পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে অবরুদ্ধ করে রাখা, হেনস্তা ও ভাঙচুরের ঘটনার মামলায় আসামি ১৬ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করতে অভিযানে নেমেছে শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ। তবে তাদের কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।
আজ শনিবার শেরেবাংলা নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম আজম আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ১৬ কর্মকর্তা সরকারি চাকরিজীবী হলেও তারা আমলযোগ্য অপরাধ করেছেন। মামলার পর চলমান তদন্ত কার্যক্রমে সত্যতা মিলেছে। এখন তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। যেখানেই তাদের পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
ওসি আরও বলেন, ‘ওই ঘটনার পর শুক্র ও শনিবার দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কেউ অফিসে আসেননি। আগামীকাল অফিস খোলা থাকবে। কাজেই অফিসের সামনে পুলিশের টিম থাকবে, যারা আসামিদের গ্রেপ্তার করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
মামলার আসামিরা হলেন—বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, রেজাউল করিম, পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লা, অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম, যুগ্ম পরিচালক রাশেদুল ইসলাম, উপপরিচালক বনী ইয়ামিন, আল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জনি হোসেন, রায়হান কবীর, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল বাতেন, লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ।
পুঁজিবাজারের ১২টি কোম্পানির বিভিন্ন অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন বিএসইসির কমিশন। ইতিমধ্যে সাতটি কোম্পানির বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। এসব তদন্ত প্রতিবেদনে বিএসইসির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ না করলেও এর ভিত্তিতে দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ জন কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে। এ ছাড়াও গত মঙ্গলবার বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
আলোচনা রয়েছে, আগামী আরও অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এসব নিয়ে বিএসইসির কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। পরে সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পরেই বিএসইসির কর্মকর্তারা এককাট্টা হয়ে পদত্যাগের দাবিতে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে গত বুধবার চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনী তাঁদেরকে উদ্ধার করে।
ওই দিন বিকেলেই সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারম্যান কমিশনার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁদের অভিযোগ-কমিশনের কর্মকর্তারা অযোগ্য, তাঁরা বিএসইসির কর্মকর্তাদের কোনো কাজে সহযোগিতা করেন না। এরপর ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার কর্মবিরতিও পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ওই দিন বিকেল ৩টার পরে সেনাবাহিনী পাহারায় বিএসইসিতে এসে চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা জানান, কোনো অন্যায়ের কাছে তাঁরা মাথা নত করবেন না। সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করে যেতে বলা হয়েছে।
একই দিনে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে রাখা, শারীরিকভাবে হেনস্তা ও ভাঙচুর করার অভিযোগে বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিএসইসি চেয়ারম্যানের গানম্যান মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে শেরে বাংলা নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এ দিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে এ ঘটনায় দোষী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ শনিবার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদলিপিতে এ দাবি জানানো হয়। এতে সই করেছেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব মো. নজরুল ইসলাম এবং মহাসচিব ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
সংগঠনটির প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, গত বুধবার বিএসইসির কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারী সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে তাঁদেরকে বিএসইসি ভবনের চতুর্থ তলায় ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাঁদেরকে উদ্ধার করেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, সরকারি কর্মচারীদের এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ প্রচলিত আইনবিরোধী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকারি কর্মচারীদের যেকোনো যৌক্তিক দাবি ও অভিযোগ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকারের প্রতি অনুগত থেকে পেশ করা উচিত। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা না গেলে রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
সংগঠনটি বলছে, এমতাবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য আচরণবিধিকে অমান্য করে সন্ত্রাসী কায়দায় সরকারি ভবন ও কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ ও আক্রমণ করায় সরকারের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।