ভোলায় উত্তোলন করা গ্যাস সিএনজির বদলে এলএনজিতে রূপান্তর করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। ভোলার সঙ্গে সরাসরি কোনও পাইপ লাইন না থাকায় এই গ্যাস বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে যোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ভোলার চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত গ্যাস থাকলেও তা কোনও কাজে আসছে না। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ভোলা থেকে সিএনজির বদলে এলএনজি করে গ্যাস আনার পরিকল্পনা করছি। এই গ্যাস আশুগঞ্জ দিয়ে জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হবে।’
অপর একটি সূত্র জানায়, সাবেক সরকারের সময় সিএনজির বদলে ভোলা থেকে এলএনজি করে গ্যাস আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে ওই সরকার এলএনজি করে গ্যাস আনাকে লাভজনক বিবেচনা করেনি। এর পরিবর্তে অনুগত একটি কোম্পানিকে সিএনজি করে সীমিত পরিসরে গ্যাস আনার অনুমতি দেয়। দরপত্রহীন সেই প্রক্রিয়া নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে।
ভোলায় রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম গত কয়েক বছরে তিনটি কূপ খনন করেছে। এর আগেও বাপেক্স ভোলায় গ্যাস আবিষ্কারের পর কূপ খনন করেছে। ফলে ভোলার চাহিদা পূরণ করে সেখানকার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যেতে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই গ্যাস রাতারাতি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে হলে একটি সমীক্ষা করা জরুরি।
কেননা, বড় আকারের এলএনজি জাহাজের পরিবর্তে এখানে ছোট আকারের এলএনজি জাহাজ আনতে হবে। একইসঙ্গে ভোলায় গ্যাসকে এলএনজিতে রূপান্তরের জন্য প্ল্যান্ট বসাতে হবে। আবার আশুগঞ্জেও এলএনজিকে রিগ্যাসিফিকেশনের জন্য পৃথক ইউনিট বসাতে হবে।
এর আগে বাপেক্সের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল— ভোলায় ৫ দশমিক ১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুত রয়েছে। এর মধ্যে শাহবাজপুর এবং ইলিশায় ২ দশমিক ৪২৩ টিসিএফ এবং চর ফ্যাশনে ২ দশমিক ৬৮৬ টিসিএফ মজুত গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এর বাজার মূল্য সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা।
গ্যাস উত্তোলনের হিসাবে এক টিসিএফ গ্যাস দিয়ে এক বছরের চাহিদা পূরণ সম্ভব।
দেশের স্থলভাগে ভোলা ছাড়া আরও কোথাও বড় কোনও মজুত পাওয়া যাচ্ছে না। সিলেট অঞ্চলের গ্যাসও ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। অপরদিকে সাগরে তেল-গ্যাস উত্তোলনের আশাও আপাতত ছাড়তে হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সব শেষ বিডিং রাউন্ডে কোনও দেশই অংশ নেয়নি। এতে আবার বিডিং রাউন্ড করে কোনও কোম্পানিকে কাজ দিতে অন্তত দুই বছরের বেশি সময় প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, এখন দেশে প্রতিদিন ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ৭৫০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করা হয়। বাকিটা সরবরাহ করা হয় দেশের খনি থেকে।