Homeপ্রবাসের খবরঘুস প্রথার কারণে ব্যবসায়ীরা কর দিতে আগ্রহী হন না

ঘুস প্রথার কারণে ব্যবসায়ীরা কর দিতে আগ্রহী হন না


দেশে কর ফাঁকির সংস্কৃতির কারণে কর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হচ্ছে বলে মনে করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। ঘুস প্রথা চলমান থাকায় কর কমালেও ব্যবসায়ীরা কর দিতে আগ্রহী হন না বলেও অভিমত তার। 

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার নিয়ে আইসিএবি-ইআরএফ গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শুভাশীষ বোসের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন এনবিআর সংস্কারে পরামর্শক কমিটির সদস্য ও সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ, আরেক সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ ও আইসিএবি সভাপতি মারিয়া হাওলাদার প্রমুখ। 

এনবিআর সংস্কার কমিটির উদ্দেশে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, এনবিআরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে হবে। এ বিষয়ে আপনাদের প্রস্তাব দিতে হবে। আমরা যে ইএফডি আনতে পারিনি। এটার জন্য কাকে দায়বদ্ধ করে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এখানে কেউ না কেউ তো দায়বদ্ধ। চার্টাড অ্যাকাউন্টেট ভুল অডিট করলেও তাদেরও দায় নিতে হবে। এটা মানতে হবে, আমাদের দেশে ঠিকমত কর আদায় হয় না, কারণ কর ফাঁকি হয়। এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে।

তিনি বলেন, একটা ঘুস প্রথা আছে, যার মাধ্যমে মেইনটেইন করা হয়। কর কমালেও কর ফাঁকি কমবে না। ভ্যাটর হার ১৫ থেকে ১০ শতাংশ করলেও সবাই দেবে না। ১০ এর নিচে হলেও উনারা (ব্যবসায়ীরা) দেবেন না। সেখানে স্বচ্ছতা আনতে হবে। নাগরিকদের দায়বদ্ধতার মধ্যে আনতে হবে। 

এখনো করপোরেট ট্যাক্স ফাইলিং আধুনিকায়ণ হয়নি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ডিভিএসের সঙ্গে মিলিয়ে এটি করা যেতে পারে। নিজেদের মধ্যে ও তথ্যে আদান-প্রদানে সমন্বয় নেই। বাড়ি ও সম্পদের মালিক কী পরিমাণ কর দিচ্ছে তা বের করার কোনো উপায় নেই। এই সংস্কারগুলো প্রয়োজন। এ তথ্যগুলো বের করা খুব বেশি কঠিন না।

‘তথ্যের ডিজিটাইজেশন আপনারা আনেন। কী প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ১০০টি পণ্যের দাম বাড়ানো হলো তা আমরা জানতে পারিনি। হয়তো নীতিনির্ধারকদের কাছে এই বার্তা ছিল যে, এর ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে না। সেটি জনগণের কাছে পরিষ্কার করতে হবে। এনবিআরের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া খুবই কঠিন।’ 

যদিও অর্থনীতিবিদ ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজের মতে, সংগৃহীত রাজস্ব ব্যবহারের পরিকল্পনা ও আর্থিক শৃঙ্খলা ঠিক না হলে এনবিআররের সংস্কার কাজে আসবে না।

তিনি বলেন, গত দেড় দশকে প্রকল্পের পেছনে ঘুরে বৈদেশিক ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে। আগামীর সরকারও যদি প্রকল্পমুখী হয় তাহলে অর্থ জোগাতে এনবিআররের ওপর চাপ আসবে। তখন এনবিআরকে কর বাড়াতে হবে। ফিসক্যাল ডিসিপ্লিন ঠিক না হলে এনবিআরের ওপর চাপ কমবে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বে যারা আসবেন তাদের ঠিক করতে হবে যে, আমি ঋণ করে ঘি খাবো কি না। অতিরিক্ত কর আদায়ও ঋণ করে ঘি খাওয়ার মত। এটি ঠিক না হলে সংস্কার বাস্তবায়ন হবে না।    

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, কর আদায় হলেও তার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। রাজস্ব আদায়ে নানা সমস্যা আছে। এনবিআরের কর কর্মকর্তাদের বিবেচনামূলক দায়িত্ব, যৌক্তিক হারে কর আদায় ঠিক করতে হবে। ১৫ শতাংশের জায়গায় ১০ শতাংশ দিলেও কর দিতে চায় না। আরজিএসসি রেজিস্ট্রার্ড কোম্পানির ক্ষেত্রে মোট কর ৪৫-৪৬ শতাংশের কম কোথাও নেই। একজন বললো তাতে ৮৩ শতাংশ কর দিতে হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকায় ৮৩ টাকা দিতে হয়। এগুলো ঠিক করতে হবে।

তিনি বলেন, এই সংস্কার কমিটি হয়তো ভালো কিছু সংস্কার করবে। কিন্তু কেন কর বাড়াতে চাচ্ছি, কত বাড়াতে চাচ্ছি, কোন সময়ের মধ্যে চাচ্ছি। অর্থাৎ ব্যবহারের জায়গা যদি ঠিক না হয়; তাহলে সংস্কার যা হবে এক বছরের মধ্যে সেগুলো ভেঙে পড়বে।

এনবিআরের সংস্কার সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার ওপর নির্ভরশীল জানিয়ে তিনি বলেন, এনবিআরের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড প্রেসার থাকে। সেটা চেয়ারম্যানের কাছে আসে। পরে মাঠ পর্যায়ের অফিসারের কাছে যায়। আমাদের উন্নয়ন ভিশন কী এবং সেটার অর্থায়ন কোথা থেকে আসবে। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট দেবো। তারপর কোনো প্রশ্ন এলে আরেকটি রিপোর্ট দেবো। এরই মধ্যে আমরা রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব প্রশাসন সংস্কারের ওপরে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট দিয়েছি।

তিনি বলেন, রাজস্ব প্রশাসনে সেপারেশন অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রস্তাব করেছি। দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে আমরা ডিজিটাইজেশনকে বেছে নিয়েছি। এখানেও যদি আমরা ভালোভাবে প্রস্তাব দিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করে দিতে পারি তাহলে ৭০ শতাংশ সংস্কার হয়ে যাবে। বাকিটা হচ্ছে কোথায়, কীসে কী ট্যাক্স নেওয়া হয়। সেটা তো চলমান প্রক্রিয়া, প্রতিবছর বাজেটে হয়। অর্থ বিলে আসে। এ বিষয়েও আমরা সংস্কার প্রস্তাব দেবো। এনবিআরের আইনগুলো নিয়েও আমরা প্রস্তাব দেবো।

রাজস্ব বোর্ডকে শক্তিশালী করতে হলে এটিকে স্বাধীন করতে হবে বলে জানান সাবেক এই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এনবিআরকে এমপাওয়ার করতে হবে। তাকে সেপারেট করতে হবে। তাকে স্বাধীন করতে হবে। তাকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। এই দায়িত্ব এনবিআর পালন করবে। সে জন্য ১৯৭২ সালের এনবিআরের যে আইনটা আছে সেটিকে সংস্কার করবো। অর্থনৈতিক সম্পদ বিভাগের (ইআরডি) নাম পালটে ‘রেভিনিউ ডিভিশন’ করা হবে। পলিসিগুলো সেখানেই যাবে। সেখানে জ্ঞানী লোক থাকতে হবে। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাকে বলেছি। 

আগামী ১৫ দিন বা এক মাস পর সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের কার্যক্রম বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন সাবেক এই এনবিআর চেয়ারম্যান। 

তিনি বলেন, সম্প্রতি যে প্রায় শতাধিক পণ্যে ভ্যাট বাড়ানো হলো তা আগেই ব্যাখ্যা করা উচিত ছিল। প্রতিটি জিনিস আলোচনা করে মানুষকে জানালে, জনগণের সঙ্গে এনবিআরের দূরত্ব কমবে। 

এনবিআরকে বড় লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, অর্থনীতি বড় হচ্ছে। কিন্তু আমরা তার সুবিধা নিতে পারছি না বা আমরা কর দিচ্ছি না। সেজন্য লক্ষ্যমাত্রাটা পুশ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। সবার মধ্যে সমন্বিত যোগাযোগ প্রয়োজন। সামাজিক সচেতনতা না বাড়লে কর আদায় বাড়বে না। আপনার পাশের লোক কর দেয় না। তার করের চাপ আপনার ওপর পড়ে। আপনি কিছু বলবেন না, হা হুতাশ করবেন, এটা তো হয় না। 





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত