Homeপ্রবাসের খবরব্রিটেনের রাজা-রানির কাছ থেকে ৫ বার চিঠি পেয়েছেন এই বাংলাদেশি

ব্রিটেনের রাজা-রানির কাছ থেকে ৫ বার চিঠি পেয়েছেন এই বাংলাদেশি


ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি রাজশাসক প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে ৫ বার প্রশংসাস্বরূপ চিঠি পেয়েছেন বাংলাদেশি সমাজসেবক ও মানবাধিকারকর্মী খসরুজ্জামান খসরু। তিনি ব্রিটিশ বাংলা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট নামক একটি সামাজিক সংগঠনের চেয়ারম্যান।

এই সংগঠনের মাধ্যমে ব্রিটেন ও বাংলাদেশসহ পৃথিবীর দরিদ্র দেশগুলোতে সামাজিক কাজ করায় প্রয়াত রানি ও বর্তমান রাজা সন্তুষ্ট হয়ে বিভিন্ন সময় তার সংগঠনের প্রশংসা করে এই চিঠিগুলো দিয়েছিলেন। খসরুজ্জামানের পৌত্রিক বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে।

জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে ব্রিটিশ বাংলা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট নামে সংগঠনটি ব্রিটেনে কাজ শুরু করে। ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর সংগঠনটি ট্রাস্ট হিসেবে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে নিবন্ধন পায়। ব্রিটিশ ও বাংলাদেশের আত্মমানবতার সেবায় কাজ করার জন্য ব্রিটেনের নর্থহামটন থেকে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি পরবর্তীতে ইউরোপ আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেয়।

করোনা মহামারির সময়ও যখন ব্রিটেনজুড়ে মৃত্যুর মিছিল চলছিল ঠিক তখনও মানুষের ধারে ধরে খাবারসহ সুরক্ষাসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছিল ব্রিটিশ বাংলা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। এ ছাড়া বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন সময় বন্যা ও দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল সংগঠনটি। পাশাপাশি অগণিত মেধাবি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসহায়তা দিয়ে আসছে। বর্তমানে ব্রিটেনের আদলে সিলেটের চাতলীবন্ধ ১নং এয়ারপোর্ট বাইপাস রোড এলাকায় ৫০০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড ব্যয়ে অত্যাধুনিক একটি ‘প্যারেন্ট হাউস’ বা বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান খসরুজ্জামান খসরু।

শুধু তাই নয়, পূর্ব লন্ডনের স্টার্টপোর্ট এলাকায় একটি চ্যারিটি শপও রয়েছে এই সংগঠনের। শপটিতে দরিদ্র মানুষের জন্য নামমাত্র মূল্যে সব ধরনের জিনিসপত্র রয়েছে, যা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ দান করে থাকেন। এই মালামাল বিক্রি করে পাওয়া অর্থ ফের সামাজিক কাজে ব্যয় করা হয়। এই শপে সবাই স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে থাকেন। এ জন্য কাউকে বেতন বা অর্থ পরিশোধ করতে হয় না। দোকানটিতে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।

সম্প্রতি লন্ডনে সফরে এসে এই শপটি পরিদর্শন করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সংগঠনের কার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হন। পরে সস্ত্রীক এর লাইফ মেম্বার হন তারা।

পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিবছর লন্ডনের মেয়রের উদ্যোগে শহরজুড়ে লাইটিং করা হয়। এ জন্য শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি সামাজিক সংগঠনকে লন্ডন মেয়রের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মেয়র সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে এই লাইটিং কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এ বছর ব্রিটিশ বাংলা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সিইও নাবিলা জামানকে সঙ্গে নিয়েই ‘রমাদান লাইটিং অন’ করেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান।

ব্রিটেনে এই বাংলাদেশি সংগঠনের সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের চেয়ারম্যান খসরুজ্জামান খসরু বলেন, আমরা প্রথমে ব্রিটেন ও বাংলাদেশ নিয়ে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে পৃথিবীর অন্য দেশেও কাজ শুরু করি। বিশেষ করে করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন সময় দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করার কারণে এ পর্যন্ত ব্রিটেনের রাজার কাছ থেকে প্রশংসাপত্র পেয়েছি। রাজপরিবার আমাদের ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দেখে আমাদের চিঠিগুলো দিয়েছেন। এটা একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের জন্য গর্ব।

আমরা চাই বিশ্বব্যাপী আমাদের কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিতে। এরই মধ্যে আফ্রিকার দেশ ইথোওপিয়া ও ঘানার মুসলমানদের মাঝে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করেছি। বিভিন্ন সময় ওই দেশে আমাদের কর্মকাণ্ড চলে। তাছাড়া গত কয়েক বছর বাংলাদেশের সিলেটের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ বন্যার সময় আমরা তহবিল নিয়ে সেখানে হাজির হয়েছি। বহু মানুষের ঘরবাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। বর্তমানে সিলেটে ব্রিটেনের আদলে অত্যাধুনিক একটি ‘প্যারেন্টস কেয়ার’ হাইজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে ব্যয় হবে প্রায় ৫০০ হাজার পাউন্ড। এরই মধ্যে ১০০ হাজারের বেশি অর্থ সংগ্রহ হয়েছে। ২০০ হাজারের মতো কমিটমেন্ট এসেছে।

তিনি আরও জানান, ব্রিটেনে যেভাবে বৃদ্ধ বাবা-মাকে সেবা করা হয় ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশে অসহায় বাবা-মার পাশে দাড়াতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেবার মাধ্যমে সেই সব অসহায় বাবা-মায়ের বৃদ্ধ বয়সের সময়গুলোকে আরও নিরাপদ করতে আমাদের সংগঠন কাজ করছে। আমরা এরই মধ্যে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। সিলেটে এমন প্রজেক্টের কথা শুনে ব্রিটেন প্রবাসী অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। যার প্রশংসাস্বরূপ প্রয়াত রানি ও বর্তমান রাজার কাছ থেকে এ পর্যন্ত ৫ বার চিঠি পেয়েছি।

ব্রিটিশ বাংলা ওয়েলফেয়ারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ব্রিটেনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফর রহমান বলেন, এই সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেন ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের দরিদ্র মানুষের মাঝে কাজ করে যাচ্ছে। যার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রাজার কাছ থেকেও প্রশংসাপত্র পেয়েছে। অপরদিকে একজন মানুষের সবচেয়ে বেশি সেবার প্রয়োজন হয় বৃদ্ধ বয়সে। ব্রিটিশ বাংলা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট সেই কাজটি করার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা এই সংগঠনের সব কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ। এটি একটি বিশাল মহৎ কাজ।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত