বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় আবারও মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যাপক সাইদুর রহমান। অসাধারণ গবেষণা কর্মের জন্য ২০২৫ সালের ‘এডি সায়েন্টিফিক’ র্যাঙ্কিংয়ে (বিষয় ভিত্তিক) ৭-এ রয়েছেন ময়মনসিংহের এ কৃতী সন্তান।
সম্প্রতি ‘এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স’ বিশ্বের ৩৩ হাজার ৫১১ বিজ্ঞানী এইচ-ইনডেক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি/মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং র্যাঙ্কিং ২০২৫ প্রকাশ করে। তালিকায় ৭-এ থাকলেও এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন অধ্যাপক সাইদুর।
এর আগে ২০২৪ সালের স্কলারজিপিএস অনুসারে সানওয়ে ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সাইদুর রহমান সাসটেনেবল এনার্জিবিষয়ক গবেষণা ক্ষেত্রে বিশ্বের বিজ্ঞানীর তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। একই বছরে স্ট্যানফোর্ড/এলসেভিয়ায়ের বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় মালয়েশিয়ার বিজ্ঞানীদের মধ্যেও এনার্জিবিষয়ক গবেষণা ক্ষেত্রে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি।
জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বিশ্বের প্রথমসারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞানবিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার’-এর সমন্বিত জরিপে এ তালিকা প্রকাশ করে। বিজ্ঞানীদের প্রকাশনা, এইচ-ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচক বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুতি করা হয়।
গুগল স্কলারের বিশ্লেষণ অনুসারে তার এইচ-ইনডেক্স ১৩৯ এবং ৭৬ হাজারেরও বেশি উদ্ধৃতি (citation) দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলার কৃতী সন্তান সাইদুর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের একজন সাবেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ার সানওয়ে ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন।
সাইদুর রহমান ২০২৪ সালে ‘এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স’-এর প্রকাশিত তালিকায় মালয়েশিয়ার বিজ্ঞানীদের মধ্যে ছিলেন ১ নম্বরে। তিনি রিসার্চ ডটকম এবং স্কলার জিপিএস গবেষণা বিশ্লেষণেও এক নম্বর গবেষক হিসাবে তালিকাভুক্ত আছেন।
এদিকে তার অসামান্য গবেষণা দক্ষতার জন্য, সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে Distinguished Research Professor হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে যা শুধুমাত্র শীর্ষ গবেষকদের মধ্যে দেওয়া একটি মর্যাদাপূর্ণ পদ।
জানা গেছে, অধ্যাপক সাইদুর মালয়েশিয়া (Mxene) ভিত্তিক ন্যানোম্যাটেরিয়াল গবেষণায় ১ নম্বরে আছেন স্কোপাস ডেটা বিশ্লেষণে। ওয়েব অব সাইন্স ন্যানোফ্লুয়েড গবেষণায় তিনি বিশ্বের গবেষকদের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন।
মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও প্রবাসীরা বলছেন, অধ্যাপক সাইদুর বিদেশের মাটিতে নিজগুণে দেশকে পরিচিতি করছেন। তিনি আমাদের গর্ব।
তরুণ গবেষকদের অনুপ্রাণিত করতে সাইদুর তার গবেষণার অভিজ্ঞতা বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শেয়ার করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছেন। তার গবেষণার টিপস বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শেয়ার করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (লিঙ্কডইন এবং ফেসবুক) অবদান রাখছেন। পাশাপাশি অনলাইন সেমিনার, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে তার গবেষণার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে চলেছেন। এ ছাড়া অসহায় ও দরিদ্র তরুণ প্রতিভাবানদের মাঝে নিয়মিত সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
অধ্যাপক সাইদুর রহমান সানওয়ে ইউনিভার্সিটিতে অত্যাধুনিক সরঞ্জামসহ চিত্তাকর্ষক ল্যাব তৈরি করেছেন। এই ল্যাবটি অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়াল ডেভেলপমেন্ট এবং এনার্জি, তাপ ট্রান্সফার, সৌর এনার্জি, এনার্জি স্টোরেজ, ক্লিন ওয়াটার ডেভেলপমেন্টে ব্যবহার করা হয়।
অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমানকে ২০২২ সালে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার সিআইপি সম্মাননাও প্রদান করেন।