Homeজাতীয়বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য দরকার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি: দ্য হিন্দুকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য দরকার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি: দ্য হিন্দুকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা


ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। এর মধ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, শেখ হাসিনার ভারত থেকে দেওয়া বক্তব্য, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড, জেলেদের প্রতি অবমাননামূলক আচরণ এবং আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্পসংক্রান্ত সমস্যা আছে।

দ্য হিন্দু: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আপনার বৈঠকের বিষয়ে বলুন, বিশেষ করে যখন দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা চলছে…?

তৌহিদ হোসেন: সত্যি বলতে, (বাংলাদেশের) অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সম্পর্ক খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। শুরুটা বেশ কঠিন ছিল। কারণ আমি মনে করি, ভারত গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে একটি নির্দিষ্ট ধাঁচের সম্পর্কে অভ্যস্ত ছিল, তবে হঠাৎ করেই সেই সম্পর্কের ধরনে দ্রুত পরিবর্তন আসে। সম্ভবত নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ভারতের কিছুটা সময় লেগেছে, তাই শুরুতে সম্পর্ক নিয়ে অনেক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল এবং একধরনের অস্বস্তি ছিল।

তবে আমি মনে করি, ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর সেই অবস্থা কেটে যাওয়া উচিত। এখন আমাদের এমন একটি পরিবেশ দরকার, যেখানে আমরা স্বাভাবিকভাবে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারব। ছয় মাস আগের তুলনায় এখন দুই দেশ অনেক ভালোভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে।

দ্য হিন্দু: সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আপনি কি এ বিষয়ে এস জয়শঙ্করের কাছে কিছু জানতে চেয়েছেন?

তৌহিদ হোসেন: আসলে আমি এটা জানতে চাইনি। কারণ, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে কী আলোচনা করে, সেটি তাদের ব্যাপার। তবে আমি মনে করি, এ নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে হবে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটি ইতিমধ্যেই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই আমরা এটা দেখতে পাচ্ছি। কিছু সময়ের জন্য বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটেছিল, তবে সেটি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, দুই দেশের জনগণ ও বেসরকারি খাত পরস্পরের সঙ্গে কাজ করতে চায় এবং এটি আমাদের স্বার্থের বিষয়। দুই দেশের স্বার্থরক্ষা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

দ্য হিন্দু: ভারতে একাধিকবার প্রকাশ্যে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। আপনি কি মনে করেন, আপনার সরকার এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে? ভারত কি এ বিষয়ে সন্তুষ্ট? কারণ, এটি এখন দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।

তৌহিদ: আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশে হিন্দু বা অন্য যে কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলমান বা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মতোই সমান নাগরিক। তাদের সমান অধিকার রয়েছে এবং সুরক্ষা পাওয়াও তাদের অধিকার। বাংলাদেশ সরকার তাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে। যেভাবে অন্য যে কোনো নাগরিকের জন্য করে থাকে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ভারতীয় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে এক ধরনের অযৌক্তিক প্রচারণা শুরু হয়, যা বেশির ভাগই মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ছিল।

আমি আপনাদের অনুরোধ করব, জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের দিকে নজর দিতে, যা দুই দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল না। জাতিসংঘ আমাদের অনুরোধে এটি পর্যবেক্ষণ করেছে। কারণ আমরা চেয়েছিলাম, পরিস্থিতির একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ মূল্যায়ন হোক।

দ্য হিন্দু: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে আপনারা ভারতের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করছেন?

তৌহিদ হোসেন: তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি, তাঁকে ফেরত পাঠাতে। যাতে তাঁকে বাংলাদেশের আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা যেতে পারে। যদি ভারত সরকার তা না-ও করে, তবে অন্তত আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যে, তিনি যেন ভারতের মাটি থেকে উসকানিমূলক ও মিথ্যা বক্তব্য না দেন, যা বাংলাদেশের ভেতরে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, গত ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। জনগণ চায় না, তিনি পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করুন।

দ্য হিন্দু: কিন্তু শেখ হাসিনার এক বক্তব্যের পর শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালানোর বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

তৌহিদ: কিছু লোক হয়তো কোনো কিছু করতে পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সেটি সরকারের সমর্থনপুষ্ট।

দ্য হিন্দু: আপনাদের সরকার এখন পর্যন্ত শুধু ভারতকে ‘নোট ভারবাল’ পাঠিয়েছে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর জন্য। আনুষ্ঠানিকভাবে কি প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হবে?

