ত্রুটিপূর্ণ বোলিং অ্যাকশনের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও দেশের বাইরে কোনো ধরনের ক্রিকেটেই বল করার অনুমতি ছিল না বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। দুইবার পরীক্ষা দিয়ে করেছিলেন ‘ফেল।’
সময় নিয়ে, বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কাজ করে সাকিব ইংল্যান্ডে দিয়েছিলেন তৃতীয় পরীক্ষা। তাতেই মিলল সুখবর। বুধবার গভীর রাতে সাকিব মুঠোফোন বার্তায় নিশ্চিত করেছেন, সকল ফরম্যাটে বোলিং করার অনুমতি মিলেছে তার।
গত সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে সারের হয়ে এক ম্যাচ খেলেছিলেন সাকিব। সমারসেটের মাঠ টন্টনে বল হাতে চমৎকার পারফরম্যান্স করেন। ২০১০-১১ মৌসুমের পর কাউন্টিতে ফেরার ম্যাচে ৯ উইকেট নেন। কিন্তু প্রতিযোগিতা শেষে সাকিব শুনতে পান দুঃসংবাদ। সে ম্যাচে সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন মাঠের আম্পায়াররা।
এরপর ইংল্যান্ডের লাউবরো ইউনিভার্সিটিতে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন। কিন্তু প্রথম দফায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। চেন্নাইতে দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা দিয়েও মেলেনি ফল পাল্টায়নি।
প্রায় ২০ বছরের ক্যারিয়ারে সাকিব প্রথমবার এমন কিছুর সম্মুখীন হন। জানিয়ে রাখা ভালো, ম্যাচটিতে সাকিব দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬৩ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন। যা একেবারেই সাকিবের বোলিং পরিধির বাইরে। তার লম্বা বোলিংয়ে চাকিংয়ের জন্য কোনো ‘নো বল’ ডাকেননি আম্পায়াররা। কিন্তু দুই আম্পায়ার স্টিভ ও’শনেসি ও ডেভিড মিলন্স তাদের রিপোর্টে সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
গত বছরের ৪ নভেম্বর সাকিবের নিষেধাজ্ঞার খবর আসে। পরে ২ ডিসেম্বর বার্মিংহামের অদূরে লাউবরো ইউনিভার্সিটির মেডিকেল বিভাগে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন সাকিব। বিশেষজ্ঞদের সামনে মোট চার ওভার বোলিং করেছিলেন। প্রথম তিন ওভার নিজের নিয়মিত অ্যাকশনে করলেও শেষ ওভার করতে হয়েছিল জোরের ওপর। যেটার কারণে তার অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ উঠেছিল। ১০ ডিসেম্বর সেই শেষ ওভার বোলিংয়ের কারণেই সাকিবের বোলিং অ্যাকশন অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
২১ ডিসেম্বর সাকিব পুনরায় চেন্নাইতে ৪ ওভার হাত ঘুরান। এবারও সেই একই ফল। পরপর দুই বার আশানুরূপ ফল না পাওয়া সাকিব সময় নেন। তবে চেন্নাইয়ের পরীক্ষায় কিছুটা ‘টেকনিক্যাল এরর’ এর কথাও বলা হয়েছিল। এজন্য সেই ফল বিবেচনায় আনা নিয়ে কথাও উঠেছিল।
সাকিব ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে সময় নেন। এরপর ইংল্যান্ডে ফিরে কাজ শুরু করেন বোলিং অ্যাকশন নিয়ে। জানা গেছে, ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার গ্যারেথ বেটিকে নিয়ে সাকিব কাজ করেছিলেন।
সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এখন ঝুলছে অনিশ্চয়তার সুতোয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ও টেস্ট থেকে নিয়েছেন অবসর। ওয়ানডে ক্যারিয়ার ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু তাকে নেওয়া হয়নি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঢাকায় টেস্ট খেলে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণকে বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তাজনিত কারণে আসতে পারেননি। খেলতে পারেননি বিপিএলেও চিটাগং কিংসের হয়ে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও হয়নি দলবদল।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে তার দেশে ফেরা হয়নি। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লিগ সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন সাকিব।