সবার জন্য করশিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাই শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যপুস্তকে করশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে রিটায়ার্ড ট্যাক্স অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে প্রাক্-বাজেট আলোচনায় এ তথ্য জানান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কর নিয়ে জানাশোনা না থাকলে করদাতারা সচেতন হন না। আমরা শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে কর নিয়ে পড়াশোনা চালু করতে চাই। আমরা চাই, এটা পাঠ্যপুস্তকে আসুক। কোমলমতি শিশুরা ছোটবেলা থেকেই জানুক কর কী? কর দেশের কী কাজে লাগে? আরেকটু অ্যাডভান্স লেভেলে ট্যাক্সের অঙ্ক থাকবে। এগুলো আমরা করতে চাই। আমরা জনসচেতনতা তৈরি করতে চাই।’
আলোচনায় এনজিও, শিল্প ও বাণিজ্য সংগঠন, ফাউন্ডেশন, সমবায় সমিতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কোম্পানির সংজ্ঞা থেকে বিলুপ্ত করে কর অব্যাহতির প্রস্তাব করেছে রিটায়ার্ড ট্যাক্স অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। এ ছাড়া কৃষিপণ্য সরবরাহে উৎসে কর প্রত্যাহার, কর অব্যাহতি, অডিট ধারায় পরিবর্তন, লটারি থেকে আয়ে কর কর্তন ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করা, রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তিস্বীকারপত্রের বিধান করা, দানপ্রাপ্তিকে মোট আয় পরিগণনা থেকে বাদ রাখাসহ আয়কর আইনের অনেক ধারায় পরিবর্তন ও সংশোধন চেয়েছে সংগঠনটি।
বর্তমানে ১ কোটি ৪৫ লাখ টিআইএনধারীর মধ্যে মাত্র ৪৫ লাখ রিটার্ন দাখিল করেন বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘কর আদায়ের ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ত্রুটি রয়েছে। আগে আমরা নীতির ওপর বেশি নির্ভর করতাম, কিন্তু এনবিআরের কার্যক্রমের ওপর তেমন গুরুত্ব দিইনি। যাঁরা রিটার্ন দাখিল করেছেন, তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশই করযোগ্য আয়সীমার বাইরে। ১৫ লাখ অনলাইন রিটার্নের মধ্যে ১০ লাখই শূন্য রিটার্ন। ২০১৪ সালে টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখের কম, যা বর্তমানে ১ কোটি ১৪ লাখ ছাড়িয়েছে। তার মানে ১০ বছরে এক কোটি টিআইএনধারী বেড়েছে। রিটার্ন না দিলে কোনো সমস্যা হয় না।’
আবদুর রহমান খান আরও বলেন, ‘কোনো জবাবদিহি নেই, কোনো নোটিশ নেই, কোনো অ্যাসেসমেন্ট নেই। আমি কমিশনারদের বলি, আপনারা নোটিশ করছেন না কেন? আমার তো এখন উল্টো জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে, যাঁরা রিটার্ন দেন, তাঁরা কেন দেন? রিটার্ন না দিলে যেহেতু কোনো অসুবিধা নেই, রিটার্ন দেন ৪৫ লাখ, আর দেন না ৯০ লাখ মানুষ।’
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ‘আগামী জুলাই থেকে শতভাগ অনলাইন রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হবে। আমরা কর ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তরের দিকে এগোচ্ছি। আগামী ১ জুলাই থেকে পুরোপুরি অনলাইন রিটার্ন ব্যবস্থা চালু করা হবে।’
এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান বাড়িভাড়ার আয় নির্ধারণ ও সংশ্লিষ্ট বিধান পুনর্গঠনের প্রস্তাব দেন। সাবেক সদস্য অপূর্ব কান্তি দাস ন্যূনতম কর নির্ধারণ পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, ঢাকায় চাকরি করলেও কেউ অন্য জেলায় থাকেন, ফলে এলাকাভিত্তিক করহার সমস্যার সৃষ্টি করে। এটি নির্দিষ্ট একটি নির্ধারিত হারের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা উচিত।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান একমত পোষণ করে বলেন, ‘ঢাকায় যাঁর আয় বেশি, তাঁর খরচ বেশি। এই করহার উল্টো হওয়া উচিত। মফস্বলে যাঁরা থাকেন, তাঁদের খরচ কম। সিঙ্গেল রেট নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’