তৌহিদ হোসেন: আমাদের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, এবং আমরা ভারতের কাছে বহু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ফেরত দিয়েছি যাতে তারা সেখানে বিচারের মুখোমুখি হতে পারে। আমি মনে করি, ভারতও তাকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে পারে যাতে তিনি এখানে বিচারের সম্মুখীন হতে পারেন।

দ্য হিন্দু: কিন্তু সেই প্রত্যর্পণ চুক্তির জন্য আপনাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এমএলএটি (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স) নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত পরোয়ানাও থাকতে হবে। বাংলাদেশ কবে এই প্রক্রিয়া শুরু করার আশা করছে?

তৌহিদ হোসেন: দেখুন, প্রক্রিয়াটি এরই মধ্যেই চলমান, কারণ মামলাগুলো এখন আদালতে আছে। আমরা তাদের তাড়াহুড়ো করতে বাধ্য করতে পারি না। আর আমরা এটাও জানি যে, তিনি ভারতীয় বিচারিক ব্যবস্থারও আশ্রয় নিতে পারেন। এতে সময় লাগতে পারে, তবে আমাদের মূল চাওয়া হলো—তিনি ভারতে থাকাকালীন উসকানিমূলক বক্তব্য না দেন।

দ্য হিন্দু: সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের আটক প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি কিছু মুক্তিপ্রাপ্ত মৎস্যজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন, যাদের বাংলাদেশের কারাগার থেকে ছাড়া হয়েছে। তাদের মারাত্মকভাবে মারধর করা হয়েছে, তাদের অনেকে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন, অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। আপনি কি মনে করেন, এটি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতির ফল?

তৌহিদ হোসেন: আমি তা মনে করি না। প্রথমত, সীমান্তের বিষয়টি দেখুন। ২০২৪ সালের অর্ধেক সময় আগের সরকার ক্ষমতায় ছিল। সে সময়েই সীমান্তে ২৪ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটি বিশ্বের কোথাও হয় না। আপনি এই বিষয়ে আমার সঙ্গে একমত হবেন। কারণ, ভারতীয় পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয় যে, যেহেতু সীমান্তে অপরাধ হচ্ছে, তাই এটি ঘটছে। কিন্তু বিশ্বের প্রতিটি সীমান্তেই অপরাধ সংঘটিত হয়।

কিন্তু কোথাও মানুষকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় না। যদি কেউ অপরাধ করে থাকে, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করুন, আদালতে উপস্থাপন করুন, কারাগারে পাঠান বা আদালত যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই করুন। কিন্তু এভাবে সরাসরি হত্যা করা যায় না। অথচ বছরের পর বছর ধরে, বিভিন্ন সরকার থাকার পরও, সীমান্তে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি মনে করি, ভারত যদি চায়, তবে এটি বন্ধ করতে পারে এবং অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।

দ্য হিন্দু: দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল সামুদ্রিক অঞ্চল সংক্রান্ত। বাংলাদেশ ও ভারত বহু বছর আগে একটি সামুদ্রিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। তবুও এখনো দুই দেশের মধ্যে মৎস্যজীবীদের আটকের ঘটনা ঘটছে…?

তৌহিদ হোসেন: আমি সরাসরি ঘটনাস্থলে ছিলাম না, তবে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে যা জেনেছি, তা হলো—মৎস্যজীবীরা মাছ অনুসরণ করে চলে। স্থলে স্পষ্ট সীমান্তরেখা থাকে, আপনি জানেন যে এখানেই সীমা। কিন্তু সমুদ্রে বিষয়টি এতটা সহজ নয়। প্রায়ই দুই পক্ষের মৎস্যজীবীরাই একে অপরের সামুদ্রিক সীমানা অতিক্রম করে ফেলে। আপনারা কিছু মৎস্যজীবী আটক করেছেন, আমরাও কিছু করেছি, এবং আমরা উভয়েই সময়ে সময়ে তাদের মুক্তি দেই।

যেখানে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে…আমরা এরই মধ্যে একটি তদন্তের জন্য অনুরোধ করেছি এবং যদি দেখা যায় যে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ সত্যিই জড়িত ছিল বা আইন লঙ্ঘন করেছে, তাহলে অবশ্যই আমরা তা বিবেচনায় নেব। তবে এটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। আমি কলকাতায় চার বছরেরও বেশি সময় কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি এবং এই বন্দী বিনিময়ের প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছি। সাধারণত তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় না। যদি কোনো ব্যতিক্রম ঘটে থাকে, আমরা অবশ্যই তা খতিয়ে দেখব।

দ্য হিন্দু: আদানি বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালুর জন্য আদানি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করছে। বাংলাদেশ সরকার আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি চালিয়ে যেতে চায়, এটি কি নিশ্চিত করে বলা যায়?

তৌহিদ হোসেন: আমি মনে করি, আমরা সাধারণত দুই ধাপে আলোচনা করি—একটি চুক্তি স্বাক্ষরের আগে এবং অন্যটি চুক্তি স্বাক্ষরের পরে। যখন কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তখন আমাদের সেই চুক্তির শর্ত মেনে চলতে হয়। তবে যদি দেখি যে, এটি যথাযথভাবে সম্পাদিত হয়নি বা এতে কোনো অসংগতি রয়েছে, তাহলে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে তা পুনরায় পর্যালোচনা করা যেতে পারে।

আমার মতে, আমরা আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনা করব এবং এটিকে আরও যৌক্তিক করার চেষ্টা করব। আমি প্রযুক্তিবিদ নই, তাই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কারিগরি বিষয়ের বিস্তারিত আমি বলতে পারছি না। তবে অন্যান্য বিদ্যুৎ চুক্তির সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, এই চুক্তির আওতায় নির্ধারিত বিদ্যুৎ ট্যারিফ তুলনামূলকভাবে বেশি। আমাদের বিশ্বাস, এটি পুনরায় আলোচনা করা উচিত, বিশেষ করে কয়লা ক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে।

যেকোনো যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা গেলে, এই প্রকল্পের জন্য বিশ্ববাজারে সর্বোত্তম মূল্যে কয়লা কেনা উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা করা হয়নি। এই বিষয়গুলোতে আমরা আদানি গ্রুপের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা করতে পারি এবং পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে একটি সমাধানে পৌঁছাতে চাই।

তবে বর্তমান সময় বিবেচনায়, আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালুর অনুরোধ করেছি। কারণ, আমাদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন এবং আমাদের পরিকল্পনাও এই সরবরাহের ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে। আমরা চাই, আদানি গ্রুপ আমাদের এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করুক এবং আমরা এর জন্য অর্থ পরিশোধ করব।

দ্য হিন্দু: আপনি এরই মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দুইবার সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের মধ্যে কোনো বৈঠক হয়নি। আপনি কি মনে করেন, আগামী এপ্রিলে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিমসটেক সম্মেলনে তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: এখন পর্যন্ত দুই নেতা একই দিনে একই স্থানে ছিলেন না। তাই তাদের মধ্যে সাক্ষাতের সুযোগ হয়নি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, উভয় পক্ষই মুক্ত ও আন্তরিকভাবে আলোচনা করতে আগ্রহী।

আমাদের অঞ্চলের সংস্কৃতিতে, যখন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা একসঙ্গে বসেন, তখন একটি শব্দেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। যেখানে আমাদের মতো কর্মকর্তাদের জন্য এটি বছরের পর বছর আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেদিক থেকে, তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হওয়া ইতিবাচক হবে।

যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন তাঁরা একবার ফোনে কথা বলেছেন। তাঁরা বিমসটেক সম্মেলনে একই ভেন্যুতে থাকবেন, কারণ সেখানে সব রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। স্বাভাবিকভাবেই, এটি ছোট পরিসরের একটি সম্মেলন হওয়ায় তাদের মধ্যে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের সম্মেলনগুলোতে প্রতিটি রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান অন্য সাতজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করতেন। তাই আমি মনে করি, বিমসটেকেও তেমন কিছু হতে পারে।

দ্য হিন্দু: আপনি কি এই বিষয়টি জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা করেছেন?

তৌহিদ হোসেন: আমি শুধু বিষয়টি উল্লেখ করেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি এখনো আগাম বলা যাবে না। সাধারণত এসব বিষয় সম্মেলনের কয়েক দিন আগে চূড়ান্ত করা হয়, যখন পুরো কর্মসূচি নির্ধারিত হয়। দেখা যাক কী হয়।

দ্য হিন্দু: আপনি পররাষ্ট্রনীতিতে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস সম্পর্কে জানেন। ২০০৯ সালের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা কি আবার আগের অবস্থায় ফিরতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: কেন শুধু গত ১৫ বছরকে বিবেচনা করবেন? এমনকি বিএনপির শাসনামলেও (১৯৯৬-২০০১) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমি মনে করি না যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট সরকারের ওপর নির্ভরশীল।

১৯৯৬-১৯৯৭ সালে আমরা গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি করেছিলাম, যা দুই দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ থেকে বোঝা যায়, যে-ই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, আমাদের সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে উঠতে হবে।

আমার বিশ্বাস, উভয় পক্ষই জানে তাদের স্বার্থ কোথায় এবং কীভাবে পারস্পরিক সুবিধা অর্জন করা যায়। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত