বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একাদশ আসর শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে, তবে বরাবরের মতোই বিতর্ক এবারও পিছু ছাড়েনি। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নানা অনিয়ম, খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক জটিলতা ও অন্যান্য সমালোচনার মুখে পড়ে দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও এ বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে তার আশ্বাস, আগামী বিপিএল থেকে দৃশ্যপট বদলাবে।
শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘দুর্বার রাজশাহী যা করেছে, তাতে একটা টুর্নামেন্ট শেষ করে দেওয়ার জন্য তারাই যথেষ্ট! তবে এবার আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল না। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে করতে টুর্নামেন্ট শেষের দিকে এসেছে। আমি স্বীকার করছি, ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে। তবে এখান থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়াব। আগামী বিপিএলে দেখবেন, সবকিছু বদলে যাবে।’
বিপিএলের সূচি নিয়ে বারবার সমালোচনা হয়েছে। একই সময়ে আইএল টি-টোয়েন্টি ও অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ায় টুর্নামেন্টের গ্ল্যামার কমে গেছে। বিসিবি এবার এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান ফারুক আহমেদ।
‘আমরা বুঝতে পেরেছি, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসলে কার সঙ্গে। আইএল টি-টোয়েন্টির সঙ্গে সূচি না মিলিয়ে নিতে পারলে বিপিএল আরও আকর্ষণীয় হবে। ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির হাতে টুর্নামেন্টের দায়িত্ব দিলে আরও পেশাদারিত্ব আসবে। এমনকি পাঁচ দলের হলেও সেটা যেন লাভজনক হয়, সেজন্য পরিকল্পনা নিয়েছি। হয়তো প্রথম-দ্বিতীয় বছরে পুরোপুরি সফল হবো না, তবে তৃতীয় বছরে আমরা লাভের মুখ দেখব।’
এবারের বিপিএলে অন্যতম বিতর্কিত ইস্যু ছিল দুর্বার রাজশাহীর পারিশ্রমিক পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা। অনেক খেলোয়াড় এখনো বকেয়া টাকা পাননি। বিষয়টি নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
‘রাজশাহীর মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। পারিশ্রমিক দ্রুত পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের এত পরিশ্রমের পরও কিছু দলের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য সত্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে,’ জানান তিনি।
শুধু রাজশাহী নয়, চিটাগং কিংসের স্বত্বাধিকারী সামির কাদের চৌধুরীও বিতর্কে জড়িয়েছেন। পারভেজ ইমনের পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে তার মন্তব্য— ‘টাকা গাছে ধরে না, সে সন্তুষ্ট করতে না পারলে কেন দেব?’— ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ বিষয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার বিষয়। একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে এমন মন্তব্য করার অধিকার কারও নেই। তিনি চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়কে টাকা না দিয়ে এমন কথা বলতে পারেন না। বিসিবিকে বলেছি, এ নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে।’
বিপিএলের নানা বিতর্ক থাকলেও ইতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরতে চান বিসিবি সভাপতি। ‘অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও টুর্নামেন্ট সফলভাবে শেষ হচ্ছে। ৯০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে, যা ১০ কোটি টাকার সমান। দর্শক মাঠে এসেছেন, রানের ফোয়ারা দেখা গেছে, ভালো ক্রিকেট হয়েছে। এই ইতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরতে হবে,’ বলেন তিনি।
বিপিএলের ভাবমূর্তি ফেরাতে আগামী আসরে কাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি পেশাদারিত্ব বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। তবে সত্যিকার অর্থে এই পরিবর্তন কতটা বাস্তবায়ন হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।