কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে এখন শুধুই ‘হলুদ সোনা’—ভুট্টার রঙে রাঙা চারপাশ। জমি থেকে ভুট্টা তুলতে তুলতেই উঠানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে সোনালি রঙের ফসল। কারও উঠানে চলছে মাড়াই, কেউ শুকাচ্ছেন ভুট্টা, আবার কেউ ব্যস্ত সঞ্চয়ের প্রস্তুতিতে। স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার এই আনন্দঘন সময়েও কৃষকের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ—কারণ একটাই, দাম নেই।
কয়েক বছর ধরে ধান চাষের পাশাপাশি হাওরাঞ্চলে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। কারণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কম, খরচও তুলনামূলকভাবে কম, আর লাভ বেশি। ধান যেখানে নানা রোগবালাই ও অতিবৃষ্টির ঝুঁকিতে পড়ে, সেখানে ভুট্টা বেশ সহনশীল ও দ্রুত ফলনশীল।
চলতি মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে কিশোরগঞ্জের তিনটি উপজেলায় বাম্পার ফলন হয়েছে। মোট ৪ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টগ্রামে ৯৮০ হেক্টর, ইটনায় ৭২৫ ও মিঠামইনে ২ হাজার ৮৮৫ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার ৪৯০ থেকে ৫২ হাজার ৭৮৫ টন। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ১১ থেকে সাড়ে ১১ টন, যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
মাঠের চিত্র বলছে, এবার ভুট্টার গাছগুলো ছিল মজবুত, কাণ্ড মোটা আর শিষে ভরা দানায়। ফসল দেখে খুশি কৃষক, কিন্তু বাজারে গিয়ে সেই হাসি মিলিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে প্রতি মণ ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা দরে, যা প্রায় উৎপাদন খরচের সমান। অথচ গত বছর এ দাম ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা।
কৃষকের দাবি, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র কৌশল করে ভুট্টার দাম কমিয়ে কৃষকের ক্ষতি করছে। কৃষক ধারদেনা পরিশোধে কম দামে ভুট্টা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয়ের মতো ভুট্টা ক্রয়ের দাবি জানান তাঁরা।
অষ্টগ্রামের কলমা ইউনিয়নের কৃষক হরিমোহন দাস বলেন, ‘বাম্পার ফলন হয়েছে, খরচও কম ছিল না। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখি দাম নেই। সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে দিচ্ছেন। আমরা বাধ্য হয়ে বিক্রি করি। পরে তাঁরা মজুত রেখে বেশি দামে বিক্রি করেন।’
মিঠামইন উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহিষারকান্দির কৃষক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারা বছর হাড়ভাঙা খাটুনি, কিন্তু লাভ কিছুই নেই। সরকার যদি সরাসরি ভুট্টা কিনত, আমাদের কষ্টের দামটা অন্তত পাওয়া যেত।’
মিঠামইন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল ইসলাম খান অপু বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন খুব ভালো হয়েছে। প্রায় শতভাগ ভুট্টা মাড়াই শেষ। তবে বাজারে দাম কম থাকায় কৃষক কিছুটা হতাশ।