টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা রেল সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকাল ১১টায় ইব্রাহীমাবাদ রেলস্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাঈদা শিনইচি এবং জাইকার দক্ষিণ এশিয়ার মহাপরিচালক আইটিও তেরুইউকি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন।
উদ্বোধনের পর দুপুর ১২টা ৯ মিনিটে অতিথিদের নিয়ে একটি ট্রেন সেতুর পূর্বপ্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্তে যাত্রা করে এবং মাত্র ৩ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে যমুনা নদী অতিক্রম করে। পরে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ রেলস্টেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ট্রেনটি ফিরে আসে ইব্রাহীমাবাদ রেলস্টেশনে।
২০২০ সালের আগস্টে শুরু হওয়া এই মেগা প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪.৭ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০.৯৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এর মধ্যে জাইকা ১২ হাজার ১৪৯.২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে। প্রকল্পের নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ২০১৬-২০২৩, যা পরবর্তীতে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
নতুন রেল সেতু চালুর ফলে পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে রেল যোগাযোগ সহজতর হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্পের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয় ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর। প্রথমে ১০, ২০ ও ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রায়াল সম্পন্ন হয়। পরে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ১২ জানুয়ারি চূড়ান্ত পরীক্ষায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হয়।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার, যার ৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যান রয়েছে। এটি ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসহ ১২০ কিমি গতিতে ট্রেন চলাচলের উপযোগী। এতে জাপানি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন ব্যবহৃত হয়েছে, যা উচ্চগতির ট্রেন চলাচলের জন্য নির্মিত।
নতুন সেতু চালুর ফলে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটে ট্রেন সিডিউল বিপর্যয় কমবে। বর্তমানে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন যমুনা সেতু পারাপার হয়, যা বেড়ে ৮৮টি ট্রেনে উন্নীত হবে। যমুনা সেতুর ওপর চাপ কমে কৃষিপণ্য ও শিল্পজাত পণ্য পরিবহন সহজতর হবে এবং দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি আসবে।
বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত এই প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজে সাতটি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। এর মধ্যে ওবাইসি-আইএইচআই, এসএমসিসি ও আইএইচআই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া তিনটি নতুন রেলস্টেশন, তিনটি প্ল্যাটফর্ম, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও দুটি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।
নতুন এই যমুনা রেল সেতু দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। এটি উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য দ্রুত, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ নিশ্চিত করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।