পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির পথ সহজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রূপালী হক চৌধুরী।
আজ রোববার রাজধানীর পল্টনে পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টক অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান ব্যবসায় পরিস্থিতি তুলে ধরে রূপালী হক চৌধুরী এসব কথা বলেন। সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া।
রূপালী হক চৌধুরী বলেন, দেশে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে, সেগুলো এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির অভাব রয়েছে। এ জন্য দেশি-বিদেশি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার পথ বা বিনিয়োগ করার পথ আকর্ষণীয় হতে হবে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির চেয়ে তালিকাভুক্ত না হওয়া কোম্পানিগুলো কোম্পানি আইনের মারপ্যাঁচে বেশি সুবিধা লাভ করে বলে মনে করেন বার্জার পেইন্টসের এমডি। তিনি বলেন, ‘আমাদের আগে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির মধ্যে করপোরেট কর ব্যবধান ছিল ১৫ শতাংশ। এখন তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—উভয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানি আইনটা পর্যালোচনা করা উচিত।’
রূপালী চৌধুরী যোগ করেন, ‘আমি শুধু করের বিষয়টা বলছি না। আমাদের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হবে। তাহলে সে (যেকোনো কোম্পানি) তালিকাভুক্ত হলে লাভবান ও সুবিধা পাবে। সে জন্য তখন সে (যেকোনো কোম্পানি) তালিকাভুক্ত হবে।’
পুঁজিবাজারে সুবিধা পেলেই ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে বলে মনে করেন বার্জার পেইন্টসের এমডি রূপালী হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সুবিধা না পেলে কেন কোম্পানিগুলো আইপিওতে আসবে? ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে। কারণ, ব্যাংকে সুদের হার বেশি হলেও ঋণ নেওয়াটা সহজ।’
এই মুহূর্তে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বন্দরের চার্জ ও শুল্ক বাড়ানো ঠিক হবে না জানিয়ে বিএপিএলসি সভাপতি রূপালী চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য কোনো ধরনের মূল্যস্ফীতির চাপ নিতে পারবে না। তাই কোনো ধরনের বন্দরের চার্জ বা শুল্ক বাড়ানো ঠিক হবে না।
কয়েক বছরে জিডিপি-বিনিয়োগ হার কমছে উল্লেখ করে রূপালী হক চৌধুরী বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। বিশেষ করে এসএমইতে আমরা পেছনে পড়ে গেছি। যারা বড় তারা কিন্তু মোটামুটি কাটিয়ে উঠে ভালো করেই যাচ্ছে। এসএমইতে ৩০ শতাংশ হলো ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে যুক্ত। তার তহবিলের যথেষ্ট প্রয়োজন। সে কিন্তু বড় পরিকল্পনা নিয়ে বসে আছে। ব্যাংকিং খাত এসএমইতে বেশি আগ্রহী না। এরপর প্রভাব ফেলেছে ইউক্রেন যুদ্ধ ও দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।’
বিনিয়োগ আকর্ষণের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের দরকার আর্থিক নীতি। এর মধ্যে একটা হলো রাজস্ব সম্পর্কিত। পাশাপাশি অবকাঠামোর উন্নয়ন। অন্যান্য দেশের সঙ্গে যদি আমরা মেলাই, তাহলে দেখব, তাদের লিড টাইম অনেক কম। কিন্তু, আমাদের এখানে রাস্তাঘাটের যে অবস্থা, তা বলার বাইরে।
রূপালী চৌধুরী যোগ করেন, আমাদের সরবরাহ লাইন অবশ্যই বিশ্বমানের হতে হবে। বিনিয়োগকারী যে চায়, দেশের মধ্যে ভালো অবকাঠামো অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায়। আমাদের যে পরিমাণ গাড়ি বাড়ছে, সে অনুযায়ী রাস্তা বাড়াচ্ছি না। তাই অবকাঠামোতে আমাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, চলতি বছরের শুরুতেই বলছে সম্পূরক শুল্ক, আবার বলছে ভ্যাট আরোপের বিষয়। এসব অনেক ব্যবসার বটমলাইনে হিট করছে। তারা সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে রঙের ওপর। তারা বলেছে, সেটা নাকি বিলাসী পণ্য। কিন্তু, রং তো এখন বিলাসী পণ্য নয়। এটা অবকাঠামোকে নিরাপদ করে। ফলে এটা হলো অত্যাবশ্যকীয়।
নীতিগুলো সমঝোতামূলক হতে হবে উল্লেখ করে বিএপিএলসি সভাপতি রূপালী বলেন, এইচএস কোড নিয়ে অনেক গন্ডগোল। যার কারণে প্রতিটা কোম্পানি ভুগছে। এসব কারণে দেখা যাবে ভবিষ্যতে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় টিকতে পারব না। ফলে বেঞ্চমার্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক নীতি, অবকাঠামো ও ক্রেতা সূচক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মাথাপিছু আয় সেটাও দেখতে হবে।
স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরেও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জনবল চেয়েছে, এটা কীভাবে দেখছেন—এমন এক প্রশ্নের জবাবে রূপালী হক চৌধুরী বলেন, বিএসইসি আমাদের সবার অভিভাবক। তারা যেহেতু সংস্কার করছেন, ওনারা যদি কোনো কিছু করতে চান, আমার মনে হয় ওনাদের বক্তব্যটাই নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারেও এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা অনভিপ্রেত। এখন তাঁরা যদি এটাকে ঢেলে সাজাতে চান, যার ফলে ভালো কিছু দিতে পারবেন, এটার কারণ তাঁরাই বলতে পারবেন। আমরা এটাই বলি যে, সংস্কার করে তাঁরা যদি ভালো কিছু আনতে পারেন, আমরা তাতে স্বাগত জানাই।