Homeজাতীয়ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের সাক্ষাৎকার, ‘প্রোপাগান্ডা’ বলছে প্রেস উইং

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের সাক্ষাৎকার, ‘প্রোপাগান্ডা’ বলছে প্রেস উইং


ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে ভারতের গণমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’। ওই সাক্ষাৎকারে কেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, ভবিষ্যতে কী করা উচিত; সেসব বিষয়ে বিস্তারিত মতামত দিয়েছেন তিনি। তবে ‘মিথ্যাচার এবং ভুল তথ্যে পরিপূর্ণ’ সাক্ষাৎকারটিকে ‘সুসংগঠিত প্রোপাগান্ডা’ বলে মনে করছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। 

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে প্রেস উইংয়ের ‘সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেক’ পেজে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্যের বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাদেশের কোনও কর্তৃপক্ষের মন্তব্য চায়নি; যা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের জনগণের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন চালানোর অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত।’

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সুসংগঠিত প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস শুক্রবার কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে; যা আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে। এই নেতারা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী এবং হত্যাকাণ্ড ও গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। তাদের এমন একটি প্রতিবেদন শিরোনাম ছিল, ইন হাইডিং, বাংলাদেশে’স আওয়ামী লীগ টপ ব্র্যাস কানেক্ট উইথ শেখ হাসিনা, ওয়েট ফর ‘রুল অব ল’ টু রিটার্ন। প্রতিবেদনটি মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে পূর্ণ ছিল; যা প্রকাশে সাংবাদিকতার মৌলিক নীতিমালাও অনুসরণ করা হয়নি।

আসাদুজ্জামান খান কামাল তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশে ১০ বছর ৬ মাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম। এই সময়কালে অনেক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছি। এখন সবকিছু ৩৬০ ডিগ্রি উল্টে গেছে। গত বছরের ৩ থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৪৬০টি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়, ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র থানাগুলো থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন থেকে এসএসএফের (ভিভিআইপি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) অস্ত্রও নিয়ে যাওয়া হয়। আমি নিজে ৫ ও ৬ আগস্ট ঢাকায় ছিলাম এবং ৭ আগস্ট বাড়ি থেকে বের হয়েছি’।

তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদে পুলিশ সদর দফতরের তথ্য উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলেছে, থানা থেকে মোট ৫ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট করা হয়েছে এবং এর বেশিরভাগই ৫ আগস্ট লুট করা হয়। তবে এরই মধ্যে লুট হওয়া অস্ত্রের ৪ হাজার ৩৫৮টি উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এছাড়া বাকিগুলো উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলনের সময় মোট ১১৪টি থানায় হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮টি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ৫৬টি থানা ভাঙচুর করা হয়েছে, সব থানাই এখন কার্যকর।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থেকেও কি এই পরিস্থিতি আঁচ করতে পারেননি, এমন প্রশ্নের জবাবে সাক্ষাৎকারে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘যখন থানাগুলো পুড়েছে কার্যত পুলিশ তখন অকার্যকর হয়ে যায়। তখন জাতির কেবল নিঃশব্দে দেখা আর মৃতদেহ গোনা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। পুলিশই নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়। কিন্তু যদি পুলিশই পঙ্গু হয়ে যায়, তখন কী হবে? আমি বলবো, এটি ছিল একটি যৌথ অভ্যুত্থান। এটি ইসলামি উগ্রবাদ এবং সেনাবাহিনীর যৌথ অভ্যুত্থান।’

তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি একমত যে, একটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল, তা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যাই হোক। তবে এটি ছিল একটি সেনা অভ্যুত্থান। সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট আছে, ডিরেক্টর জেনারেল ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই)। তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। এমনকি পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগও প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে কেবল গোয়েন্দা রিপোর্টের সারসংক্ষেপ আসে।’

এই বক্তব্যের বিষয়ে প্রেস উইং তাদের বিবৃতিতে আরও বলেছে, ‘এটি আরও প্রমাণ করে যে, শিশুসহ ১ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা ও প্রায় ২০ হাজার মানুষকে আহত করার জন্য পতিত স্বৈরাচার হাসিনা তার সহযোগী এবং তার দলের এখনও কোনও অনুশোচনা নেই।’

ভারতের কাছ থেকে কী আশা করেন, ভারত কীভাবে সাহায্য করতে পারে; এমন প্রশ্নে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধাদের একজন কমান্ডার ছিলাম, তাই আমি জানি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে ভারত কী করেছে। আমি স্বীকার করি, ভারত সবসময় বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে। এখন ভারত কূটনৈতিকভাবে সাহায্য করতে পারে। আমাদের আদালতগুলো পঙ্গু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে যেতে পারছেন না। সব বিচারক নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই প্রথম কাজ হলো কূটনৈতিক চাপ দেওয়া এবং উচ্চকণ্ঠে দাবি তোলা, যাতে আদালতগুলো আবার কার্যকর হয়। ভারত এতে সাহায্য করতে পারে।’

তার এই চাওয়াকে ‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে স্পষ্ট হুমকি’ মনে করে প্রেস উইং। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাক্ষাৎকারে কামাল বাংলাদেশের আদালতে ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে স্পষ্ট হুমকি এবং হাসিনা ও তার অনুসারীরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে তারই প্রমাণ।’

কামাল সাক্ষাৎকারে আরও দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে প্রায় ২৯০টি হত্যার মামলা রয়েছে। এটি নিশ্চয়ই একটি রেকর্ড, হয়তো আন্তর্জাতিক রেকর্ডও। এরমধ্যে ৫৪টি মামলায়, যারা হত্যার শিকার হওয়ার কথা বলা হয়েছে, তারা জীবিত ফিরে এসেছেন। তবে তার এই দাবি ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে প্রেস উইং বলছে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কোনও সরকারি বা স্বাধীন সূত্র দ্বারা যাচাই করা ছাড়াই এটি প্রকাশ করেছে।

কামালের দাবি, বাংলাদেশের গণমাধ্যম সম্পূর্ণভাবে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের) নিয়ন্ত্রণে। গণমাধ্যম কিছু মন্তব্য করতে পারে না। তারা কোনও কিছুর জন্য আওয়াজ তুলতে পারে না। তারা এখন নীরব। এ বিষয়ে প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি একটি অত্যন্ত ভুল বক্তব্য। কারণ ২০২৪ এর ৮ আগস্টের পর থেকে কোনও স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কোনও সরকারি সংস্থার দ্বারা কোনও বাধার সম্মুখীন হয়নি এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত