সন্তানকে কোলে নিয়ে বসা অবস্থায় চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে এক নারীকে পেছন দিক থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে— এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছড়ানো হয়। ভিডিওতে এক শিশুসহ এক নারীকে টিনের চালের ঘরে বসে থাকতে দেখা যায়। হঠাৎ করে বিকট আওয়াজ ও চিৎকারে ভিডিওটিতে ঝাকুনি দেখতে পাওয়া যায়।
‘Abdul Malik’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বুধবার (২৭ মার্চ) দিবাগতরাত ২টা ২০ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘সন্তানকে কোলে নিয়ে বসে থাকা এই মায়ের কি অপরাধ ছিল খাগড়াছড়িতে এক নারীকে পিছন থেকে গু#লি করে হ#ত্যা।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ভিডিওটি ৫৭ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে ৩১১টি রিঅ্যাকশন পড়েছে, ২১টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৩৯৪ বার। উক্ত পোস্টে কেউ কেউ এই ঘটনাটিকে মিথ্যা উল্লেখ করে কমেন্ট করেছেন।
আবার অনেকে সত্য লিখেও মন্তব্য করেছেন। Nasir Miah নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়, ‘হে আল্লাহ আমরা এ কোন দেশে বাস করি এমন দৃশ্য দেখতে হবে।’ (বানান অপরিবর্তিত) Pial Majumder Rubel লিখেছে, মর্মান্তিক, ‘আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি জনজীবন হুমকিতে।’ (বানান অপরিবর্তিত)
চট্টগ্রাম ছাত্রলীগ, Omar Farooq ও MD Emon Akon নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি একই ক্যাপশনে পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই:
ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে Shanti Baglary নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পাওয়া যায়। এটি গত ২৪ মার্চ প্রকাশিত হয়। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে থাকা নারী, মুখমণ্ডল, পোশাক, তাঁর কোলে থাকা শিশু, শিশুর চেহারা ও পোশাক এসবের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশনে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। তবে ভিডিওটির শেষের দিকে ওই নারীর চেহারা দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে তাঁকে হাসিমুখ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
Shanti Baglary নামের ইনস্টাগ্রাম অ্যকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি একজন ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। অ্যাকাউন্টটির অ্যাবাউট অপশনে লেখা আছে, এটি ভারত থেকে পরিচালিত। তাছাড়া অ্যাকাউন্টটির বায়ো সেকশনে লেখা আছে, তিনি একজন ভ্লগার এবং কমেডিয়ান। অ্যাকাউন্টের বেশিরভাগ ভিডিও বিনোদনধর্মী ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তৈরি।
পাশাপাশি, এই অ্যাকাউন্টের ভিডিওতে থাকা নারী ও শিশুকে ২৪ মার্চের পরবর্তী সময়ে একাধিক ভিডিওতে (১, ২, ৩) দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ভাইরাল ভিডিওর নারী মারা যাননি।
Shanti Baglary নামের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটিতে তাঁদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও ইউটিউব চ্যানেলের লিংক যুক্ত করা রয়েছে। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও ইউটিউবেও উল্লেখ করা এটি বিনোদনধর্মী ক্যাটাগরির ও ভারত থেকে পরিচালিত। এসব প্লাটফর্মেও প্রায় একই জাতীয় ভিডিও প্রকাশ হতে দেখা যায়।
Shanti Baglary নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৩ মার্চ তারিখে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি প্রকাশিত হতে দেখা যায়।
অডিও যাচাই
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি একই ভিডিওর কিনা তা জানার চেষ্টা করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। Shanti Baglary নামের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে একই অডিও শুনতে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওর সূত্রে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর মূল অডিওর চ্যানেলটি পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, এই অডিও সংযুক্ত করে আরও অন্তত ১২ হাজার ৭০০ জন ভিন্ন ব্যক্তি আলাদা ভিডিও তৈরি করেছেন। তার মানে এই অডিও ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর নয়।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গায় গত ১৯ মার্চ সন্ত্রাসীদের গুলিতে আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সুবি ত্রিপুরা (৩৫) নামে এক সদস্য নিহত হয়। এ ঘটনায় সুবি ত্রিপুরার ছোট বোন তারাবতী ত্রিপুরা (২০) আহত হন।
সুতরাং, সন্তান কোলে বসা অবস্থায় চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে এক নারীকে পেছন দিক থেকে গুলি করে হত্যা করার দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি শান্তি বাগলারি নামে এক ভারতীয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের অভিনয়ের ভিডিও।