গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিতে দুই মাস সময় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি গোলাম মুর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
আগামী ২৮ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। একই সঙ্গে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ২৩ ফেব্রুয়ারি এক দিনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২৩ জনের মধ্যে আজ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ ৮ জনকে হাজির করা হয়। অন্য ৭ জন হলেন এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা, বরখাস্ত হওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল হক, ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি-উত্তর) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন বি এম সুলতান মাহমুদ, গাজী এম এইচ তামিম, তারেক আব্দুল্লাহ ও শাইখ মাহদী।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁরা জুলাই-আগস্টের গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ কেউ মাঠে থেকে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণও করেছেন। এই মামলার ২৩ জনের মধ্যে ৮ জন উপস্থিত আছেন। দেশব্যাপী অপরাধ হয়েছে। তদন্ত শেষ করতে সময় প্রয়োজন। তিনি অন্তত দুই মাস সময়ের আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেন।
জিয়াউল আহসানের পক্ষে তাঁর বোন আইনজীবী নাজনীন নাহার শুনানি করেন। তিনি জিয়াউল আহসানকে কিছু বই ও জাতিসংঘের প্রতিবেদনসহ কিছু জিনিস সরবরাহ করার আবেদন করেন। এ সময় চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এগুলো কারাবিধি অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। সেখানে প্রত্যাখ্যাত হলে এখানে আসতে পারে। পরে ট্রাইব্যুনাল কারা কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন দিতে বলেন এবং সেখানে প্রত্যাখ্যান করলে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে বলেন।
শুনানির একপর্যায়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আগে তো আসামিদের এক গ্লাস পানি দিতে হলেও অনুমতি নিতে হতো। এখন তো সে অবস্থা নেই। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, আগের ট্রাইব্যুনাল আর এখনকার ট্রাইব্যুনাল এক নয়। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তিনি (নাজনীন) আবেদন করুক। সেখানে প্রত্যাখ্যাত হলে আসুন। এখানে এসব বলে আদালতের সময় নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল।
মহিউদ্দীনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিতে তিন মাস সময়: সাবেক পুলিশ সুপার মহিউদ্দীন ফারুকীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিতে তিন মাস সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাঁর বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তিনি র্যাবে থাকাকালে বন্দীদের ব্যাপক নির্যাতন করতেন। গুম কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিতে তিন মাস সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল ২৮ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেন।