...
Homeপ্রবাসের খবরপ্রক্সি ভোটে বড় সংশয় ‘বিশ্বাস’

প্রক্সি ভোটে বড় সংশয় ‘বিশ্বাস’


বিশ্বের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন এক কোটি ৩৬ লাখের মতো বাংলাদেশি ভোটার। এই প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে প্রক্সি ভোটের কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাংলাদেশের ভোটারদের জন্য যা একেবারে নতুন। তবে এ পদ্ধতিতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারা নিয়ে সংশয়ে প্রবাসীরা। একই মত সংশ্লিষ্টদেরও।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনটি বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে এগোচ্ছে ইসি। সেগুলো হলো সময়ের মধ্যে সম্পাদনযোগ্য একটি পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি, অনলাইন পদ্ধতি এবং প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতি। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হলে প্রক্সি ভোট পদ্ধতিটি মোটামুটি পরিসরে আর বাকি দুটি পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে মনে করছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহর কথায়ও মিলছে এমন আভাস।

তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রক্সি ভোটের মাধ্যমে প্রবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ না-ও হতে পারে। যিনি প্রক্সি দেবেন তাকে বলা হলো একজনকে ভোট দিতে, তিনি হয়তো প্রবাসীর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে অন্যজনকে দিলেন। এ জটিলতা কাটাতে প্রক্সি ভোটার কাকে ভোট দেবেন ই-মেইলে ও ফোনে যেন সেই তথ্য (খুদে বার্তা) চলে যায়, এমন পদ্ধতি রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদেরই একজন ইমতিয়াজ কাসেম। যিনি দীর্ঘদিন বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়।

 

যা বলছেন প্রবাসীরা

প্রক্সি ভোটকে স্বাগত জানিয়ে ইমতিয়াজ কাসেম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রক্সি ভোট পদ্ধতি সরকারের অনেক ভালো একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন। সব সময় বলা হয়, কিন্তু প্রবাসীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। প্রক্সি ভোটে সেই প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে।’

যিনি প্রক্সি দেবেন তাকে বললাম এক প্রতীকে ভোট দিতে, তিনি হয়তো সেই প্রতীকে ভোট না দিয়ে তার নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলেন। এটা যেন না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।- যুক্তরাষ্ট্র ইমতিয়াজ কাসেম

তবে প্রক্সি ভোটের ক্ষেত্রে এই প্রবাসীরও একই সন্দেহ। বলেন, যিনি প্রক্সি দেবেন তাকে বললাম এক প্রতীকে ভোট দিতে, তিনি হয়তো সেই প্রতীকে ভোট না দিয়ে তার নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলেন। এটা যেন না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রক্সি দেওয়া ব্যক্তি প্রবাসীর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন কি না, সেটা নিশ্চিত করতে একটি স্বয়ংক্রিয় ই-মেইল বা খুদে বার্তার পদ্ধতি রাখা যেতে পারে।

কানাডা প্রবাসী আহমেদ সুলতান জাগো নিউজকে বলেন, প্রক্সি ভোটিং সিস্টেম ভালো উদ্যোগ। কোনো উদ্যোগই খারাপ নয়। তবে দেখতে হবে এটি কীভাবে ব্যবহার হয়। এর মাধ্যমে প্রবাসীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন যেন হয়। আমি যাকে ভোট দিতে চাই তাকে যেন ভোটটা দিতে পারি, সেটা যেন নিশ্চিত করা হয়।

জানতে চাইলে আরেক কানাডা প্রবাসী নুরুজ্জামান মামুন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারিনি। বিগত সরকার আমাদের ভোট থেকে বঞ্চিত করেছে। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রক্সি ভোট ভালো উদ্যোগ। প্রযুক্তির অনেক সময় অপব্যবহারও হয়। আমার ভোট যেন সঠিক জায়গায় পড়ে সরকারকে এটি নিশ্চিত করতে হবে।যে প্রক্রিয়ায় প্রক্সি ভোট

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রক্সি ভোট পদ্ধতি চালুর জন্য প্রথমে একটি অ্যাপ ডেভেলপ করা হবে। যদিও অ্যাপ তৈরির কাজ এখনো শুরু হয়নি। এ পদ্ধতিতে প্রবাসী যারা ভোটে দিতে চান, তারা প্রথমে একটি অ্যাপে ফেস রিকগনিশনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করবেন। প্রি-রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভোটের আগ্রহ প্রকাশ করবেন। ওই রেজিস্ট্রেশনের সময় তার পক্ষে যিনি প্রক্সি ভোট দেবেন, ওই ব্যক্তির এনআইডি এবং বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।

কমিশন বলছে, যিনি প্রক্সি ভোট দেবেন, তিনি নিজের ভোটও দিতে পারবেন। প্রক্সি মূলত ওয়ান কাইন্ড অব পাওয়ার অব অ্যাটর্নি। প্রবাসীরা বিদেশে বসে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এবং নিজের পক্ষে একজনকে (নিজ নির্বাচনী এলাকার) প্রক্সি ভোটার হিসেবে নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রক্সি ভোটারের এনআইডি ও ফোন নম্বর দিতে হবে।

প্রধান সংশয় ‘বিশ্বাস’

প্রক্সি ভোটের প্রধান সংশয় বিশ্বাস। যাকে প্রক্সি নির্বাচন করা হলো তিনি হয়তো প্রবাসীর ইচ্ছা অনুযায়ী ভোট না দিয়ে তার ইচ্ছামতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দিতে পারেন।

যিনি প্রক্সি ভোট দেবেন, তিনি নিজের ভোটও দিতে পারবেন। প্রক্সি মূলত ওয়ান কাইন্ড অব পাওয়ার অব অ্যাটর্নি। প্রবাসীরা বিদেশে বসে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এবং নিজের পক্ষে একজনকে (নিজ নির্বাচনী এলাকার) প্রক্সি ভোটার হিসেবে নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রক্সি ভোটারের এনআইডি ও ফোন নম্বর দিতে হবে।- নির্বাচন কমিশন

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রক্সি ভোটের বড় সংশয় ট্রাস্ট (বিশ্বাস)। ধরুন, সৌদি আরবের একজন প্রবাসী ভোটার কোনো লোককে প্রক্সি নির্বাচন করলেন। সেই ব্যক্তি হয়তো নিজের পছন্দের মতো লোককে ভোট দিলেন। এক্ষেত্রে বিশ্বস্ত প্রক্সি নিয়োগ করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। প্রক্সি ভোটার অন্য প্রতীকে ভোট দিলে প্রবাসীকে সেটা মেনে নিতে হবে। কারণ, ব্যালট পেপারের ছবিও তোলা যাবে না। এতে প্রবাসী ভোটারের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হবে।’

প্রক্সি ভোটারের যা থাকা লাগবে

নির্বাচন কমিশন জানায়, প্রক্সি ভোট দিতে হলে ভোটার তালিকায় নাম থাকতে হবে। এনআইডি নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। নিবন্ধনের পর নির্ধারিত অ্যাপের মাধ্যমে সব করবে, কোনো দূতাবাসেরও সহযোগিতা লাগবে না। সরাসরি ভোটার টু ইলেকশন কমিশন। বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার সময় জানিয়ে দেবে, কারা কারা প্রক্সি ভোট দেবেন। তাদের জন্য আলাদা ভোটার তালিকার প্রয়োজন হবে না।

প্রক্সি ভোটে বড় সংশয় ‘বিশ্বাস’

প্রক্সি ভোটের এ প্রক্রিয়া আগামী ৬-৭ মাসে সম্পন্ন করা সম্ভব। ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে প্রক্সি ভোটারদের রেজিস্ট্রেশনটা করে ফেলবে কমিশন। ভোটের দিন ভোট দেবেন প্রবাসীরা। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার উপযোগী হিসেবে সব বিবেচনায় প্রক্সি ভোট ভালো পদ্ধতি বলে দাবি কমিশনের।

তৈরি হবে অ্যাপ

এ প্রসঙ্গে ইসির এনআইডি উইং পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী অধিশাখা) মো. আব্দুল মমিন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে একটা অ্যাপ তৈরি করবো। অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য আবেদন করবেন। অ্যাপে ফেস ভেরিফিকেশন লাগবে। প্রবাসী ভোটার যাকে ভোট দেওয়ার জন্য মনোনীত করবেন তারও এনআইডি নম্বর লাগবে।’

এই অ্যাপটি কবে নাগাদ ডেভেলপ হতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় লাগবে। এখনো অ্যাপ ডেভেলপের কাজ শুরু হয়নি।

প্রক্সি ভোটের বড় সংশয় ট্রাস্ট (বিশ্বাস)। ধরুন, সৌদি আরবের একজন প্রবাসী ভোটার কোনো লোককে প্রক্সি নির্বাচন করলেন। সেই ব্যক্তি হয়তো নিজের পছন্দের মতো লোককে ভোট দিলেন। এক্ষেত্রে বিশ্বস্ত প্রক্সি নিয়োগ করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।- নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম

ডিসেম্বরে ভোট হলে অ্যাপের কাজ কবে শুরু হবে? এ প্রসঙ্গে আব্দুল মমিন সরকার বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের শিডিউল ডিক্লারেশনের (তফসিল ঘোষণার) অন্তত তিন মাস আগে এটা করতে হবে। কারণ কতজন প্রবাসী ভোটার প্রক্সি ভোটের জন্য আবেদন করলেন এটি প্রিসাইডিং অফিসারদের অবগত করতে হবে। তার মানে আমাদেরও কিছু কাজ থাকবে। তবে কমিশন সিদ্ধান্ত নিলে এ কাজ দ্রুতই করতে পারবো।’

হবে বিশেষ কর্মশালা

ইসি জানিয়েছে, প্রক্সি ভোটের জন্য আগামী ৮ বা ৯ এপ্রিলের মধ্যে একটা কর্মশালা হবে। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমআইএসটিকে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরেও যে কোনো প্রতিষ্ঠান এ কাজে সহায়তা করতে পারে। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের বিশেষজ্ঞদেরও আমন্ত্রণ জানাবে ইসি। এছাড়া একটি সিস্টেম আর্কিটেকচার ডেভেলপের জন্য ইসির সাবেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা এবং এনজিওকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে।

পোস্টাল ব্যালট ভোটিং সিস্টেম ‘অচল’

এদিকে, পোস্টাল ব্যালট ভোটিং সিস্টেমকে ‘অচল ভোটিং ব্যবস্থা’ দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার জন্য পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি কার্যকর নয় বলেও মনে করছে কমিশন। এ কারণে প্রক্সি ভোট পদ্ধতির সুপারিশ করেছেন ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

আমরা রাজনৈতিক দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। যদি দেখি এটি (প্রক্সি পদ্ধতি) গ্রহণযোগ্য হচ্ছে তখন আমরা সিন্টেম ডেভেলপমেন্টে যাবো।- ইসি সানাউল্লাহ

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের প্রত্যাশা যদি সত্যিকার অর্থেই পূরণ করতে চাই তবে প্রক্সি ভোটিংয়ে যেতে হবে। বর্তমানে কয়েকটি দেশে বিভিন্ন পরিসরে এ পদ্ধতি চালু প্রচলিত আছে। যার মধ্যে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। প্রতিবেশী দেশ ভারতে শুধু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রক্সি ভোটিংয়ের প্রচলন আছে।’

প্রক্সি ভোটে বড় সংশয় ‘বিশ্বাস’

তিনি বলেন, ‘প্রক্সি ভোটিংয়ের সুবিধা হলো, এটি একটি প্রচলিত পদ্ধতি। আমরা পাওয়ার অব অ্যার্টনির মাধ্যমে তো জমিজমাও কেনাবেচা করি। ভোটও তো অধিকার। সেটিকেও আমরা যদি এভাবে (প্রক্সির মাধ্যমে) বাস্তবায়ন করতে পারি তবে একটা ফলাফল আসবে। বাংলাদেশেও প্রতিবন্ধীদের ভোট অন্যজন দিতে পারেন, যদিও এটিকে প্রক্সি ভোটের সঙ্গে মেলানো যাবে না। তবে আমরা বলছি একটি স্কোপ (সুযোগ) আছে। এটি খুব কম সময়ে রিয়েল টাইমে করা সম্ভব।’

‘আমরা রাজনৈতিক দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। যদি দেখি এটি (প্রক্সি পদ্ধতি) গ্রহণযোগ্য হচ্ছে তখন আমরা সিন্টেম ডেভেলপমেন্টে যাবো। পরে টেস্টিং ও অডিটিংয়ে যেতে হবে। এরপর আমাদের আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। ফাইনালি ট্রায়াল রানে যাবো। আমরা আশা করছি, যদিও এটি কন্ডিশনাল ব্যাপার, সব যদি করতে পারি প্রক্সি ভোটিংটা মোটামুটি পরিসরে আর বাকিগুলো ট্রায়াল বেসিসে বাস্তবায়ন করতে পারবো বলে আমাদের ধারণা।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.