রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় বৃহস্পতিবার একটি পোশাক কারখানায় ‘কাজ না করলে বেতন নয়’ নোটিশ দেখে রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ করেন ক্রিয়েটিভ ডিজাইনারস লিমিটেডের (সিডিএল) শ্রমিকরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে দুই শ্রমিকের মৃত্যুর ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়া এবং ‘আমার ভাই মরলো কেন’ স্লোগানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কারখানায়। কোথা থেকে এলো এই স্লোগান, কোন ভাইয়ের মৃত্যুর কথা বলে আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করা হলো, সেই জবাব নেই শ্রমিকদের কাছেও। শ্রমিক নেতারা বলছেন, শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‘তৃতীয় পক্ষ’ তাদের মধ্যে ঢুকে পড়ে এ ধরনের উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে। আর মালিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, যারাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে, উদ্দেশ্যমূলক স্লোগান দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার।
কয়েক দিন ধরে ঝামেলা চলছিল কারখানার ভেতরে উল্লেখ করে এক শ্রমিক বলেন, লাইন চিফের সঙ্গে ঝামেলা থেকে তার বহিষ্কারের দাবি ওঠে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতির ডাক ছিল। বেতনের জন্য আমরা এসে হাজিরা দিয়ে চলে যেতাম। বুধবার (৩০ অক্টোবর) চালাকি করে সেই রাস্তা বন্ধ করতে চেয়েছে মালিক। কর্মবিরতির মধ্যে বুধবার রাতে সিডিএলের পণ্য রফতানির জন্য গাড়িতে তোলা হচ্ছিল। খবর পেয়ে আমরা চল্লিশ জনের মতো এসে রাতেই মালামাল আটক করি। পরে বৃহস্পতিবার সকালে কারখানার গেটে এসে দেখি নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে।
কী নোটিশ জানতে চাইল তিনি বলেন, ‘নো পে’ নোটিশ। তখন ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে যায়। উল্লেখ্য, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিডিএল কর্তৃপক্ষ কারখানার সামনে ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ সংবলিত নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছিল।
নোটিশে কী ছিল শ্রমিকরা সেটা ঠিক করে বলতে না পারলেও কারখানার গেটে তাদের জানানো হয়, কাজ না করলে দিনের টাকা পাবে না। নোটিশের বিষয়ে আতঙ্ক কাজ করে উল্লেখ করে এক নারী শ্রমিক বলেন, মাস শেষ। এখন গন্ডগোল লাগলে সারা মাসের বেতন পাবো না। এটুকু যদি আমাদের প্রতি সদয় না হয়, তারা ঝামেলা করে, আমাদের জান যায় যায় অবস্থা। আমি মাসচুক্তি কাজ করি। আমাকে দিনমজুরের মতো নো পে সিস্টেমে কেন ফেলাবে? এর মধ্যে পাশের শ্রমিক ভাইয়েরা বললো, দুই জন মরে গেছে। ওই সময় তারা স্লোগান দিচ্ছিল আমার ভাই মরলো কেন। তখন কার মাথা ঠিক থাকে?
শ্রমিকদের মাথার ঠিক না থাকুক এটা কারা চায় জানতে চাইলে আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী নাজমা আক্তার বলেন, শ্রমিকদের সারাক্ষণ অস্থির কথার চেষ্টা চলছে। কোন পক্ষ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষমতাবান ছিল যারা, তারা তো এখনও কারখানায় আছে। তারা নানাভাবে ক্ষুব্ধ করে শ্রমিকদের। যেকোনও পরিস্থিতি ব্যবহার করতে চায় তারা। এখানে অন্য রাজনীতিও আছে, অনেক কাজ এরইমধ্যে ভারতের দিকে যেতে শুরু করেছে। এখানকার পরিস্থিতি খারাপ করে বিজনেসটাকে ঘুরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা শ্রমিককেই রুখে দিতে হবে।
কর্মবিরতির কারণে রাস্তায় নামার কথা না বলে বেতন-ভাতার দাবিতে শ্রমিকরা নেমেছে বলে কথা ছড়ানো হয়েছে দাবি করে সিডিএলের পাশের এক কারখানার শ্রমিক বলেন, আমরা গিয়েছিলাম তাদের সঙ্গে যোগ দিতে। ১০টার দিকে আমাদের জানানো হয়, সিডিএলের শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতার জন্য রাস্তায় নেমেছে আর তাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। তখন সবাই বের হয়ে যেতে চেয়েছে। গুলি করার খবর দ্রুত ছড়িয়ে গেলে শ্রমিকরা ক্ষেপে যায়। যদিও বৃহস্পতিবার সিডিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ তারেক সরকার গণমাধ্যমকে জানান, শ্রমিকরা অভ্যন্তরীণ একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন থেকেই কর্মবিরতিতে ছিল। এই আন্দোলনের পেছনে বেতন-ভাতার কোনও সম্পর্ক নেই।
যেকোনও মিথ্যা তথ্য বা গুজব উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হয় উল্লেখ করে বিজিএমইএ’র সম্প্রতি বিলুপ্ত বোর্ড পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বৃহস্পতিবার মিরপুরের ঘটনা একেবারেই কারখানা সম্পর্কিত কোনও কিছু থেকে তৈরি হয়নি, বেতন-ভাতা এখানে ইস্যু ছিল না। আমরা যতদূর জানি, বাইরের ঝামেলা কারখানায় নিয়ে এসে নানা দাবি-দাওয়া হাজির করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে সেটাকে কেন্দ্র করে একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কারা করেছে, তৃতীয়পক্ষ আসলে কারা প্রশ্নে তিনি বলেন, এগুলো এত সংবেদনশীল যে উদ্দেশ্যমূলক স্লোগান কারা দিলো, কোথা থেকে এলো এটা বলা কঠিন। কোনও পক্ষ এটা কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে করিয়েছে কিনা সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে কেউ যদি মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় তবে তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত।
আরও পড়ুন: