পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআিইডি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাশিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা ফাবিহা তামান্না জেরিন। ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদারও তিনি। যে প্রতিষ্ঠান চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশিদের রাশিয়া পাচার করতো। এরপর ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামাতে প্রস্তুত করা হতো তাদের। আর জেরিনের ভাই তুহিন রাশিয়ায় বসে তাদের যুদ্ধে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাতেন।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সিআইডি বলছে, ফাবিহা জেরিন তামান্না ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদার। এই চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট কারখানা, ক্লিনার অথবা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে সৌদি আরব ওমরাহ ভিসায় পাঠান। সেখানে তাদের ওমরাহ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেয়।
সুলতান ১০ জনকেই দাস হিসেবে রাশিয়ান সোলজারদের কাছে হস্তান্তর করে। সেখানে তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না দিয়ে, সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাধ্য করে। তারা অনিচ্ছা প্রকাশ করলে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়। খাবার বন্ধ করে তাদের মানসিক শক্তি ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে তারা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন।
যুদ্ধে নাটোরের সিংড়া থানার হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং আমিনুল নামে ঢাকার কেরানীগঞ্জের একজন বাসিন্দা গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো. আকরাম হোসেন (২৪) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরবর্তীতের তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। অন্য ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন।
আকরামের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী (ঝুমু আক্তার) বনানী থানায় মামলা করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি তদন্ত শুরু করে। ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেরিন ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। এসব নিরীহ মানুষদের যুদ্ধে যেতে প্রেরণা যোগাতেন জেরিনের ভাই তুহিন। যিনি বর্তমানে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। সিআইডি জানতে পেরেছে, একইভাবে ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। রাশিয়া নিয়ে যুদ্ধে যেতে বাধ্য করার বিষয়ে জানাজানি হওয়ায় তারা রাশিয়া যেতে অস্বীকার করেছেন। ফলে সবার পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হয়। তাই তারা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছেন না এবং দেশেও ফিরতে পারছেন না।
সিআইডি আরও জানায়, ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে মানবপাচারের এই নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি জোর তদন্ত এবং গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এ ইউ/