বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের ফলে গত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি অবৈধ বিদেশি দেশ ছেড়েছেন। তবে এখনও প্রায় ৩৩ হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিক বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিক এক্সিট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছিলেন, যা প্রশাসনের নজরে আসার পর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সরকারি নির্দেশনার অংশ হিসেবে, গত ৮ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বৈধতা অর্জনের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
একইসঙ্গে, যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশি নাগরিকদের নিয়োগ দিয়েছে, তাদেরও সহযোগিতা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে, ২৬ ডিসেম্বর আরেকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয় যে, বৈধতার জন্য ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার তথ্যমতে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় ৪,৫০০ বিদেশি নাগরিক বৈধতার জন্য আবেদন করেছেন। তবে, প্রকৃত অবৈধ নাগরিকদের তুলনায় এটি খুবই কম সংখ্যা।
৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে এক্সিট ভিসা নিয়ে ১২ হাজারের বেশি বিদেশি বাংলাদেশ ছেড়েছেন। এ সময় তারা প্রায় ১৫ কোটি টাকা জরিমানা প্রদান করেছেন। এছাড়া, কিছু বিদেশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চলে গেছেন বলেও গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ৩৩ হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিক কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এদের অনেকে বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রকল্পে কর্মরত আছেন অথবা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এতে দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে এবং সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। ৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১১ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন)।
কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
টাস্কফোর্স বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের শনাক্তকরণ, নীতিগত দিকনির্দেশনা প্রদান এবং কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করবে। একইসঙ্গে, অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনাও করছে সরকার।
এম.কে.