বাংলাদেশের ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিম শুধু একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটার নন, বরং কঠোর পরিশ্রম আর নিবেদন দিয়ে নিজের অবস্থান গড়ে তুলেছেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির পর এবার ওয়ানডে ক্রিকেট থেকেও বিদায় নিয়েছেন এই অভিজ্ঞ উইকেটকিপার-ব্যাটার। বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ৩৭ বছর বয়সী মুশফিক। তার এই সিদ্ধান্তের পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন তার স্ত্রী জান্নাতুল কিফায়াত মন্ডি।
বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পোস্টে মন্ডি লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ওয়ানডে থেকে তোমার অবসরে আমি গর্বিত এবং তৃপ্ত, প্রিয়তম! তোমার অসাধারণ এক ওয়ানডে ক্যারিয়ার ছিল।’
স্বামীকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরও লেখেন, ‘নিজের প্রতি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখেছি। ভাঙা পাঁজর নিয়ে খেলেছো, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে একসঙ্গে ২০টা পেইনকিলার খেয়েছো! তুমি কখনো নিজের জন্য খেলোনি, বরং দেশ ও দলের জন্য খেলেছো। এমন একজন সৎ মানুষকে জীবনে পাওয়া সত্যিই আশীর্বাদ, যে অজু ছাড়া কখনো ব্যাট ও বল স্পর্শ করত না।’
নিজের স্বামীর প্রতি সম্মান জানিয়ে মন্ডি বলেন, ‘তুমি একজন পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ। আমাদের সন্তানরা তোমাকে ভালোবাসে। আমি চাই, আমাদের ছেলে শাহরোজ তোমার সব ভালো গুণ অর্জন করুক এবং তোমাকেই জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করুক।’
মুশফিকের অবসরের পরবর্তী অধ্যায় নিয়েও কথা বলেন তিনি। লিখেছেন, ‘আমি জানি, এটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। ইনশাআল্লাহ, তোমার জন্য নতুন এক উজ্জ্বল অধ্যায় অপেক্ষা করছে! আমাদের জন্য তুমি যা করেছ, তাতেই আমরা পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত।’
সমালোচকদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে মন্ডি আরও যোগ করেন, ‘পৃথিবী যত খুশি নেতিবাচক কথা বলুক, কিন্তু দয়া করে এমন পর্যায়ে সমালোচনা করবেন না, যাতে কেউ কষ্ট পেয়ে আপনাদের জন্য প্রার্থনায় বসে কাঁদতে বাধ্য হয়। আমরাও মানুষ।’
চোট কাটিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মাধ্যমে দলে ফিরেছিলেন মুশফিক। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই গোল্ডেন ডাকের শিকার হন, এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেন মাত্র ২ রান। ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তবে নিজের অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই আলোচনা আর দীর্ঘায়িত হতে দিলেন না এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।
২০০৬ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশকে অনেক জয়ের স্বাদ দিয়েছেন মুশফিক। ২৭৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৭৭৯৫ রান করেছেন, যেখানে ৯টি সেঞ্চুরি ও ৪৯টি ফিফটি রয়েছে। তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস ১৪৪ রান। ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার ক্ষমতা তাকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটারদের কাতারে নিয়ে গেছে।