Homeদেশের গণমাধ্যমেঅভিশপ্ত কারুন প্রাসাদে একদিন

অভিশপ্ত কারুন প্রাসাদে একদিন


মিশরে নবী ইউসুফের (আঃ) শহর নামে পরিচিত একটি জায়গা আছে। রাজধানী কায়রোর ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। ফাইয়্যুমের পাশেই রয়েছে পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন ও বৃহত্তম একটি হ্রদ, যার নাম বুহাইরাতুল কারুন বা কারুন হ্রদ। আর এই হ্রদের পাশেই রয়েছে অভিশপ্ত এক ঐতিহাসিক প্রাসাদ। যা কাসর ইল কারুন বা ‘কারুন প্রাসাদ’ নামে পরিচিত।

জনশ্রুতি আছে, এ হ্রদেই অভিশপ্ত কারুন আল্লাহর গজবে পতিত হয়েছিলেন, জীবন্ত অবস্থাতেই মাটি তাকে ও তার সব ধন-সম্পদ গ্রাস করে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাসাদটির ভেতরে কয়েকটি সুড়ঙ্গ পথ আবিষ্কার করেছেন। মাটির নিচ দিয়ে এসব সুড়ঙ্গ পথ ফাইয়্যুম থেকে নিয়ে বন্দর নগরী আলেকজান্দ্রিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রাসাদটির অভ্যন্তরের সুড়ঙ্গে ‘কুদসুল আকদাস’ নামক বিশেষ এক স্থানে প্রতি বছর ২১ ডিসেম্বর শুধু ২৫ মিনিটের জন্য সূর্যের আলো পড়ে। প্রাসাদটির ছাদের ওপর ওঠে দেখা যায়, আশপাশে শত শত ধংসাত্মক ইমারতের চিহ্ন। যা থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, হাজার হাজার বছর আগে কি ঘটেছিল এখানে।

আসুন জেনে নেই কে সেই কারুন:

প্রাচীন মিশরে বনী ইসরাঈল জাতির মধ্যে কাসাস নামে এক লোক ছিল। তার দুই ছেলে, একজনের নাম বাশার ও অপর ছেলের নাম ইমরান। ইমরানের দুই ছেলে। এক ছেলের নাম মুসা (আঃ) ও আরেকজনের নাম হারুন (আঃ)। অন্যদিকে বাশারের এক ছেলে নাম কারুন। অর্থাৎ কারুন ছিল হজরত মুসার (আঃ) আপন চাচাত ভাই।

পবিত্র কোরআনের সুরা আল-কাসাস এ আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয়ই ‘কারুন’ মুসার সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল, কিন্তু সে তাদের প্রতি জুলুম করেছিল। আমি তাকে এতটা ধন-ভাণ্ডার দান করেছিলাম, যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। (২৮:৭৬)

ইতিহাস বলে, প্রথমদিকে কারুন হযরত মুসার (আঃ) প্রতি ঈমান এনেছিলেন ও তার অন্যতম সাহাবী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে নিজের ধন-সম্পদের অহংকারে গর্বিত হয়ে পড়েন। তার অবস্থা এতটা খারাপ হয়ে যায় যে, আল্লাহর নবীর বিরোধীতাকারীতে পরিণত হয়।

বিশাল সম্পত্তি পাওয়ার পরও কারুন এতই কৃপণ হয়েছিলেন যে, সব ধন-সম্পদ তিনি কেবল তার তোষখানায় জমা রাখতেন। ভুলেও কোনোদিন তার একটি পয়সাও সৎ কাজে ব্যয় করতেন না। আল্লাহ তাআলার দেওয়া অগণিত ধন-সম্পদের মালিক হয়ে কারুন আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিলেন।

আল্লাহর হুকুম মতো হজরত মুসা (আঃ) কারুনের কাছে গিয়ে বলেন ‘হে কারুন, তুমি তোমার জমানো ধনরত্ন ও সম্পদের যাকাত দান করো। না হলে আল্লাহ পাক নারাজ হবেন।

পবিত্র কোরআনে আরও এসেছে, আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন, তা দিয়ে পরলোকের কল্যাণ অনুসন্ধান করো। ইহলোকে তোমার বৈধ সম্ভোগকে উপেক্ষা করো না। আল্লাহ তোমার প্রতি যেমন সদাশয় হয়েছেন তুমি তেমনি (মানুষের প্রতি) সদাশয় হও ও পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করিও না। কারণ নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারীকে ভালোবাসেন না। (সুরা-কাসাস-৭৭)

কৃপণ কারুন জবাবে বলেন, আল্লাহর ভয় যখন দেখাচ্ছেন, তখন মালের কিছু জাকাত দিতে পারি এক শর্তে। হযরত মুসা (আঃ) বলেন, বলো কি তোমার শর্ত?

অভিশপ্ত কারুন প্রাসাদে একদিন

কারুন বলেন, আল্লাহ তোমাকে পয়গাম্বরী দান করেছেন। আর আপনি আপনার ভাই হারুনকে খিলাফত দিয়েছেন। হারুনের মতো আমাকেও যদি খিলাফত দেন, তাহলে আমি আপনার কথামতো জাকাত দেব।

হযরত মুসা (আঃ) বললেন, তুমি ভুল বুঝেছো। খিলাফত বা নবুওয়াত দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আল্লাহ তাআলা যখন যাকে নবুওয়াত দেওয়ার ইচ্ছা করেন, তখন তিনিই সেই গুণের অধিকারী হতে পারেন। এতে মানুষের কোনো হাত নেই।

কারুন বলেন, আল্লাহ যদি আমাকে খিলাফত না দেন, তবে তিনি কেনো আমার কাছে জাকাত দাবি করবেন? আমি নিজের ক্ষমতা, যোগ্যতা ও কৌশলের জোরে এসব ধন-সম্পদ রোজগার করেছি।

আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন পবিত্র কোরআন এর ৮১ নাম্বার আয়াতে বলেন,

فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ فَمَا كَانَ لَهُ مِن فِئَةٍ يَنصُرُونَهُ مِن دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنتَصِرِينَ (القصص: ٨١)

অতঃপর আমি কারুনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিলাম। তার পক্ষে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন দল ছিল না, যারা তাকে সাহায্য করতে পারে এবং তিনি নিজেও আত্মরক্ষা করতে পারল না। (সূরা ক্বাসাস: ৮১)

এমআরএম/জিকেএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি,
স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা
পাঠানোর ঠিকানা –
[email protected]



Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত