Homeপ্রবাসের খবরবৈশ্বিক অর্থনীতি এখন যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন

বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন


বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতি নানা সংকট এবং চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে চলছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো শুধু এককভাবে কোনো অঞ্চলের নয়, বরং পুরো পৃথিবীজুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য, এবং সামাজিক সুরক্ষায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

বিশেষ করে ২০২৪ সালের দিকে এই চ্যালেঞ্জগুলো আরও প্রকট হয়েছে। যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করেছে। এর মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, জ্বালানি সংকটময়সহ আরও নানা কারণ।

মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের হার বৃদ্ধি: আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের জন্য গত কয়েক বছরে বিভিন্ন দেশ উচ্চ সুদের হার এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু অনেক দেশই মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং অন্যান্য উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়িয়েছে। যার ফলে ঋণ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়েছে এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগ কমেছে এবং দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়েছে।

সরবরাহ শৃঙ্খল সংকট: বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাসের ২০২০-২২ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির পর বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে যে বিশাল ব্যাঘাত ঘটেছিল, তা পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি। যদিও কিছু ক্ষেত্রে পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে, তবুও নানা কারণ—যেমন, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক সংকট, পরিবহন সমস্যা, এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়া—এগুলি সরবরাহ শৃঙ্খলের টানাপোড়েন অব্যাহত রেখেছে। ফলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সময়মতো পণ্য সরবরাহের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা দিচ্ছে।

ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীন-তাইওয়ান সংকটসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। যুদ্ধের কারণে তেলের দাম এবং কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করেছে। এ ধরনের অস্থিরতা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত সংকট: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা বেড়েছে—যেমন বন্যা, খরা, দাবানল, এবং টাইফুন। এসব দুর্যোগ শুধু পরিবেশকে নয়, অর্থনীতিকেও বিপর্যস্ত করছে। পাশাপাশি, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য বিদ্যমান অর্থনৈতিক খাতে পরিবর্তন আনতে চাপ বেড়েছে। দেশের সরকারগুলোর জন্য সবুজ অর্থনীতি এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির দিকে সরে যাওয়ার জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে, যা অনেক দেশ এখনও সক্ষম হয়নি।

ঋণের উচ্চপরিমাণ: বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ডেবট ডাটাবেজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর ঋণের পরিমাণ ২০২৪ সালের দিকে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোভিড-১৯ মহামারির পর সরকারগুলো অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বিশাল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, যা এখন শোধের চাপ তৈরি করছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষ করে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ঋণের কারণে এক ধরনের সংকটে পড়েছে। ঋণদাতারা চাপ সৃষ্টি করছে, এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তারা সহজে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না।

প্রযুক্তিগত বিপ্লব ও তার প্রভাব: বর্তমান সময়ের প্রযুক্তিগত বিপ্লব, বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), স্বয়ংক্রিয়করণ, এবং ডিজিটালাইজেশনের ফলে চাকরি হারানো এবং আয় বৈষম্য বাড়ছে। এসব প্রযুক্তির উন্নয়ন কর্মসংস্থান সংকট সৃষ্টি করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ প্রয়োজন। একই সঙ্গে, উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকায় তারা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।

বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট: বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বৃদ্ধি একটি বড় অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক দেশ জ্বালানির সরবরাহ চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে জ্বালানি খরচ বাড়ছে। ফলে অন্যান্য খাতে প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে উৎপাদন খাতে, যেখানে খরচের চাপ পড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংকট: কোভিড-১৯ মহামারির পরবর্তী বিশ্বে স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। নতুন ধরনের ভাইরাস বা অন্য কোনো মহামারি অর্থনীতিকে আরও বিপর্যস্ত করতে পারে। এছাড়া, গ্লোবাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা সীমিত, যার ফলে ভবিষ্যতে নতুন সংকটগুলো দ্রুত মোকাবিলা করা কঠিন হবে বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সংশ্লিষ্টরা।

২০২৪ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, শক্তিশালী অর্থনৈতিক নীতি, এবং স্থিতিশীল পরিবেশ প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটগুলি যদি দ্রুত সমাধান না করা যায়, তবে তা দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত