকাঠিতে নৌ ফায়ার স্টেশনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। অনুমোদন হলে নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে।

আতিকুর রহমান/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত