Homeজাতীয়‘সার্ক’-কে জিইয়ে তুলতে ঢাকার প্রস্তাব নাকচ করলো দিল্লি

‘সার্ক’-কে জিইয়ে তুলতে ঢাকার প্রস্তাব নাকচ করলো দিল্লি


দীর্ঘদিন ধরে স্থবিরতায় ভোগা দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট বা ‘সার্ক’কে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়া হলেও ভারত তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সার্ককে নতুন করে জিইয়ে তোলার অর্থ ভারতের দৃষ্টিতে ‘সন্ত্রাসবাদকে স্বাভাবিকতা দেওয়ার চেষ্টা’– এমনটাও অভিযোগ করা হয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে। দ্বিপাক্ষিক এই কথোপকথনের বিষয়টি শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

সার্কের এই প্রসঙ্গটি গত ১৬-১৭ ফেব্রুয়ারি ওমানে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের সময় আলোচিত হয়েছিল। ওমানের রাজধানী মাসকটে ৮ম ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের সাইডলাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বৈঠকে বসেছিলেন, তখনই তাদের মধ্যে সার্ক নিয়ে এসব কথাবার্তা হয়।

এই প্রসঙ্গে আজ দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিক সম্মেলনে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, ‘হ্যাঁ, এটা ঠিকই যে মাসকটের ওই বৈঠকে (সার্কের) এই প্রসঙ্গটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তোলা হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়াতে এটা প্রত্যেকেরই জানা আছে যে, এই অঞ্চলে কোন দেশের জন্য ও তাদের কোন কার্যকলাপের জন্য সার্কের কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়ে আছে।’ পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করলেও রণধীর জয়সওয়াল তাদের প্রতি ইঙ্গিত করেই এমন মন্তব্য করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এরপরই তিনি বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে তখন এই বার্তাও দিয়েছেন, বাংলাদেশ যেন সন্ত্রাসবাদকে স্বাভাবিকতা দেওয়ার চেষ্টা না করে– এটা গুরুত্বপূর্ণ!’ অর্থাৎ সার্ককে জিইয়ে তোলার কথা বলা মানে ‘পাকিস্তানের সুরে সুর মেলানো এবং তাদের সন্ত্রাসবাদে প্রচ্ছন্ন সায় দেওয়া’– ভারত বিষয়টিকে এভাবেই দেখছে, সেটাই আজ দিল্লির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওমানে বৈঠকে তৌহিদ হোসেন ও এস জয়শঙ্কর

ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, পাকিস্তান যতদিন সীমান্তের অন্য পার থেকে ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসবাদে মদত দেবে বা ভারতের সঙ্গে ‘ছায়াযুদ্ধ’ চালাবে, ততদিন তাদের সঙ্গে কোনও সহযোগিতা সম্ভব নয়। একই কারণে সার্কের শীর্ষ সম্মেলনও বহু বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়নি– কারণ এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার পাকিস্তানি কাউন্টারপার্টের সঙ্গে একই মঞ্চে আসতে রাজি নন।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, ভুটান, বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো সার্কের অন্য সদস্য দেশগুলো এতদিন ভারতের এই অবস্থানকে মোটের ওপর সমর্থন জানিয়েছে বলেই জোটে ভারতের বক্তব্যই প্রাধান্য পেয়েছে এবং পাকিস্তান ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

ইতোমধ্যে সার্কের পরিবর্তে ভারত বঙ্গোপসাগরীয় জোট ‘বিমসটেক’-কে দৃশ্যতই বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছে – যাতে পাকিস্তান নেই, কিন্তু ভারত ছাড়াও থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানও যার সদস্য। এর ফলে ক্রমশ আরও বেশি গুরুত্ব হারাচ্ছিল সার্ক।

গতবছরের সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে মুহাম্মদ ইউনূস ও শাহবাজ শরিফ

কিন্তু গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ঢাকার পররাষ্ট্রনীতিতে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার বিষয়টি গুরুত্ব পেতে শুরু করে। তা ছাড়া সার্কের অন্যতম প্রধান দ্রষ্টা ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, ফলে এই আঞ্চলিক জোটটির প্রতি বাংলাদেশের অনেক মানুষের একটা আলাদা অধিকারবোধ ও একাত্মতাও আছে।

গত বছর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের অবকাশে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে বসেন, তখনও সার্ককে কীভাবে আবার সক্রিয় করে তোলা যায়; তা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনাও হয়েছিল।

কিন্তু এর মাস কয়েকের মধ্যেই যখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি জোটের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ভারতের কাছে তোলা হলো, সেই পাকিস্তানের দোহাই দিয়েই কিন্তু ভারত প্রস্তাবটি কার্যত খারিজ করে দিলো।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত