Homeঅর্থনীতি১২ হাজার কোটি রুপি কর ফাঁকির অভিযোগ, উল্টো ভারতের বিরুদ্ধে ভক্সওয়াগনের মামলা

১২ হাজার কোটি রুপি কর ফাঁকির অভিযোগ, উল্টো ভারতের বিরুদ্ধে ভক্সওয়াগনের মামলা


ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ভক্সওয়াগন, অডি, স্কোডা, পোরশে ও ল্যাম্বরগিনির মতো ব্র্যান্ডগুলোর মূল প্রতিষ্ঠান ভক্সওয়াগন গ্রুপের বিরুদ্ধে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১১ হাজার ৮৬৫ কোটি রুপির কর ফাঁকির অভিযোগ তুলেছিল। তবে সেই দাবি ‘অসম্ভব বিশাল’ অঙ্ক উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছে ভক্সওয়াগন। আদালতের নথিপত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভক্সওয়াগন ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি ডলারের ‘অসম্ভব বিশাল’ কর দাবির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কোম্পানিটি বলেছে যে, এই দাবি ভারতের গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানির কর সংক্রান্ত নিয়মের পরিপন্থী এবং এটি কোম্পানির ব্যবসায়িক পরিকল্পনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

ভক্সওয়াগনের ভারতীয় ইউনিট স্কোডা অটো ভক্সওয়াগন ইন্ডিয়া মুম্বাই হাইকোর্টকে জানিয়েছে, এই কর বিরোধ ভারতে তাদের দেড় শ কোটি ডলারের বিনিয়োগকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে এবং এটি বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। ১০৫ পৃষ্ঠার মামলার নথিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আমদানি কর দাবি এটি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভক্সওয়াগনের বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি ডলারের কর পরিশোধের নোটিশ জারি করে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এই কারসাজির সঙ্গে যুক্ত গাড়ির মডেলগুলো হলো অডির এ৪, এ৬ সেডান এবং কিউ ৫, কিউ ৭ এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল), স্কোডার অক্টাভিয়া ও সুপারব সেডান এবং কোডিয়াক এসইউভি এবং ভক্সওয়াগনের টিগুয়ান এসইউভি।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিস্তারিত তদন্তের পর তারা দেখতে পেয়েছে যে, ভক্সওয়াগন ইচ্ছাকৃতভাবে এবং ‘জ্ঞাতসারে’ তাদের আমদানি এমনভাবে নথিবদ্ধ করেছে, যাতে তারা বেশি করের স্তর এড়াতে পারে। কিছু উপকরণকে কম করের ক্যাটাগরিতে ফেলে আমদানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ভক্সওয়াগন অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে তারা সব স্থানীয় আইন মেনে চলে এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।

ভারতে স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহিত করতে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়। এসব যন্ত্রাংশগুলো আলাদা আলাদা আকারে আমদানি করা হয় এবং ভারতে বিভিন্ন উৎপাদন প্ল্যান্টে এগুলো একত্রিত করে গাড়ি বানানো হয়।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, ভক্সওয়াগন ‘প্রায় পুরো গাড়িটিই’ অসম্পূর্ণ অবস্থায় আমদানি করেছে। এই অবস্থায় গাড়িগুলোর যন্ত্রাংশের ওপর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ সম্ভব। কিন্তু ভক্সওয়াগন গাড়িগুলো ‘আলাদা যন্ত্রাংশ’ হিসেবে ভুলভাবে নথিবদ্ধ করে আলাদা চালানে আমদানি করে মাত্র ৫-১৫ শতাংশ শুল্ক প্রদান করেছে।

ভক্সওয়াগন ভারতীয় আদালতে জানিয়েছে, তারা ভারত সরকারের কাছে তাদের কোন কোন মডেলের গাড়ির যন্ত্রাংশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে আমদানি করা হবে তার বিষয়ে অবহিত করেছিল এবং ২০১১ সালে সরকারের কাছ থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা ও অনুমোদনও পেয়েছিল।

কর নোটিশ সম্পর্কে আদালতে দায়ের করা ২৯ জানুয়ারির নথিতে বলা হয়েছে, ‘এটি সরকারের পূর্বঘোষিত অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রশাসনের কার্যক্রম ও প্রতিশ্রুতির প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস থাকা উচিত, সেটিকেই হুমকির মুখে ফেলে।’ ভক্সওয়াগন ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করছে এবং ‘আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সকল আইন পুরোপুরি মেনে চলতে’ সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ভারতের বাজারে প্রতি বছর ৪০ লাখ গাড়ি বিক্রি হয়। এই বাজারে ভক্সওয়াগনের অংশীদার খুব সামান্যই। কোম্পানিটির প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড অডিও প্রতিদ্বন্দ্বী মার্সিডিজ এবং বিএমডব্লিউ-এর তুলনায় পিছিয়ে আছে ভারতের বাজারে।

একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এই মামলায় হেরে গেলে জরিমানাসহ ভক্সওয়াগেন ইন্ডিয়াকে ২৮০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হতে পারে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভক্সওয়াগন ইন্ডিয়া ২১৯ কোটি ডলারের গাড়ি বিক্রি করেছিল এবং ১ কোটি ১০ লাখ ডলার মুনাফা অর্জন করেছে।

উল্লেখ্য, ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাই হাইকোর্টে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মামলাটির শুনানি শুরু হবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত