বৈষম্যহীন টেকসই অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত সুপারিশগুলোতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য একটি কৌশলগত কাঠামোর রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। জনসেবার অদক্ষতা এবং পরিবেশগত উদ্বেগ বিবেচনায় লক্ষ্যযুক্ত হস্তক্ষেপের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন রয়েছে, যা স্থায়ী পরিবর্তন তৈরি করতে পারে।
এই সুপারিশগুলো অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে ডিজাইন করা হয়েছে, নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে এমন চাপযুক্ত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার সময় একটি স্থিতিস্থাপক ও প্রগতিশীল সমাজের ভিত্তি স্থাপন করে।
পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রতিবেদনে সরকারি হাসপাতাল, গ্রামীণ বিদ্যালয় ও ক্লিনিক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির (বিআরটিএ) সংস্কার, বুড়িগঙ্গা নদীকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং যেকোনও একটি মন্ত্রণালয় সংস্কার কাজ হাতে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি বৈশ্বিক উৎকর্ষ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের পুনর্মূল্যায়ন, সামাজিক ও আচরণগত পরিবর্তন কমিউনিকেশন ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, একটি নিয়ন্ত্রক সংস্কার কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ওভারসাইট কমিটি গঠন করার কথাও বলা হয়েছে।
পাশাপাশি নগর পরিবহনের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালিং বাস্তবায়ন ও একক অপারেটর বাস ফ্র্যাঞ্চাইজিতে রূপান্তর করার কথা সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ম্যানুফেকচারিং, বিনিয়োগ, রফতানি ও এফডিআই বাড়ানোর লক্ষ্যেও নানা সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, টাস্কফোর্সকে তাৎক্ষণিক এবং স্বল্পমেয়াদি, বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপগুলো চিহ্নিত করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। যা এখনই গ্রহণ করা যেতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি বিকল্পগুলো যা জরুরি, টেকসই দীক্ষার দাবি রাখে। এই টাস্কফোর্সের লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য নীতি সুপারিশ তৈরি এবং উন্নয়নের পথ, নীতি ও কর্মসূচি চিহ্নিত করা। যা একটি নতুন, যুব-অনুপ্রাণিত বাংলাদেশ রূপকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
উল্লেখ্য, গত ১০ সেপ্টেম্বর উন্নয়ন কৌশল পুনর্গঠন, আর্থিক ব্যবস্থায় ফাঁকফোকর খুঁজে বের করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য ১২ সদস্যের এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুর্শিদকে। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহাম্মদ। অন্য সদস্যরা হলেন—বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ড. আখতার মাহমুদ, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মুশফিক মোবারক, বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, এমসিসিআই’র সাবেক সভাপতি নাসিম মঞ্জুর, বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মঞ্জুর আহমেদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং বিডি জবস ডটকম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর।