এবারে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির কারণ হতে পারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ১৩ পয়েন্ট। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় এসব পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়তে হয় ঘরমুখো মানুষদের। এবারও সেই আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও পরিবহনচালকেরা। তবে হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় ভোগান্তি এড়াতে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদসহ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
পরিবহনসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অস্থায়ী অবৈধ দোকানপাট, সবজির হাট, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অবৈধ থ্রি-হুইলার চলাচলের কারণে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বাড়তে পারে। এ ছাড়া মহাসড়কের ৬ লেনের নির্মাণকাজের জন্যও এবারের যাত্রায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।
নরসিংদীর ৭ পয়েন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তা
প্রতিবছর ঈদযাত্রায় দেশের অন্যান্য মহাসড়কের তুলনায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী জেলা অংশে ভোগান্তি তুলনামূলক কম হয়। এ বছর সে চিত্র পাল্টে যেতে পারে মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলমান থাকায়। যানজট ও বিকল্প চলাচলের রাস্তা অপ্রশস্ত হওয়ায় রোজার শুরুতেই যানবাহনকে ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে। মহাসড়কের মাধবদী, পাঁচদোনা,
ভেলানগর, ইটাখোলা, মরজাল, বারৈচাসহ ৭ পয়েন্টে যানজট দেখা দিচ্ছে।
যাত্রী ও পরিবহনচালকেরা জানান, জেলার মহাসড়কের ৫২ কিলোমিটার অংশে অস্থায়ী অবৈধ দোকানপাট, সবজির হাট, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অবৈধ থ্রি-হুইলার চলাচলের কারণে সাময়িক যানজটে পড়তে হয়। তবে এবার সেটা আগের তুলনায় বেশি হতে পারে।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান জানান, ঈদযাত্রায় ভোগান্তি এড়াতে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, দোকানপাট উচ্ছেদসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ইটাখোলা ও ভৈরব হাইওয়ে পুলিশ বলছে, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ইটাখোলা হাইওয়ে থানার অধীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে (পুরিন্দা থেকে মরজাল পর্যন্ত) যানজট নিরসন, ডাকাতি ও ছিনতাই রোধকল্পে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়মিত জনবলের সঙ্গে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার যান চলাচল বন্ধের জন্য মাইকিং করাসহ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে অবৈধ কাঁচাবাজার। এ ছাড়া মহাসড়কে চলমান সংস্কার কাজের জন্য মোড়ে মোড়ে যান চলাচলের জন্য তৈরি বিকল্প রাস্তা সংস্কারের জন্য ঠিকাদারদের অনুরোধ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, রাস্তায় যানজট নিরসনের জন্য জেলা পুলিশের পাশাপাশি মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য জেলা পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের সার্বক্ষণিক ৩টি পেট্রল টিম কাজ করছে।
না.গঞ্জের যেসব স্থানে ভোগান্তির শঙ্কা
আসন্ন ঈদযাত্রায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে প্রায় ২২ কিলোমিটারের ৬টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। মহাসড়কের এই অংশে বছরজুড়ে যানজট লেগে থাকলেও ঈদের সময় তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ফলে সাধারণ মানুষকে সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড, তারাবো বিশ্বরোডের গোল চত্বর, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, বরপা, গার্মেন্টসের মোড় ও গাউছিয়া স্ট্যান্ডে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, সড়ক বন্ধ করে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো এবং মহাসড়কের ধীরগতির লেনে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা। এসব কারণে ওই সব পয়েন্টে সৃষ্টি হতে পারে ভয়াবহ যানজটের। এতে যানবাহন চালক ও যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পড়তে হতে পারে।
শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার রুবেল মিয়া বলেন, ‘ঈদ এলে রাস্তায় অনেক গাড়ি বেড়ে যায়, এ গাড়িগুলা যেনে-হেনে যাত্রী ওডানামা করায়। সাইডের রাস্তাগুলা বন্ধ কইরা খাঁড়ায় থাকে। এল্লিগ যানজট বেশি লাগে। গাড়ি যদি ঠিক জায়গায় যাত্রী ওডায় আর নামায়, তাইলে আর এত জ্যাম লাগে না।’
সিদ্ধিরগঞ্জের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নাদিমুল ইসলাম তন্ময় বলেন, সড়কে বাসস্ট্যান্ডের দুই পাশে শত শত অবৈধ দোকান। এই দোকানগুলোকে কেন্দ্র করে এখানে প্রচুর ভিড় সৃষ্টি হয়। এ কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোরশেদ জানান, ‘আমরা ইতিমধ্যে তৎপর হয়েছি। টহল টিম বাড়ানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ অংশে মানুষকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না বলে আশাবাদী। পাশাপাশি সড়কের ওপর যেসব অবৈধ স্থাপন বসানো রয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। সব উচ্ছেদ করা হবে। মহাসড়ক ক্লিয়ার রাখা হবে।’