Homeজাতীয়ডাকাতদের টার্গেট ছিল আরও একটি ব্যাংক

ডাকাতদের টার্গেট ছিল আরও একটি ব্যাংক


কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লিয়ন মোল্লা নীরব নামের যে যুবক, তিনি সৌদিপ্রবাসী এক নারীর স্বামী। স্ত্রীর পাঠানো রেমিট্যান্স তোলার কথা বলে নীরব ও তাঁর সহযোগীরা ব্যাংকটিতে ঢোকেন।

এরপর অস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও গ্রাহকদের জিম্মি করে মেঝেতে মাথা নিচু করে বসিয়ে রাখেন চার ঘণ্টা। একজন সবার দিকে অস্ত্র (আসলে খেলনা) তাক করে থাকেন, বাকি দুজন কাউন্টার থেকে টাকা হাতিয়ে ব্যাগে ভরেন।

ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা কৌশলে নিচের এক ব্যবসায়ীকে ডাকাত পড়েছে বলে মুঠোফোনে জানিয়ে দেন। খবর পেয়ে দুই মিনিটের মধ্যে ব্যাংকের প্রধান ফটকে তালা দেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আটকা পড়েন তিন ডাকাত। তাঁরা বের হতে না পেরে প্রায় চার ঘণ্টা সবাইকে জিম্মি করে রাখেন। তবে শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে আত্মসমর্পণ করেন। মুক্তি পান জিম্মি থাকা ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ১৫ জন।

কেরানীগঞ্জের কদমতলী চৌরাস্তা পার হয়ে চুনকুটিয়া বাজার। বাজারের অদূরেই মধ্যপাড়া বেবিস্ট্যান্ড। বেবিস্ট্যান্ডের পাকাপুল ব্রিজসংলগ্ন বাবুল মিয়ার চারতলা ভবন। এ ভবনেরই দোতলায় রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখা। তৃতীয় ও চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে থাকে আটটি পরিবার।

গত বৃহস্পতিবার ডাকাতির চেষ্টার পর গতকাল রোববার চুনকুটিয়ায় গিয়ে দেখা গেল, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে কর্মীদের চোখেমুখে এখনো উদ্বেগের ছাপ। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। ব্যাংকের প্রবেশমুখে প্রধান ফটকে বেসরকারি নিরাপত্তাপ্রতিষ্ঠান এলিট ফোর্সের একজন কর্মী বসে আছেন। কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলেই কারণ জানতে চাইছিলেন। হারুন নামের নিরাপত্তাকর্মী বললেন, ডাকাতির ঘটনার পর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

প্রধান ফটক দিয়ে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতেই আরেকটি কলাপসিবল গেট, এরপর দরজা। সেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রতন নামের আরেক নিরাপত্তাকর্মী। তাঁর পাশে ছিলেন সশস্ত্র এক আনসার সদস্যও।

ব্যাংকের এই শাখার ম্যানেজার শেখর মণ্ডল ঘটনার সময় ভেতরে ছিলেন। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘তখন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৯ জন ছিলাম। এ ছাড়া ছয়জন গ্রাহক ছিলেন। বেলা দেড়টার দিকে ডাকাতেরা ভেতরে ঢোকে। তারা অস্ত্র তাক করে সবাইকে ডেস্ক থেকে তুলে নিয়ে মেঝেতে মাথা নিচু করে বসিয়ে রাখে। উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা সেভাবেই বসে ছিলাম। ঘটনার পর সবাই ট্রমাটাইজড (মানসিক ধাক্কার শিকার)। তবে সবাইকে স্বাভাবিক হতে সহায়তা করার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

রেমিট্যান্স তোলার কথা বলা হয়

বেলা দেড়টার দিকে মধ্যপাড়ার বাজারের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা বাসায় চলে যান। ব্যাংকের গ্রাহকও কমে আসে। এ সময় তিনজন মুখে মাস্ক পরে ব্যাংকের ফটকে যান। নিরাপত্তাকর্মী রতন তাঁদের কাছে ব্যাংকে আসার কারণ জানতে চান। তারা জানায়, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ উত্তোলন করবেন। এরপর তাঁদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়।

রতন বলেন, ভেতরে ঢুকেই পেছন থেকে তাঁর গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে হাত তুলতে বলেন একজন। অপর দুজন কাউন্টারে থাকা ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মেঝেতে বসিয়ে দেন। একজন তাঁদের দিকে অস্ত্র তাক করে রাখেন, বাকি দুজন ব্যাংকের কাউন্টার থেকে টাকা হাতিয়ে ব্যাগে ভরেন।

ব্যাংক কর্মকর্তা আগেই মোবাইলে জানান

জিম্মি হওয়ার আগেই মোবাইলে ডাকাতির ঘটনাটি ব্যাংকটির সেকেন্ড অফিসার বাবু টিটু নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে জানিয়ে দেন। টিটু আশরাফুল নামের এক সেলুনমালিককে নিয়ে কলাপসিবল গেটে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেন। এরপর চুনকুটিয়া বড় মসজিদের মাইকে ডাকাতির ঘটনা ঘোষণা করা হলে শত শত মানুষ ভবনটি ঘেরাও করে। এরপর খবর পেয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ আসে। আসেন সেনাবাহিনী ও র‍্যাব সদস্যরাও। ডাকাতদের সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা তাঁরা কথা বলেন। এরপর তিনজন আত্মসমর্পণ করেন।

নেতৃত্বে সৌদিপ্রবাসী নারীর স্বামী

গ্রেপ্তার তিন ডাকাতের সবাই কদমতলীর খালপাড় এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা হলেন লিয়ন মোল্লা নীরব (২০), আরাফাত (১৬) ও সিফাত (১৬)। নীরবের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানার পারুলিয়া এলাকায়। নাসিমা নামের ৪২ বছরের এক সৌদিপ্রবাসী নারীকে বিয়ে করেছেন বয়সে তরুণ গাড়িচালক নীরব। ওই নারীর বাসা চুনকুটিয়ার পূর্বপাড়ায়। তাঁর ব্যাংক হিসাব রয়েছে ব্যাংকের ওই শাখায়। তাই নীরবের সেখানে অতীতে যাতায়াত ছিল। সঙ্গী কিশোর আরাফাত ও সিফাতের সঙ্গে ফুটবল খেলতে গিয়ে নীরবের সখ্য হয়। তিনি দুই কিশোরকে আইফোন ও মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার টোপ দিয়েছিলেন। চুনকুটিয়ার সিটি ব্যাংকের শাখায়ও ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। তবে সেখানে সব সময় লোকজন থাকায় সেই পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়।

নীরবের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জে মোবাইল ও টাকা চুরির অভিযোগও রয়েছে। বর্তমানে তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন তিনি। দুই কিশোর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা বর্তমানে কারাগারে।

পুলিশ জানিয়েছে, নীরবের স্ত্রী বর্তমানে দেশে রয়েছেন। তিনিসহ বাইরে পাহারা দেওয়া আরও তিনজনকে নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক হিরন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। আমরা আরও কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত