পাঁচ বছরের সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছে আমজনতার দল। তবে উচ্চকক্ষে অনির্বাচিত প্রতিনিধি রাখার যে সুযোগের কথা বলা হচ্ছে, তার তীব্র বিরোধিতা করেছে এই দলটি। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে আমজনতার দল। তবে এই কাউন্সিলের বিস্তারিত রূপরেখা নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন বলে মনে করে দলটি। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন দলের নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে আমজনতার দলের পক্ষ থেকে এই অবস্থান জানানো হয়।
দলটির আহ্বায়ক মিয়া মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে সদস্যসচিব তারেক রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, কার্যকরী সদস্য সাধনা মহল ও তামান্না শিখাসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সংলাপ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আমজনতার দলের নেতাদের পৌঁছাতে ১৫ মিনিট বিলম্ব হয়। বৈঠকটি বেলা ১টার কয়েক মিনিট আগে শেষ হয়। বৈঠকের প্রায় ২০ মিনিট পরে যোগ দেন দলের সদস্যসচিব তারেক রহমান।
আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মোট ১৬টি দলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন করেছে। আমজনতার দল ছাড়া বাকি দলগুলো নির্ধারিত সময়ে বৈঠক শুরু করেছিল।
সংলাপ শেষে তারেক রহমান জানান, আমজনতার দল পাঁচ বছরের সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষে অনির্বাচিত প্রতিনিধি রাখার যে সুযোগের কথা বলা হচ্ছে, তার তীব্র বিরোধিতা করে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রতিনিধিকেই সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। উচ্চকক্ষে মনোনয়ন পদ্ধতি (রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক) প্রচুর অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ এবং কেনাবেচার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে তিনি মনে করেন। তাই তাঁরা সরাসরি ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পক্ষে মত দেন।
ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং ভারসাম্য রক্ষার জন্য দলীয় প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি হওয়া উচিত বলেও মনে করে আমজনতার দল।
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) ধারণাটি দেশে নতুন হলেও এর প্রতি সমর্থন রয়েছে আমজনতার দলের। দলটির কার্যনির্বাহী সদস্য সাধনা মহল বলেন, এনসিসি আরও আলোচনা দাবি করে। তবে নীতিগতভাবে এর সঙ্গে দ্বিমত করার কোনো কারণ নেই। তারা সংসদ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ জবাবদিহির জায়গায় নিয়ে যেতে চান এবং এ ক্ষেত্রে এনসিসির মতো স্থায়ী কাউন্সিল দরকার হলে তাতে তাঁরা একমত। তবে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যার ব্যাপার আছে উল্লেখ করে তিনি এই আলোচনাটাকে ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক ‘পাবলিক’ বা উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করার অনুরোধ জানান।
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে মত দিয়েছে আমজনতার দল। এ ক্ষেত্রে দুবারের পরে অবশ্যই একবার বিরতি দিতে হবে।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের শাসন কাঠামোয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে ঘাটতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ছিল, যে কারণেই একটি ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হলো সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি সর্বজনগ্রহণযোগ্য জাতীয় সনদ তৈরি করা, যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পথরেখা তৈরি করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ১৬ বছর ধরে দেশের সর্বস্তরের মানুষ যে ফ্যাসিবাদের নিপীড়ন সহ্য করেছে, তা যেন আর ফিরে না আসে। তিনি বলেন, এখন নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময় এসেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের অব্যাহত আলোচনা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।